যে রকম ছিল চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যচিত্র

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

২০২০ সালের প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে আলোচনায় ছিলো করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। চীনের উহানে ভাইরাসটি মোকাবেলায় বিশ্বের বাঘা বাঘা দেশগুলো বলা যায় এক প্রকার ব্যর্থ হয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতিতে তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস কত ভয়ঙ্কর হতে পারে। ২০১৯ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে চীনে, এছাড়া বছরের শুরুতে ইউরোপ-আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের ঘুরে গত মার্চের ৮ তারিখ দেশে প্রথমবারের মতো ইতালি প্রবাসী দুজনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরপর থেকে দেশজুড়ে করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লকডাউনের কবলে পুরো দেশ। অনেক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল সাধারণ রোগীদের সেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করে। এতে বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। যদিও করোনাভাইরাসের প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ।
করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এর ফলে মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরও কেটেছে ঘরে বসে। বন্ধ ছিল সব শপিংমল। অপরদিকে করোনার শুরু থেকে চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা কাছ থেকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করতে থাকেন। আবার এন-৯৫ মাস্ক নিয়ে দুর্নীতি এবং ভুয়া করোনাভাইরাসের রিপোর্ট তৈরির দায়ে উত্তরার মালিক সাহেদ করিম এবং হৃদরোগের চিকিৎসক ডা. সাবরিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব ঘটনা সাথে সাথে বাড়তে থাকে করোনার রোগীর সংখ্যা। করোনার চিকিৎসা দিতে বেসরকারি হাসপাতালের অনড় অবস্থানের কারণে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল এবং ফৌজদারহাট বিআইডিআইটি হাসপাতালে চাপ বাড়তে থাকে। দেখা দেয়, অঙিজেনের সংকট। অঙিজেনের অভাবে জেনারেল হাসপাতালে মারা যান শিল্পপতিও। এছাড়া অঙিজেন সিলিন্ডারের দামও হঠাৎ দ্বিগুণ হয়ে যায়। অনেক শ্বাসকষ্টের রোগীর অঙিজেনের অভাবে ছটফট করতে করতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অন্যদিকে চিকিৎসকরা ব্যক্তিগত চেম্বার বন্ধ থাকায় করোনায় সাধারণ রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। অনেকে রোগী বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে ভর্তি হতে না পেরে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান।
এছাড়া করোনা পরীক্ষার ল্যাবগুলোতে নমুনা জট লেগে যায়। অনেকেই মারা যাওয়ার পরে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। সব মিলিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কেমন নাজুক অবস্থা, সেটি করোনা এসে যেন বুঝিয়ে দিলো। তবে এক পর্যায়ে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় ব্যক্তি উদ্যোগে করোনা আইসোলেশন সেন্টার গড়ে উঠে। করোনা মোকাবেলায় প্রথম ব্যক্তি হিসেবে এগিয়ে আসেন ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। তিনি মাত্র ২১ দিনে ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তুলে করোনার চিকিৎসা শুরু করে। এছাড়া পরবর্তীতে চসিকের উদ্যোগে আইসোলেশন সেন্টার, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সংস্কৃতিকর্মী মো. সাজ্জাদ হোসেনের করোনা আইসোলেশন সেন্টার, মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের মুক্তি আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। সাউদার্ন মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. হোসেন আহম্মদ গড়ে তুলেন বন্দর ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার।
এছাড়া স্বেচ্ছায় শ্রম দিতে এগিয়ে আসা আল মানাহিল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আইসোলেশন সেন্টার এবং সিএমপি-বিদ্যানন্দের যৌথ উদ্যোগে আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এছাড়া হাটাহাজারীর ধলইয়ে ব্যারিস্টার বদরুল আলম চৌধুরীর উদ্যোগেও আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তোলা হয়। অপরদিকে করোনায় মৃতদের দাফন ও সৎকারে এগিয়ে আসে গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশ, আল মানাহিলসহ কয়েকটি সংগঠন। গাউছিয়া কমিটি কুণ্ডেশ্বরীর ওষুধালয়ের কর্ণধার বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহের সৎকারে অংশ নিয়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। অন্যদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন বাড়ানো হয়েছে সক্ষমতা। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ শয্যা স্থাপনের পাশপাশি যুক্ত হয়েছে সেন্ট্রাল অঙিজেন লাইন। এছাড়া বাড়ানো হয়েছে হাইফ্লো ন্যাজেল ক্যানুলা। করোনা চিকিৎসা সেবায় এক সময় যুক্ত হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং নগরীর ১২টি বড় বেসরকারি হাসপাতাল। এছাড়া হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল এবং রেলওয়ে হাসপাতালও করোনার চিকিৎসায় যুক্ত হয়। ফলে শয্যা সংকট কাটিয়ে উঠতে শুরু করে চট্টগ্রাম। এক সময় জীবন জীবিকার তাগিদে সরকার সাধারণ ছুটি বাতিল করে। বিশ্বজুড়ে এখন চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। কে জানে নতুন ২০২১ বছরও যে করোনা আমাদের ভুগাবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালোবাসায় পোষ মেনেছে বনের সজারু
পরবর্তী নিবন্ধপুরো শিক্ষাসূচি তছনছ