মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে সিমুলেটর কমপ্লেক্স

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১০ জানুয়ারি, ২০২১ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

দেয়াল ঘেরা কক্ষে বসে শিক্ষার্থীদের মনে হবে তারা গভীর সাগরে জাহাজ চালাচ্ছেন। কক্ষে থাকবে সমুদ্রগামী জাহাজের আবহ। জাহাজ থেকে আইসবার্গ কিংবা পাহাড়ের দেখা মিলবে মাঝেমধ্যে। চট্টগ্রামে বসে মনে হবে পাড়ি দেয়া হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগর কিংবা আটলান্টিক।
বিশেষ এই ব্যবস্থার নাম ‘সিমুলেটর’। জাহাজ পরিচালনায় দক্ষ ক্যাডেট তৈরিতে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে প্রথম ‘সিমুলেটর কমপ্লেক্স’ স্থাপন করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের সরকারি ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে (এনএমআই) বিশেষ এই কমপ্লেক্স স্থাপন করছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়; যা শুধু চট্টগ্রামে নয়, দক্ষিণ এশিয়াতেও প্রথম। আগামী জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনএমআইয়ের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ফয়সল আজিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, জাহাজ চালানোর ক্ষেত্রে পৃথিবী অনেক দূর এগিয়ে গেছে। অত্যাধুনিক নানা প্রযুক্তি সন্নিবেশিত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) বিশ্বব্যাপী জাহাজ চলাচলসহ নাবিকদের বহু কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। আইএমওর নির্দেশনা অনুযায়ী, ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণে সিমুলেট বেইজড প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত ক্যাডেট প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ ধরনের সিমুলেটর থাকলেও তা পূর্ণাঙ্গ নয়। এই অভাব ঘুচাতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এনএমআইতে পূর্ণাঙ্গ একটি সিমুলেটর কমপ্লেক্স স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে প্রকল্পটির কাজ পঞ্চাশ শতাংশ শেষ হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ দক্ষ নাবিক তৈরিতে এক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ক্যাপ্টেন ফয়সল বলেন, এই প্রকল্প দেশের নৌ সেক্টরে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করবে। সিমুলেটর কমপ্লেক্সে ব্রিজ, ইঞ্জিন, জিএমডিএসএস ছাড়াও থাকছে ট্যাংকার, কেমিক্যাল ট্যাংকার ও গ্যাস ট্যাংকার সিমুলেটর। এছাড়া বয়া হ্যান্ডলিং টাগ, ক্রেন অপারেশন, হাই ভোল্টেজ, সালফার ক্যাপ, ব্যালাস্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিমুলেটর। অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরগুলো এই সিমুলেটরের সাথে যুক্ত থাকবে। ফলে ইনল্যান্ড ও কোস্টার জাহাজের নাবিকদেরও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত, একজন ক্যাডেট বাল্ক ক্যারিয়ার, কন্টেনার জাহাজ ও ট্যাংকার জাহাজের প্রশিক্ষণ পান। কিন্তু অত্যাধুনিক ও সমন্বিত সিমুলেটর দিয়ে তাদের রিমোর্ট অপারেটেড ভেসেল, অফশোর ভেসেল এবং এলপিজি-এলএনজিভিত্তিক জাহাজ পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে। বিশেষায়িত এসব প্রশিক্ষণ দেশে প্রথম ও একেবারে নতুন বলে মন্তব্য করেন ক্যাপ্টেন ফয়সল আজিম। তিনি জানান, এর মাধ্যমে শুধু জাহাজ পরিচালনা নয়, বন্দরে ব্যবহৃত বিভিন্ন ভারী যন্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণও দেয়া যাবে।
তিনি বলেন, নৌ চলাচল নিরাপদ রাখার স্বার্থে নাবিকদের যথাযথ প্রশিক্ষিত করার ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনার প্রেক্ষিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সিমুলেটর কমপ্লেক্স স্থাপন করছে।
প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা মহামারীর মাঝেও এই প্রকল্পের কার্যক্রম অব্যাহত ছিল। কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। বর্তমানে অবকাঠামোগত নির্মাণ কাজ চলছে। ইতোমধ্যে দুটি সিমুলেটর কিনেছি। সরকারিভাবে আরো একটি কেনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনটি সিমুলেটর দিয়ে ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নৌ সেক্টরে সিমুলেটর বেইজড প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। আগে ক্যাডেটদের জাহাজে উঠে এই প্রশিক্ষণ নিতে হত। তবে বিষয়টি কঠিন হয়ে উঠেছে। অনেক ক্যাডেটের পক্ষে এই প্রশিক্ষণ নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। অপরদিকে আইএমও থেকে জাহাজে ওঠার আগে জাহাজের মতো রিয়েল টাইম, রিয়েল এনভায়রনমেন্ট ট্রেনিং বাধ্যতামূলক করা হয়। এতে ক্যাডেটদের জন্য চাকরি পেতে সমস্যা হচ্ছিল। সিমুলেটর বেইজড কমপ্লেক্স বিশ্ববাজারে ক্যাডেটদের কাজে সহায়ক হবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামকে পর্যটন নগরী করার প্রতিশ্রুতি শাহাদাতের