মেয়েদের দুরন্ত চলার শক্তি রোজী আপা

মিতা দাশ | শনিবার , ৪ নভেম্বর, ২০২৩ at ৫:১৯ পূর্বাহ্ণ

একটানা সংসারের একঘেঁয়েমি বরাবরই কোনো নারীর ভালো লাগে না। সংসার সামলানো, সন্তান মানুষ করা,স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালন এগুলো যেন মেয়েদের একধরনের প্রাচীন প্রথাগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর বাইরেও যে একটা বিশাল পৃথিবী আছে, আছে নানারকম বৈচিত্র্য্যময় জীবন সেটাও উপভোগ করা উচিত সবার।

এইরকম আটপৌরে জীবন কারো কাম্য হয় না। অনেক নারীর ইচ্ছে থাকে সামাজিক কিছু কাজ করবে, জনসেবামূলক কাজ করবে । আর নারীদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিজেকে সামিল করবে। এইরকমই ভাবনা থেকে নতুন পথচলার শুরু রোজী চৌধুরীর।

একঘেঁয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে আসা হবে এমনটা হয়তো আগে থেকে পরিকল্পনা ছিলো না। কিন্তু সংসার সামলিয়ে ছোটখাট বিজনেস শুরু করে রোজি আপা। এরপর বড় মেয়ের বিয়ে দেন। আবারও সংসারের নানা কাজ সামলিয়ে মেজ মেয়ের সাহস ও উৎসাহে শুরু করেন নারীদের স্কুটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। শুরুটা সামান্য হলেও আস্তে আস্তে এটার প্রচার ও পরিধি বেড়ে বিশাল আকার ধারণ করেছে এখন।

শতশত নারীরা রোজী আপার কাছে স্কুটি চালানো শেখার পর, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে উনারা নিজেই এখন স্কুটি চালিয়ে চলে যায় নিজের দক্ষতা দেখিয়ে। মেয়েরাও যে রাস্তায় দারুণ গাড়ি চালাতে পারে এটা দৃশ্যমান হয়েছে অনেকখানি তাঁর হাত ধরে।

রোজী চৌধুরী একজন ভালো স্কুটি প্রশিক্ষক। তিনি এত সুন্দর করে শেখান যে, চার পাঁচ দিনের মধ্যে অনেকেই গাড়ি চালানো শিখে যায় অনায়াসে। সেই সাথে উনার অমায়িক ব্যবহার মুগ্ধ করে সবাইকে। সকলকে ভরসা দেয়া, উৎসাহ দেয়া, ইনশাআল্লাহ পারবেন এই ধরনের ইতিবাচক কথায় সকলে বেশ সাহস নিয়ে এগিয়ে চলেন স্কুটি নিয়ে।

কতবার কতজনকে স্কুটি ফেলে ভেঙে ফেলতে দেখেছি, কিন্তু রোজী আপাকে মুখ কালো করতে দেখিনি। তিনি বরং বলেছেন কোনো কিছু না ভাঙলে কি করে ভালো শেখা হবে? এছাড়াও তিনি রান্নায় পটিয়সী। কত রকমের খাবার নিজের হাতে বানিয়ে নিয়ে আসেন শত জনের মতো যারা সকালে বা বিকেলের ব্যাচে ট্রেনিং নিতে আসে। প্রতি ব্যাচে একশ জন তো থাকেই।

সকালেবিকালে, আবার চাকরিজীবীদের শুক্রবারশনিবার শেখান সকাল বিকাল।

সংসারে তিন মেয়ে এক ছেলে সবার প্রতি খেয়াল রেখে, স্বামীর সব দায়িত্ব পালন করেও পথে নামেন বাকি নারীদের সঠিক পথে সাহসের সাথে স্কুটি চালিয়ে এগিয়ে নিতে। প্রশিক্ষণ সংস্থার নাম হলো Road BD।

অদম্য মনোবলে এগিয়ে চলেছেন তিনি। সাথে দুর্বল নারীদের হাত শক্তিশালী করার প্রত্যয়ে ছুটে চলেছেন রোজ। সবাইকে সাহস জোগানোর জন্য থাকে রোড মাচ। ইয়ামাহা থেকে অনেকবার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। আর্থিকভাবে কেউ অপারগ হলে তাকে সাহায্য করেন রোজি আপা। তাঁর এই উদ্যোগ আরো সফলতা পাক, নারীদের হাত হোক আরো শক্তিশালী রোজী আপার হাত ধরে, এই প্রত্যাশায় রাখছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতফসিলের আগে সংলাপে ইসি
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু টানেলে প্রথম দুর্ঘটনা