মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন : সাংবাদিক ও সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম প্রতিভূ

| শনিবার , ২১ মে, ২০২২ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন। মুসলিম বাংলার সাহিত্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ। প্রগতি চেতনায় ঋদ্ধ একজন মননশীল ব্যক্তিত্ব। বিশ শতকের গোড়ার দিকে মুসলমান সমাজের অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থার প্রেক্ষাপটে তিনি সমাজ সংস্কারক ও বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা পালন করেছেন। ‘সওগাত’ নামে একটি সচিত্র সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে তিনি মুসলমান শিল্পী সাহিত্যিকদের সাহিত্য চর্চার সুযোগ তৈরি করে দেন, যা সমাজ পরিবর্তনে সাহসী ভূমিকা রাখে। মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের জন্ম ১৮৮৮ সালে চাঁদপুর জেলার পাইকারদি গ্রামে। প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ মেলে নি তাঁর। তবে শিক্ষিত ছিলেন স্ব-শিক্ষায়। ব্যক্তিগতভাবে প্রচুর পড়াশোনা করতেন তিনি। বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর কিশোর বয়সেই তাঁকে সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়। কর্মজীবনের শুরুতে স্বল্প বেতনে কাজ করেছেন স্টিমার কোম্পানির স্টেশন মাস্টারের সহকারী হিসেবে। পরবর্তীকালে বীমা কোম্পানির প্রতিনিধি হন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে সাহিত্য চর্চা। সে সময় শিল্প ও সাহিত্য ক্ষেত্রে মুসলমানদের পিছিয়ে থাকা নাসিরউদ্দীনকে পীড়িত করতো। এই দৈন্য থেকে মুক্তির লক্ষ্যে তিনি চাকরি ছেড়ে কলকাতায় যান এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব উদ্যোগে, নিজ সম্পাদনায় প্রকাশ করেন সচিত্র সাহিত্য পত্রিকা ‘সওগাত’। ১৯১৮ সালের ২রা ডিসেম্বর এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটিতে বিদূষী মুসলিম নারী সহ দেশ-বিদেশের মনীষীদের ছবি, চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্ম, কার্টুন ইত্যাদি ছাপালে ‘সওগাত’ এবং নাসিরউদ্দীন গোঁড়া ধর্মাবলম্বীদের কোপানলে পড়েন। কিন্তু আত্মপ্রত্যয়ী, দীপ্র ও সাহসী নাসির অনগ্রসরতার অচলায়তন ভেঙে অব্যাহত রাখেন তাঁর যাত্রা। পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত ‘সওগাত সাহিত্য মজলিস’ কবি, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীদের মিলনকেন্দ্রে পরিণত হয়। কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া, শামসুন্নাহার মাহমুদ, সুফিয়া কামাল সহ আরো অনেকে নিয়মিত লিখতেন সওগাতে। নারী স্বাধীনতার পক্ষে জনমত তৈরির জন্য নাসিরউদ্দীন ‘বেগম’ নামের একটি সচিত্র সাপ্তাহিক প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়াও ‘শিশু সওগাত’, ‘সচিত্র মহিলা সওগাত’ ইত্যাদি প্রকাশের মাধ্যমে তিনি অনেক নতুন লেখক গোষ্ঠী তৈরি করেন। নাসিরউদ্দীন ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ এবং অক্লান্ত সংগঠক ও সম্পাদক। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকায় স্থায়ী হন। ‘সওগাত’ ও ‘বেগম’ ঢাকা থেকেই প্রকাশিত হতে থাকে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৪ সালের ২১ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅদক্ষ চালকের কবল থেকে রেহাই চাই
পরবর্তী নিবন্ধজাতীয় ইতিহাসের অনন্য ভাষ্যকার গাফ্‌ফার চৌধুরীর মহাপ্রস্থান