মেট্রোরেল : চট্টগ্রামবাসীর জন্য আরেক আনন্দদায়ক খবর

| শুক্রবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২২ at ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ

তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে বাংলাদেশও বসে নেই। উন্নত দেশগুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্য দেশগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে যেভাবে এগিয়ে গেছে যানবাহনসহ যোগাযোগের সব মাধ্যমে, তা প্রশংসনীয়। বাংলাদেশও একের পর এক কর্মসূচি বাস্তবায়নে দক্ষ নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। একটার পর একটা স্বপ্নের বাস্তবায়ন হচ্ছে। ‘বাঁচবে সময় বাঁচবে তেল, জ্যাম কমাবে মেট্রোরেল’- এ স্লোগান সামনে রেখে ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকার এ প্রকল্প অনুমোদন করে। ২০১৬ সালের ২৬ জুন নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার এ প্রকল্পে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে জাপানি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা। পাঁচ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, মেট্রোরেলের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগর পরিবহন ব্যবস্থার নতুন যুগে প্রবেশ করেছে রাজধানী ঢাকা। আনুষ্ঠানিক ‘ট্রায়াল রান’ বা পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হলো মেট্রোরেলের। মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়; বাস্তব। ছয়টি বগির মেট্রোরেল ভায়াডাক্টের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে উত্তরার দিয়াবাড়ীর মেট্রোরেলের ডিপো থেকে পল্লবী পর্যন্ত চলে যায়, আবার ডিপোতে ফিরেও আসে। কথা হয়েছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচলের সূচনা একটি মাইলফলক ঘটনা। শুধু মেট্রোরেলেই সীমাবদ্ধ নয়; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বছর আরও তিনটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে।
এরই মধ্যে আরেকটি আনন্দের সংবাদ হলো : চট্টগ্রামেও হবে মেট্রোরেল। গত ৫ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ঢাকার পর এবার চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন পর্যন্ত মেট্রোরেলের রুটের কথাও বলেছেন তিনি। গত মঙ্গলবার পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঢাকার প্রকল্প শেষ হওয়ার পর বন্দর নগরীতে মেট্রোরেলের কাজ শুরুর কথা বলেছেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাশাপাশি দেশের সব বড় নগরীতে মেট্রোরেল নির্মাণের বিষয়েও ভাবতে বলেছেন সরকার প্রধান। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেকে) বৈঠক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে। সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। তথ্যমন্ত্রী চট্টগ্রামে মেট্রোরেল চালুর উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট বারবার অনুরোধ জানান। তিনি সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রী বরাবর অনুরোধ করেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী গতকাল চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে অনেক ভালোবাসেন। আমি যখনি সুযোগ পেয়েছি তখনি ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অনুরোধ করেছি। মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেবের উপস্থিতিতেও অনুরোধ করেছিলাম। তিনিও আমার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে অনুরোধ করেছিলেন। তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছু না বললেও আজ মনে হলো তিনি আমাদের ওই দিনের অনুরোধ নোটিশ করেছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। এখন আর বিষয়টিতে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং সংস্থা এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। কোন রুট ধরে কোন পথে কীভাবে মেট্রোরেল যাবে তার বিস্তারিত সমীক্ষা তারা করবে। এক্ষেত্রে বিমানবন্দর এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। চট্টগ্রামে মেট্রোরেল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আশা করা হচ্ছে, মেট্রোরেল ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামে আর যানজট সমস্যা থাকবে না। ফলে বন্দর নগরী হিসেবে গাড়ির অত্যধিক চাপ নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাপনে আর বাধা হতে পারবে না। মেট্রোরেল চট্টগ্রামের জন্য একটা স্বপ্ন। এই স্বপ্নেরও বাস্তবায়ন হোক-সেটাই প্রত্যাশা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে