মোতাহের হোসেন চৌধুরী : মুক্তবুদ্ধি চর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্ব

| রবিবার , ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

মোতাহের হোসেন চৌধুরী। বিশিষ্ট কবি ও গদ্যশিল্পী। মুক্তবুদ্ধি চর্চা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। তিনি পরিশীলিত গদ্যের রচয়িতা হিসেবে বাংলা সাহিত্যে পরিচিত। মোতাহের হোসেন চৌধুরীর জন্ম ১৯০৩ সালে নোয়াখালি জেলার কাঞ্চনপুরে। তার পিতার নাম সৈয়দ আবদুল মজিদ ও মাতার নাম ফতেমা খাতুন। মোতাহের হোসেন চৌধুরীর শিক্ষাজীবনের বেশিরভাগ সময় কুমিল্লাতেই কাটে। কুমিল্লা ইউসুফ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি আইএ ও বিএ পাশ করেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। এবং ১৯৪৩ সালে প্রাইভেটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। মোতাহের হোসেন চৌধুরী কর্মজীবনের শুরুতে কুমিল্লা ইউসুফ হাইস্কুলে একজন সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে লেকচারার পদে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর চট্টগ্রাম কলেজে যোগদান করে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। মোতাহের হোসেন চৌধুরী কিশোর বয়স থেকেই সাহিত্যে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তিনি প্রথমদিকে কবিতা লিখতেন। বাঙালি মুসলমান সমাজের অগ্রগতির আন্দোলন হিসেবে পরিচিত ‘বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের’ সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি এই আন্দোলনে কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদির প্রমুখের সহযোগী ছিলেন। তিনি ঢাকার মুসলিম সাহিত্য সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনীতে মুক্তবুদ্ধি, মননশীলতা, মানবতার ছাপ পাওয়া যায়। ১৯২৬ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ এবং এর মুখপত্র ‘শিখা’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন মোতাহের। তাঁর মৌলিক রচনায় নিজের জীবন দর্শনের সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। মোতাহের হোসেন রবীন্দ্রনাথ ও বার্ট্রান্ড রাসেলের জীবনদর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তবে তাঁর মৌলিক রচনাগুলো স্বকীয়তায় ভাস্বর। প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। তার রচিত উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ গ্রন্থ ‘সংস্কৃতি কথা’ (১৯৫৮)। এ ছাড়াও ‘সুখ’ নামে ভাবানুবাদ করেছেন বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘কনকোয়েস্ট অব হ্যাপিনেস’ গ্রন্থটি। ক্লাইভ বেলের ‘সিভিলাইজেশন’-এর অনুসরণে লিখেছেন ‘সভ্যতা’। তিনটি গ্রন্থই তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। সৈয়দ আবুল মকসুদের সম্পাদনায় ১৯৯৫ সালে বাংলা একাডেমি তার প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত সমস্ত রচনা রচনাবলি আকারে প্রকাশ করে। চট্টগ্রাম কলেজে অধ্যাপনাকালে ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচিলির স্বাধীনতা দিবস ও বিশ্বনৌ দিবস
পরবর্তী নিবন্ধশরৎ ঋতু