যেভাবে প্রভাব ফেলল মফস্বল

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

২০১০ থেকে ২০১৯-টানা দশ বছর চট্টগ্রাম বোর্ডে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার (এইচএসসি) ফলাফলে মফস্বলের তুলনায় এগিয়ে ছিল নগরের কলেজগুলো। পাসের গড় হার, জিপিএ-৫ প্রাপ্তি ও শতভাগ পাস; এই তিন ক্যাটাগরিতেই মফস্বলের কলেজগুলো পিছিয়ে ছিল নগরের তুলনায়। গতকাল রোববার প্রকাশিত ২০২১ সালের পরীক্ষার ফলাফলেও পূর্বের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। অর্থাৎ এবারো পিছিয়ে আছে মফস্বলের কলেজগুলো। অবশ্য ২০২০ সালে অটোপাসের কারণে পিছিয়ে থাকার ব্যর্থতা স্পর্শ করেনি মফস্বলের কলেজগুলোকে। কারণ সেবার পুরো বোর্ডেই পাসের হার ছিল শতভাগ।
তবে তিন ক্যাটাগরিতে ধারাবাহিক ব্যর্থতার মধ্যেও কিছুটা সাফল্য লুকিয়ে আছে মফস্বলের কলেজগুলোর। বিগত কয়েক বছরের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পর্যায়ক্রমে পাসের হার বাড়ছে মফস্বলের কলেজগুলোতে। ২০১৯ সালের তুলনায় এবার প্রায় ৩২ দশমিক ৬১ শতাংশ পাসের হার বেড়েছে মফস্বলে। একইভাবে শতভাগ পাস করা কলেজের তালিকায়ও মফস্বলের কলেজের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৯ সালে শতভাগ পাস করা কলেজের তালিকায় মাত্র একটি ছিল মফস্বলের, যা এবার চারটিতে উন্নীত হয়েছে। তবে এ পরিসংখ্যানে মফস্বলে অবস্থান হলেও শতভাগ পাস করা বিশেষায়িত ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজকে রাখা হয়নি। শহরের তুলনায় মফস্বলের কলেজগুলো কেন পিছিয়ে পড়ছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা এবং শিক্ষাবিদদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেছেন, চট্টগ্রাম জেলার বাইরে বোর্ডের আওতাধীন তিন পার্বত্য জেলা অন্তর্ভুক্ত। আছে দ্বীপাঞ্চলও। ওইসব এলাকার কলেজগুলোতে আছে নানা সমস্যা। সুযোগ-সুবিধাও কম সেখানে। ফলে ওইসব কলেজের ফলাফল প্রতিবারই পিছিয়ে থাকে। তাছাড়া শহর কেন্দ্রিক চিন্তা থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আগ্রহও থাকে শহরের কলেজগুলোর প্রতি। এটারও প্রভাব পড়ে পরীক্ষার ফলাফলে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক আজাদীকে বলেন, পার্বত্য এলাকা ও দ্বীপ অঞ্চলের কলেজগুলোতে অনেক দুর্বল শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তারা খারাপ করলে পুরো বোর্ডের সামগ্রিক ফলাফলেও এর প্রভাব পড়ে।
তুলনামূলক চিত্র : চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীন পাঁচটি জেলার (চট্টগ্রাম, কঙবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) এইএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এই পাঁচটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছেন চট্টগ্রাম শহরের শিক্ষার্থীরা। নগরের আওতাভুক্ত বিভিন্ন কলেজ থেকে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের গড় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। বিপরীতে মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় তথা মফস্বলে পাসের হার হচ্ছে ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ।
এর আগে ২০১৯ সালে মহানগরে ৭৫ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং উপজেলায় পাসের হার ছিল ৫৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। ২০১৮ সালে নগরে ৭৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং উপজেলায় ছিল ৫৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। ২০১৭ সালে নগরে ৭৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ এবং উপজেলায় পাস করে ৫৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০১৬ সালে নগরে ৭৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং উপজেলায় পাস করে ৬০ দশমিক ২৩ শতাংশ। ২০১৫ সালে শুধু মহানগরে পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ছিল ৫৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০১৪ সালে মহানগরে পাসের হার ছিল ৭৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং উপজেলায় পাসের হার ছিল ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। ২০১৩ সালে মহানগরে পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ০৮ শতাংশ এবং উপজেলার পাসের হার ছিল ৫২ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ২০১২ সালে মহানগরে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং উপজেলায় পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ২০১১ সালে শুধু মহানগরে পাসের হার ছিল ৮১ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং উপজেলায় পাসের হার ছিল ৬৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০১০ সালে মহানগরে পাসের হার ছিল ৮২ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং উপজেলায় পাসের হার ছিল ৬৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
এবার (২০২১) তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে পাসের হার ৮১ দশমিক ৬২ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে পাসের হার ৮৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং বান্দরবানে পাসের হার হচ্ছে ৯১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। কঙবাজারে এ হার ৮৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর আগে ২০১৯ সালে জেলাগুলোতে পাসের হার ছিল কঙবাজারে ৫৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৪৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ, রাঙামাটিতে ৪৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং বান্দরবারনে ছিল ৫৯ দশমিক ৭১ শতাংশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৪৮ সালে প্রথম রাষ্ট্রভাষা দিবসে আহত হন অনেক ভাষাকর্মী
পরবর্তী নিবন্ধতবুও সব বোর্ডের শেষে চট্টগ্রাম