‘ম্যানেজ’ অপসংস্কৃতি ও বেপরোয়া মাফিয়া আগ্রাসন

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ১১:৪৩ অপরাহ্ণ

করোনা অতিমারির চেয়েও অতিমাত্রায় ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং অপরাধ, মাদক সংগ্রহ-বিতরণ-বাণিজ্য-সেবন, নারী-শিশুর প্রতি বর্বরতম সহিংসতা, মুনাফাখোর-কালোবাজার দৌরাত্ম্য, খাল-বিল-জমিজমা-সরকারি ভূমি দখল, টেন্ডার-নিয়োগ বাণিজ্য ইত্যাদির কদর্য পাপাচার-প্রতারণা ও জালিয়াতির বেপরোয়া দৃশ্যাদৃশ্য দেশের আপামর জনগণকে অধিকতর আতঙ্কিত-ভীতসন্ত্রস্ত করে চলেছে। দেশে সরকারি বিশেষ করে বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-হাসপাতাল-ধর্মীয় উপাসনালয়-শিল্পকারখানা-কৃষিপণ্য উৎপাদন-চা ও রাবার বাগান-বৃক্ষ রোপণ-সিএনজি গ্যাস স্টেশনসহ বিভিন্ন কথিত আয়বর্ধমূলক উৎপাদনমুখী-কর্মসংস্থান সৃজনের নামে এই ‘ম্যানেজ’ অপসংস্কৃতির ভাইরাসের সংক্রমণে পুরোদেশ প্রকৃত অর্থে ক্ষত-বিক্ষত। যেখানে যেভাবে যাকে প্রয়োজন তা ‘ম্যানেজ’ করে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার বীভৎস অভিপ্রায়ে দেশের সমূহ সম্পদ নিজেদের ভোগ বাণিজ্যের আওতায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়া সচেতন মহলকে প্রচণ্ড হতবাক করছে। জনশ্রুতি মতে সরকারি-বেসরকারি পরিষেবাসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে পচা শামুকের মতো দুর্বৃত্তের দুর্গন্ধ দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশকে চরম দূষণে বিষক্ত করছে। বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ, সাংবাদিক-কলামিস্ট-বুদ্ধিজীবীদের মতানুসারে, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী আদর্শিক চেতনায় পরিপূর্ণ অবিশ্বাসী এবং কালের পরিক্রমায় ন্যূনতম পর্যায়েও তা ধারণ করতে ব্যর্থ এসব পরাজিত অন্ধকারের শক্তির অবস্থান বর্তমান সকল স্তরে অত্যন্ত সবল অবস্থানে অধিষ্ঠিত। ছদ্মবেশি বর্ণচোরা অনুপ্রবেশকারীরা কাদের পৃষ্ঠপোষকতা-প্রণোদনা-প্ররোচণায় দেশবিধ্বংসী কর্মযজ্ঞে অবিরত লিপ্ত রয়েছে; দেশীয় ও আঞ্চলিক স্ব স্ব জনপদে মুখোশ উন্মোচন করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর-টেকসই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের উচ্চকিত দাবি।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, অবৈধ-অনৈতিক পন্থায় উপার্জিত অর্থ-আরোপিত ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির আগ্রাসনে এরা এত বেশি শক্তিশালী; সৎ-যোগ্য-দক্ষ-মেধাবী-দেশপ্রেমিক সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে এদের প্রতিরোধ করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পক্ষান্তরে সাহসের সাথে অসত্য-অন্যায়-অসামাজিক-অযৌক্তিক-অগ্রহণযোগ্য কর্মযজ্ঞ প্রতিরোধে সোচ্চার মানুষগুলোকে কোন না কোনভাবে বিপদগ্রস্ত করার নানা অপকৌশল অবলম্বন সমাজে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দৃশ্যপট তৈরি হয়েছে। মাফিয়া চক্রের সিন্ডিকেটেড অপকর্মকে বৈধতাদান এবং অব্যাহত রাখার জঘন্য স্বার্থে যারা অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছে কম বেশি তারা সকলেই চিহ্নিত। ১৯৭৫ পরবর্তীকালে দেশের হিংস্র রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে নরপশুতুল্য সেনা ও স্বৈরশাসকদের কতিপয় তোষামোদকারী-চাটুকারীদের সীমা-পরিসীমাহীন আস্ফালন ও দাপট প্রদর্শন মানুষকে অবদমিত করার কুকর্মগুলো নতুনরূপ পরিগ্রহ করে আবারও চরম অস্থিতিশীলতার মধ্যে দেশকে টেনে আনার গভীর ষড়যন্ত্রে নিয়োজিত রয়েছে। ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লেবাসে ধার্মিকতা-অসাম্প্রদায়িকতাকে পরিহার করে নগ্নভাবে ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে কুন্ঠাবোধ করছে না। মহান স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস ও মৃত্যুভয় কোনভাবেই তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে নমনীয় করতে পারছে বলে মনে হয় না। দুর্নীতি-ঘুষ-নির্লজ্জ নগদ অর্থ লেনদেনে যতবড়ই অপরাধ হোক না কেন; তা ‘ম্যানেজ’ অপসংস্কৃতির মোড়কে দেশকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে সচেতন মহল তা নিয়ে নিগূঢ় উদ্বিগ্ন। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জাতির কোন আদর্শকে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করে পরিশুদ্ধ জীবনের অনুসন্ধান চালাবে; এই নিয়ে তাদের বিভ্রান্তির কোন চৌহদ্দী সুস্পষ্ট নয়।
বিগত চার বছর যাবৎ মানবিকতার অত্যুজ্জ্বল উপমা অনুসরণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়-ভরণপোষণ এবং মানসম্পন্ন জীবনযাপনের উপকরণ যোগানে সরকার ও দেশবাসীর উদ্যোগ সর্বত্রই প্রশংসিত হলেও মিয়ানমার সরকার কর্তৃক বিতাড়িত এই জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই মাদক বিক্রয়, নারী পাচার, অসামাজিক এমন সব কর্মযজ্ঞে জড়িত রয়েছে বলে প্রতিদিন গণমাধ্যমসমূহ যে সংবাদ পরিবেশন করছে; তাতে এরা জাতির জন্য একটি কঠিন অভিশাপ রূপে পরিগণিত হচ্ছে। ভাসানচরে অনিন্দ্য সুন্দর আবাসন থেকে হীন কৌশলে পালিয়ে দেশের নানা অঞ্চলে এদের ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ দেশবাসীর জন্য মোটেও সুখকর নয়। ইতিমধ্যে আফগানিস্তান সরকারের পতন ও তালেবান শক্তির উত্থানের সাথে এদের সম্পর্কিত করারও নানামুখী সন্দেহ-সংশয় তৈরি হয়েছে। বৈশ্বিক কুটিল বিশ্বায়ন রাজনীতি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত-সুকৌশলে দেশের সামগ্রিক দৃশ্যমান উন্নয়নের সামষ্টিক গতিধারাকে রুদ্ধ এবং বিশ্বপরিমণ্ডলে দেশের অখণ্ড ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে পরিচালিত বিভিন্ন কুপ্রবৃত্তির মনোভাবকে সুক্ষ্ণ তদন্তের মাধ্যমে স্পষ্ট করা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার উঁচুমার্গের মানবিক মনন-পদক্ষেপ প্রতিফলনে করোনাকালীন জনদুর্ভোগ লাঘবে ঘোষিত প্রণোদনা প্রাপ্তি ও দরিদ্রদের জন্য আবাসন প্রকল্পের অধীনে গৃহ প্রাপ্তিতে ঘুষের আক্রমণ এই মাফিয়া চক্রেরই কারসাজিতে পরিপুষ্ট হচ্ছে বলে সচেতন মহলের ধারণা। সম্প্রতি উল্লেখ্য মাফিয়াদের প্রত্যক্ষ মদদে প্রতারণার নতুন প্রকরণে যুক্ত হয়েছে করোনায় গৃহবন্দী মানুষের কথিত জনপ্রিয় অনলাইন ভিত্তিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ধামাকা শপ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, কিউকম ও ইঅরেঞ্জ ইত্যাদির বহুমাত্রিক প্রতারণা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে জানা যায়, ১৪ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত শুধু ইভ্যালি গ্রহকদের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ২১৩ কোটি ৯৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে এ যাবৎ কোন পণ্য সরবরাহ করেনি। উল্লেখ্য সময় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির নিকট বিভিন্ন মার্চেন্ট বা কোম্পানির দায় ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। ২০১৮ সালে নিবন্ধকৃত এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৪৪ লাখ ৮৫ হাজার ২০৭ জন। চমকপ্রদ অবিশ্বাস্য অফার, কোটি কোটি টাকা খরচে বিজ্ঞাপন, নামিদামি তারকাদের ব্রান্ড এম্বাসেডর নিয়োগসহ অভিনব পন্থা অবলম্বনে অন্তত ৮টি পদ্ধতিতে গ্রাহকদের লাভের গোলক ধাঁধায় ফেলে ই-কমার্স ইভ্যালি হাতিয়ে নিয়েছে ৩৩৯ কোটি টাকা। হাজার হাজার অভিযোগ অগ্রাহ্য করে ইভ্যালি এখনো কিভাবে দেশে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছে তা খতিয়ে দেখা একান্ত প্রয়োজন।
২১ আগস্ট ২০২১ গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের মার্চ ও জুন মাসের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল যথাক্রমে ৯৪ হাজার ২৬৫ কোটি ও ৯৮ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালের জুন মাসে ছিল ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। ফলশ্রুতিতে জুন ২০২০ – জুন ২০২১ সময়কালে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৪৮ কোটি এবং ২০২১ সালের এপ্রিল-জুন মাসে বেড়েছে ৩ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের মধ্য সময়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বাংলাদেশ ব্যাংক খাত নিয়ে প্রতিবেদনে বলেছিল, বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ আড়াল করে রাখা আছে। এখানে খেলাপি ঋণের যে তথ্য প্রকাশ করা হয়, প্রকৃত খেলাপি ঋণ তার তুলনায় অনেক বেশি।
৮ আগস্ট ২০২১ নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক অর্থনৈতিক উচ্ছ্বাসের নিচে কালো ছায়া আছে বলে মন্তব্য করেন। বিদায়ী অর্থবছরের তথ্য-উপাত্ত এবং বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি বিশ্লেষণে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। মোট জিডিপি অনুপাতে মাত্র ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ছোট ও মাঝারি শিল্প খাত ভালো নেই। আয় ও মজুরি কমায় মানুষের ভোগ কমেছে। এর ফলে পিছিয়ে পড়া মানুষের সঙ্গে আরও মানুষ যুক্ত হওয়ার চাপ বাড়ছে।’ অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ-প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে গত কয়েক শতকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ও সুদূরপ্রসারী মন্দাটির প্রভাবে বাংলাদেশও প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ২৮ আগস্ট ২০২১ গণমাধ্যম তথ্যমতে জানা যায়, আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (এসঅ্যান্ডপি) প্রতিবেদনে করোনা মহামারিতে আর্থিক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও জোরালো প্রবৃদ্ধি ও বিপুল উন্নয়ন চাহিদার কল্যাণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আগের মতোই ‘স্থিতিশীল’ থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জোরালো প্রবৃদ্ধির ধারা গড় আয় বাড়াতে থাকবে এবং বছরজুড়ে বাহ্যিক ঝুঁকি মোকাবিলা করে টিকে থাকার যে প্রত্যাশা ছিল; রেটিং এ তারই প্রতিফলন ঘটেছে। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ।
সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ-সম্মুখ যোদ্ধাদের অকৃত্রিম প্রচেতা-বহুলাংশে জনগণের সচেতন উপলব্ধির কারণে সমকালীন বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণের সার্বিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কম সংকটাপন্ন হিসেবে অনুমেয়। এখনও অপ্রাতিষ্ঠানিক ও স্ব-উদ্যোগী ব্যবসা, হোটেল-রেস্তোরাঁ, গণপরিবহণ, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো দুর্দশামুক্তির যারপরনাই কাতর আর্তনাদে পর্যুদস্ত। জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ কর্মসংস্থান হারিয়ে নগর-গ্রাম-নগরে স্থানচ্যূত হয়েছে। করোনার প্রভাবে নিম্ন আয়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কর্মহীনতায় চরম দরিদ্র লোকের সংখ্যা করোনা পূর্ব ১২ শতাংশের স্থলে ২২ শতাংশে নেমে আসে। চলমান মহামারিতে বাংলাদেশের ৭৪ শতাংশ পরিবারের উপার্জন কমে গেছে এবং ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়েছেন বলে ১ জুন ২০২০ প্রকাশিত ব্র্যাক, ডেটা সেন্স ও উন্নয়ন সমন্বয়-এর যৌথ সমীক্ষা-জরিপের ফলাফলে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়াও ১৪ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন বা আসছেন বলে প্রকাশিত জরিপে প্রতিফলিত হয়। রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ (রামারু)’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের মতে, মহামারির মধ্যে প্রায় ৫ লাখ প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন।
দেশবাসী সম্ভবত কমবেশি অবগত আছেন যে, সকল আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অশুভবলয়ে সংঘটিত জঘন্য অপরাধ কর্মে জড়িত-নিতৃত্বে রয়েছে অন্ধকারের পূজারী অর্থ ও ক্ষমতা লিপ্সু দানবরূপী মাফিয়া চক্র। ‘ম্যানেজ’ অপসংস্কৃতির নগ্নতায় এদের আগ্রাসী কুপদচারণা সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী অভিযানে সময়ের ব্যবধানে কিছুটা স্থিতিমিত হলেও; স্বল্প সময়ের মধ্যে আবার তারা এতবেশি অদমনীয় শক্তিতে সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণ বিশ্লেষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সার্বিক সচেতনতায় দেশ হয়ত কোন সময় করোনা বিজয়ে সক্ষম হবে। এসব মাফিয়াদের কূটকৌশলের আচ্ছাদনে ‘ম্যানেজ’ অপসংস্কৃতির ডাল-পালা বেড়ে এদের আগ্রাসন একদিন দেশকে সম্পূর্ণ গিলে খাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করবে- নিঃসন্দেহে তা বলা যায়। বিবেক প্রসূত দেশবাসীর ধারণা হচ্ছে; ‘ম্যানেজ” অপসংস্কৃতির কুশীলব এবং অর্থ গ্রহীতা ও ফলশ্রুতিতে মাফিয়াদের অবৈধ উপার্জিত অর্থ দেশ বা দেশবাসীর কল্যাণে কোনভাবে কার্যকর নয়। তাদের এই লুম্পেন-লুন্ঠন প্রক্রিয়ায় সংগৃহীত অর্থ অবশ্যই বিদেশে পাচার হচ্ছে এবং যেকোন বিপরীত সময়-পরিস্থিতিতে দেশ ত্যাগে তাদের প্রস্তুতি পুরোপুরি সম্পন্ন রয়েছে বলে দেশবাসীর গভীর বিশ্বাস। মাফিয়া চক্রের হোতা-মদদ দাতাদের পাপিষ্ট প্রতারণা ও জালিয়াতিকে প্রতিরোধ করার দৃঢ়চেতা-নির্ভীক-সাহসীক ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে অচিরেই দেশ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের মহান স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার উদ্দেশ্যে জাতির জনকের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টির দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিনাশ এবং সকল অশুভ শক্তির কদর্য কুপরিকল্পনা নিধন করার জন্য শুভ-সুন্দর-কল্যাণময়ী শক্তির একতা দেশ রক্ষার যুদ্ধে অপরিমেয় ব্রত ও চূড়ান্ত বিজয়ের অনবদ্য দৃষ্টান্ত নির্মাণে অত্যুজ্জ্বল হবে।

লেখক: শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধফেসবুকে ভুল তথ্য বেশি প্রচার পায়: গবেষণা