মৎস্য সম্পদ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য বিপজ্জনক এক জাল

চায়না দুয়ারী

| মঙ্গলবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে মৎস্য শিকারে নতুন ধরনের জালের ব্যবহার বাড়ছে, যা নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের মতো মিহি ও হালকা। এই জাল সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে মাছ ধরতে সক্ষম। জেলেদের অনেকে এই জাল ব্যবহার করে খুশী। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, এ জাল মাছসহ জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য কারেন্ট জালের চেয়েও ক্ষতিকর। নতুন এই জালের নাম চায়না দুয়ারী।
শুরুর দিকে পদ্মা নদীর তীর ধরে এই জালের ব্যবহার হলেও এখন সারা দেশে, বিশেষ করে বড় নদীর ধারে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটাকে জাল হিসেবে বর্ণনা করা হলেও মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চায়না দুয়ারী মাছ ধরার এক ধরনের ফাঁদ। এই জালের বুননে একটি গিঁট থেকে আরেকটি গিঁটের দূরত্ব খুব কম, যে কারণে এতে মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না। একে চায়না জাল, ম্যাজিক জাল ও ঢলুক জাল নামেও ডাকা হয়। খবর বিবিসি বাংলার।রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা জানান, বাংলাদেশে মাছ ধরার জালের মেস সাইজ অর্থাৎ জালে একেকটি গিঁটের দূরত্বের অনুমোদিত পরিমাপ উল্লেখ আছে এবং এই মাপটি সাড়ে চার সেন্টিমিটার। জালের মেস সাইজ এর চেয়ে কম হলে সেটি দেশের আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ। এই কারণে কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ। ঠিক একই কারণে চায়না দুয়ারীও নিষিদ্ধ। তবে এক্ষেত্রে একটি ফাঁক থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জালের তালিকায় চায়না দুয়ারীর উল্লেখ নেই, যদিও আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এটি নিষিদ্ধ। সেই সুযোগটিই অনেক জেলে নিচ্ছেন।
নাম চায়না দুয়ারী বলা হলেও এই জাল উৎপাদিত হয় দেশেই। তবে জালের সুতা সূক্ষ্ম আর মিহি বলে অনেকের ধারণা এ সুতা চীন থেকে আমদানি করা হয়। জালের দুই মাথা খোলা বলে একে দুয়ারী বলা হয়। সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে এই জাল। প্রস্থ এক থেকে দেড় ফুট। এর গিঁট খুবই ক্ষুদ্র। লোহার চার কোনা রড দিয়ে অনেকগুলো ফ্রেম বানানো হয় জালের মধ্যে দেওয়ার জন্য। প্রয়োজন অনুসারে জালের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী রডের ফ্রেমের সংখ্যা নির্ধারিত হয়। এটি নদীর একেবারে তলদেশ পর্যন্ত যায় এবং মাটির সাথে মিশে থাকে। ফলে মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এই জাল এত সূক্ষ্ম যে, ছোট ছোট জাতের মাছ, এমনকি মাছের ডিমও অনেক সময় উঠে আসে। দৈর্ঘ্য ও মান অনুযায়ী এই জালের দাম সাড়ে তিন হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
কেন বিপজ্জনক : যেহেতু এই জালে একবার ধরা পড়লে আর বের হতে পারে না, তাই অনেক বিপন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মারা পড়ে। সেগুলো আর ওইসব প্রাণী বংশ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই কারণে জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাগো লক্ষ প্রীতিলতা
পরবর্তী নিবন্ধ‘রপ্তানি শুরু হলে বাংলাদেশ টিকা আগেই পাবে’