যুদ্ধ বিশ্বের স্টিল সেক্টরকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে

মতবিনিময়ে জাহাঙ্গীর আলম ।। কাঁচামালের সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা ।। সর্বাধুনিক গ্রেডের রড উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে জিপিএইচ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৪ মার্চ, ২০২২ at ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহ প্রভাবে ইস্পাতের বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করেন জিপিএইচ ইস্পাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেছেন, যুদ্ধ না থামলে আগামী মে মাসের পরই দেশে ইস্পাতের কাঁচামালের তীব্র সংকট তৈরি হতে পারে। ব্যাপারটি দেশের ইস্পাত সেক্টরের জন্য অনেক বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। ইতোমধ্যে ছোট এবং মাঝারি সাইজের বহু ইস্পাত কারখানা কাঁচামাল সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। ইস্পাত তৈরির প্রধান কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম দেড় বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই স্ক্র্যাপের দাম টন প্রতি একশ ডলার বেড়ে গেছে। টাকা দিয়েও স্ক্র্যাপ পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। লৌহ ও লৌহজাত শিল্পের কাঁচামালের সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখার ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, স্ক্র্যাপ আমদানিতে শুল্কহার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার পাশাপাশি আমদানি যাতে বিঘ্নিত না হয় সেজন্য সরকারের নজরদারির বাড়াতে হবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে সীতাকুণ্ডস্থ জিপিএইচ কারখানার সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা জানান। এ সময় জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল কারখানার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। মতবিনিময় সভায় জিপিএইচ ইস্পাতের পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জিপিএইচ ইস্পাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম আরো বলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনসহ সন্নিহিত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশের স্ক্র্যাপের অন্তত ১০ থেকে ১২ শতাংশ আমদানি করা হত। ওই অঞ্চল থেকে স্ক্র্যাপ রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রভাব বিশ্বের স্টিল সেক্টরকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। পুরো বিশ্বে দেখা দিয়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে স্ক্র্যাপের দাম। তিনি বলেন, বিশ্বসেরা ইস্পাত পণ্য তৈরির প্রতিজ্ঞা নিয়ে জিপিএইচ ইস্পাত নিয়ে এসেছে ক্লিন স্টিল তৈরির সর্বশেষ প্রযুক্তি। জিপিএইচ ইস্পাতের কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তি শুধু দেশেই নয়, এশিয়াতে প্রথম। বিশ্বের স্টিল উৎপাদনের সর্বাধুনিক এই প্রযুক্তি ব্যবহারকারী বিশ্বের দ্বিতীয় কারখানা হচ্ছে জিপিএইচ। এর সঙ্গে জিপিএইচ ইস্পাত যুক্ত করেছে সেকেন্ডারি রিফাইনিং প্রসেস, হাই স্পিড কাস্টিং মেশিন এবং সেরা প্রযুক্তির উইনলিংক রোলিং যা জিপিএইচ কোয়ান্টাম রডকে পরিণত করেছে বিশ্বের সেরা পণ্যে। বিশ্বসেরা মান ধরে রেখে পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হওয়ায় জিপিএইচ ইস্পাত এক লাখ বিশ হাজার টন স্টিল চীনে রপ্তানি করতে সক্ষম হয়েছে। বহুমুখী পরীক্ষা এবং যাছাই বাছাই শেষে গত বছর করোনাকালে চীন ৫টি চালানের মাধ্যমে উক্ত স্টিল আমদানি করেছিল।
অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমাস শিমুল বলেন, আমাদের কাছে দেশ অনেক বড়। দেশে যাতে বিশ্বসেরা কিছু একটা করা যায় সেজন্য আমরা বহুদিন ধরে চেষ্টা করছিলাম। পরবর্তীতে বিশ্বসেরা স্টিল উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েই আমরা ভাইয়েরা বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তি আনার। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় দুঃসাহস ছিল। কারণ এই প্রযুক্তিতে রড তৈরিতে উৎপাদন খরচ প্রচলিত ইন্ডাকশান ফার্নেসের চেয়ে অন্তত দশ শতাংশ বেশি। ইন্ডাকশান ফার্নেসে ১০৫ কেজি স্ক্র্যাপ থেকে ১০০ কেজি স্টিল পাওয়া যায়। অপরদিকে ইলেক্ট্রিক আর্ক ফার্নেসে ১১৫ কেজি স্ক্র্যাপ ব্যবহার করে ১০০ কেজি স্টিল পাওয়া যায়। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। একই সাথে বিভিন্ন ধরনের ক্যামিকেল ব্যবহার করতে হয়। ব্যবহার করতে হয় অঙিজেনসহ বিভিন্ন উপকরণ। যাতে খরচ বাড়ে। আমরা এই বাড়তি খরচ যুগিয়েও দেশের জন্য ভালো স্টিল তৈরি করছি।
তিনি বলেন, মধ্যম আয় কিংবা উন্নত বিশ্বে পরিণত হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। আর অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রধান উপকরণই হচ্ছে নির্মাণ সামগ্রী। নির্মাণ সামগ্রীর মধ্যে রডের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। যত উন্নতমানের রড ব্যবহৃত হবে ততই কম রড ব্যবহার করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব হবে। একটি অবকাঠামো নির্মাণে ৪০০ কিংবা ৫০০ গ্রেডের এক লাখ টন রড লাগলে সেখানে ৬০০, ৭০০ কিংবা ৭৫০ গ্রেডের রড ব্যবহার করলে ৮০ হাজার টন রড লাগবে। ২০ হাজার টন রড সাশ্রয় হবে। এভাবে ভালো স্টিল তৈরি হলে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তিনি বিশ্বের সর্বাধুনিক গ্রেডের রড উৎপাদনের সক্ষমতা জিপিএইচ ইস্পাত অর্জন করেছে বলেও উল্লেখ করেন।
মতবিনিময় সভার আগে জিপিএইচ ইস্পাতের স্ক্র্যাপ থেকে রড ও বিলেট উৎপাদনের কার্যক্রম সাংবাদিকদের ঘুরে দেখানো হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে গেলে প্রতিরোধের মুখে পড়ে
পরবর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনা ১৩ বছরে দেশে ম্যাজিক উন্নয়ন করেছেন