তবুও সব বোর্ডের শেষে চট্টগ্রাম

রেকর্ড ফল ।। এইচএসসিতে পাসের হার ৮৯.৩৯ শতাংশ জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ জন

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে এবার। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ জন। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর এ সংখ্যা গত দশ বছরে সর্বোচ্চ। যদিও এইচএসসির এবারের ফল বোর্ডের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সর্বোচ্চ (অটোপাসের বছর বাদ দিয়ে) বলেও মনে করছেন শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় এবারই (২০২১ সালে) পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। তবে রেকর্ড ফলেও দেশের সকল (১১টি) শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে চট্টগ্রামের অবস্থান তলানিতে। সারা দেশে গড়ে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে এবার। হিসেবে দেশের গড় পাসের হারের তুলনায় চট্টগ্রামের পাসের হার প্রায় ৬ শতাংশ কম।
প্রাপ্ত ফলাফলে ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৯৬.২০ শতাংশ, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ৯৭.২৯ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৯৫.৭৬ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৯৭.৪৯, দিনাজপুর বোর্ডে ৯২.৪৩ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৯৪.৮০ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৯৫.৭১ শতাংশ যশোরে পাসের হার ৯৮.১১ শতাংশ। ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৯৩.৫৮ শতাংশ। মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৯৫.৪৯ শতাংশ এবং কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৯২.৮৫ শতাংশ। পর্যালোচনায় দেখা যায়, সব বোর্ডে পাশের হার ৯০ শতাংশের বেশি হলেও চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৯০ শতাংশের নিচে।
চট্টগ্রাম বোর্ড থেকে এবার ৯৯ হাজার ৬২৮ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৮৯ হাজার ৬২ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ পরীক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের এ সংখ্যা গতবার (২০২০ সালের) অটোপাসের ফলাফলের তুলনায় বেশি। অর্থাৎ অটো পাসে যে সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়, এ বছর তার চেয়েও বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে। ২০২০ সালে করোনা মহামারীর কারণে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। পরীক্ষা ছাড়াই জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে এবং সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল নির্ধারণ হয়েছিল। ওই বছর (২০২০ সালে) শতভাগ পাসের হারে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ১৪৩ জন। হিসেবে গতবারের তুলনায় ১ হাজার ৫৭৭ জন বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে এবার। অবশ্য, এবারও সবকয়টি বিষয়ের পরীক্ষায় বসতে হয়নি শিক্ষার্থীদের। বিভাগ ভিত্তিক তিনটি করে বিষয়ের ৬টি পত্রের পরীক্ষা দিতে হয়েছে তাদের। সংক্ষিপ্ত সূূচি ও কম নম্বরের পরীক্ষায় রেকর্ড ফল এসেছে এবার। তবে এই রেকর্ড ফলাফলেও দেশের সবকয়টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে তলানিতে (সবার পিছনে) অবস্থান চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের।
রেকর্ড ফলেও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের তলানিতে অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ আজাদীকে বলেন, তিন পার্বত্য অঞ্চল ও দ্বীপ অঞ্চলের মতো দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীরা ফলাফলে সবসময় পিছিয়ে থাকে। ভালো ফল হলেও বিশেষ করে এ কারণেই সার্বিকভাবে চট্টগ্রাম পিছিয়ে থাকে। পাবর্ত্য অঞ্চলগুলো নিয়ে আলাদা বোর্ড না হওয়া পর্যন্ত এমন অবস্থানের পরিবর্তন আশা করা যায় না বলেও অভিমত শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথের।
শিক্ষাবোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী- অটো পাসের বছর বাদ দিয়ে এইচএসসিতে গত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাসের হার ছিল ২০১২ সালে। ওই বছর ৭২.৭১ শতাংশ পাসের হারে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩ হাজার ১৫৫ জন। এরপরে সর্বোচ্চ ৭০.০৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে ২০১৪ সালে। ওই বছর জিপিএ-৫ পায় ২ হাজার ৪৪৬ জন। অন্যান্য বছরগুলোতে পাসের হার ছিল ৭০ শতাংশের কম। ২০১৩ সালে পাসের হার ছিল ৬১.২৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পায় ২ হাজার ৭৭২ জন। ওই বছরও (২০১৩ সালে) এইচএসসির ফলাফলে সবকয়টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল চট্টগ্রাম। ২০১৫ সালে ৬৩.৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। জিপিএ-৫ পায় ২ হাজার ১২৯ জন। ২০১৬ সালে ৬৪.৬০ শতাংশ পাসের হারে জিপিএ-৫ পায় ২ হাজার ২৫৩ জন। ২০১৭ সালে পাস করে ৬১.০৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। জিপিএ-৫ পায় ১ হাজার ৩৯১ জন। ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৬২.৭৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পায় ১ হাজার ৬১৩ জন। আর অটোপাসের বছরের আগে ২০১৯ সালে পাসের হার ছিল ৬২.১৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পায় ২ হাজার ৮৬০ জন।
শিক্ষাবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ছাত্রদের মধ্যে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং ছাত্রী পাসের হার ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে সাত হাজার ৬৭০ জন; আর জিপিএ পাওয়া ছাত্রের সংখ্যা ৬ হাজার ৫০জন।
এবার বিভাগভিত্তিক ফলে এগিয়ে আছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগে পাসের হার ৯২ দশমিক ২০ শতাংশ। মানবিকে এ হার ৮৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ ও ব্যবসায় শিক্ষায় হার ৮৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
চট্টগ্রাম মহানগরে পাস করেছে ৯৩ দশমিক ৬২ শতাংশ শিক্ষার্থী। মহানগর ছাড়া জেলায় পাসের হার ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ। আর চট্টগ্রাম জেলায় হার ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ।
তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙামাটিতে ৮১ দশমিক ৬২ শতাংশ, খাগড়াছড়ি ৮৩ দশমিক ২১, বান্দরবানে ৯১ দশমিক ৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযেভাবে প্রভাব ফেলল মফস্বল
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় তাসিফ হত্যা মামলায় আরো একজন গ্রেপ্তার