মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যাবে উৎপাদনে

ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প ।। ১৩০ কিমি পাইপলাইনের কাজ শেষ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:২৬ পূর্বাহ্ণ

উদ্বোধনের পর গত তিন বছরে চট্টগ্রাম ওয়াসার ভান্ডালজুড়ি পানি প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি এখন ৭১ শতাংশ। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে এবং বোয়ালখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও আনোয়ারা শিল্পাঞ্চলে পানি যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
কর্ণফুলী নদীর বোয়ালখালী ভান্ডালজুড়ি এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে প্রায় ৪১ দশমিক ২৬ একর জায়গায় গড়ে ওঠা এ মেগা প্রকল্প সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কর্ণফুলী নদী থেকে পানি সংগ্রহের জন্য ইনটেক (যে পয়েন্ট দিয়ে পানি সংগ্রহ করা হবে) তৈরি করা হয়েছে। ইনটেক থেকে পানি সংগ্রহ করে পরিশোধনের জন্য পাঠানো হবে। যেমন- ক্লারিফায়ার, সেন্ড ফিল্টার, ক্লোরিন মেশানো, কেমিক্যাল মেশানো প্রভৃতি কার্যক্রম শেষে বিশুদ্ধ পানি জমা হবে প্রকল্প স্থান থেকে প্রায় ২২ ফুট উচ্চতার রিজার্ভারে। সেখান থেকে পাইপ লাইনে সরবরাহ করা হবে পানি। সব জায়গায় অবকাঠামোগত কাজগুলো শেষ হয়েছে। শুধু যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্প থেকে দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হবে। উৎপাদিত পানির কিছু আংশ শহরের কল্পলোক আবাসিক এলাকায় সরবরাহ করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শহরের অংশ বাদ পড়ে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কথা ভেবে শহর অংশে পাইপ লাইন বসায়নি। এখন এই প্রকল্প থেকে উপশহরগুলোতে বিশেষ করে পটিয়া, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন শিল্প কারখানায় সুপেয় পানি সরবরাহ করা যাবে। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা অনেকাংশে কমবে বলে জানান ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্পের পরিচালক মাহবুবুল আলম আজাদীকে বলেন, ইতোমধ্যে পুরো প্রকল্পের ১৩০ কিলোমিটার পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে। ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প এলাকায় ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ শেষ পর্যায়ে। বোয়ালখালীর ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প এলাকা থেকে পটিয়া পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন বসানোর কাজ শেষ। অন্যদিকে পটিয়া পৌরসভাসহ আশপাশের এলাকায় ৬০ কিলোমিটার সার্ভিস লাইনের কাজও শেষ হয়েছে। বোয়ালখালী পৌর এলাকায়ও পাইপ লাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এদিকে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলা সদর হয়ে শিল্প কারখানায় বিশেষ করে কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল, কাফকোসহ অন্যান্য শিল্পাঞ্চল ও আবাসিকে সরবরাহ করা হবে বিশুদ্ধ পানি।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চালু করা যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী বছরের জুনের আগের প্রকল্পর কাজ শেষ হবে। জুনের আগেই আমরা উৎপাদনে যাবো।
জানা যায়, এ মেগা প্রকল্পের পানি সরবরাহের জন্য পটিয়া বাইপাস এলাকায় পাঁচ একর জায়গায় ও আনোয়ারা দৌলতপুর মৌজায় ২ দশমিক ৯৪ একর জায়গায় প্রথক দুটো জলাধার নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। ওয়াসার এই প্রকল্পের বোয়ালখালীতে থাকছে প্রায় দুই হাজার আবাসিক সংযোগ। পানির এই পাইপ লাইন বোয়ালখালী মিলিটারি পুলের কাছে এসে দুই ভাগ হয়ে গেছে। একটি অংশ চলে গেছে আহলা দরবার শরীফ হয়ে পটিয়া পৌরসভায়। অপর অংশটি শিকলবাহা ও মইজ্জ্যার টেক হয়ে কর্ণফুলী ও আনোয়ারায় চলে গেছে। এজন্য তিন কোটি লিটার পানি ধারণ ক্ষমতার এই ওভারহেড ট্যাঙ্ক (জলাধার) নির্মাণ করা হয়েছে। ট্যাঙ্ক থেকে ১০ হাজার আবাসিক সংযোগ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াসার। একইভাবে কর্ণফুলী এবং আনোয়ারায়ও থাকছে আবাসিক সংযোগ। এজন্য কোরিয়ান ইপিজেড এলাকায় নির্মাণ হচ্ছে এক কোটি লিটার পানি ধারণ ক্ষমতার একটি জলাধার। সেখান থেকে আনোয়ারা এলাকায় পানি সরবরাহ করা হবে। তবে আবাসিক সংযোগের চেয়ে শিল্প কারখানায় বাণিজ্যিক সংযোগের দিকে দৃষ্টি বেশি চট্টগ্রাম ওয়াসার।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল চট্টগ্রাম ওয়াসার বোয়ালখালী ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রথম সংশোধিত আকারে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ১৯৯৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রকল্পের ৮২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থায়ন করছে কোরিয়ান এঙ্মি ব্যাংক। বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ১১৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব তহবিল থেকে দিচ্ছে ২০ কোটি টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্যারিবীয়ান প্রিমিয়ার লিগে টানা দুই ডাক সাকিবের পেলেন দুই উইকেট
পরবর্তী নিবন্ধটেকনাফে মা ও দুই মাসের শিশুর মৃত্যু