মুক্তার জয় বাংলা

আফসানা রহমান | বুধবার , ১২ অক্টোবর, ২০২২ at ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

মুক্তার বয়স কতই বা হবে?সবেমাত্র চার পেরিয়ে পাঁচ এ পা দিয়েছে। জন্মের পর থেকে মা-বাবা,দাদা-দাদি,ফুফির স্নেহ আদরে হাটি হাটি পা পা করে মুক্তা নিজেকে অনেকটা বড় হয়ে গেছে মনে করে। ঘুম থেকে উঠে পাঁচ বছর বয়সী মুক্তা তার রুপা ফুফির কাছে বাংলা বর্ণমালা বই নিয়ে অ,আ থেকে ক,খ,গ,ঘ,ঙ এই সব অক্ষরগুলো উচ্চারণ শিখে।একবার একটি অক্ষর পড়লে তিনবার এদিক সেদিক তাকায় শিশু মুক্তা।তাকাবেইতো। কারণ ফুফী একটু পাশের রুমে মুক্তাকে এ,বি,সি,ডি লিখতে দিয়ে গেলে সে দৌতলায় নেমে তার সমবয়সী পরী,আরাফ,তানহাকে নিয়ে প্লাস্টিকের গোলাপী রঙের ডেকসি পাতিল খেলনা নিয়ে খেলতে বসে। পেন্সিল খাতা বই টেবিলেই ছড়িয়ে থাকে।এইতো সেদিন ১৫ই আগস্ট সকাল এগারোটায় মুক্তা তার দাদাকে বলে দাদুভাই আমি বেড়াতে যাবো তোমার সাথে।পায়জামা পাঞ্জাবি পরে তুমি কোথায় যাচ্ছ দাদা?আদরিনী সোহাগিনী শিশু নাতনীর প্রশ্নবোধক কনঠ শুনে দাদা বলে উঠলো,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু দিবস উপলক্ষে শোক দিবসের আলোচনা সভায় যাব।দাদার এইসব কথায় নাতনী কিছুই বুঝেনি।শুধু নাতনী দাদার পাঞ্জাবি টা ধরে রেখে বললো আমিও যাব সেখানে। বউমাকে উদ্দেশ্য করে দাদা বললো, বউমা “আমার নাতনীকে সুন্দর একটা জামা পরিয়ে দাও।” বলেই দাদা ঘরের চেয়ারে বসে পড়লো,মুহুর্তেই নাতনী সুন্দর জামা, জুতা, মেকআপ করে সেজে গুজে দাদার হাত ধরে বললো, চল দাদা। শিশু মুক্তা দাদাকে কখনো দাদা আবার কখনো দাদুভাই বলেই ডাকে। দাদা ভাবতেই পারছেন না নাতনীর আজকে এমন আবদার কেন? ভাবতে ভাবতে নাতনীর হাত ধরে দাদা রাস্তায় এসে একটা রিক্সা ভাড়া করে নাতনী কে কোলে বসিয়ে রওনা দিলো। বিআরটিসি স্টেশন রোড পেরিয়ে রিক্সা যখন নিউমার্কেট মোড়ে এল তখন রাস্তায় যানজট। নিউমার্কেটের প্রধান ফটকে দোতলায় সামনের দিকে বিরাট একটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি লাগানো আছে। পুলিশ যানজটের কারণে গাড়িগুলোকে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের রিক্সাও দাঁড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু ছবিটি সবার, দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। নাতনী মুক্তা চারদিকে তাকাচ্ছে। হঠাৎ মার্কেটের সামনে উপরে ঐ বঙ্গবন্ধুর বিশাল ছবিটি দেখে মুক্তা চিৎকার করে বলে উঠলো দাদা! দাদা! ওই বিরাট ছবিটি কার?
দাদা বললো, ঐটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। জাতির পিতা এখন কোথায় দাদু? আমি উনার সাথে কথা বলবো।
উনি তো বেচে নেই দাদু লক্ষী দাদু মনি। ওই শকুনের দল ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট গভীর রাতে জাতির পিতা সহ উনার পরিবারের সবাইকে গুলি করে হত্যা করেছে। ওরা হত্যা করেছিল তোমার চাইতে একটু ৩/৪ বছরের বড় শেখ রাসেলকে।
শেখ রাসেল কে দাদা?
শেখ রাসেল জাতির পিতার ছোট ছেলে।
এই জন্যেই কি শোক সভা দাদুভাই?
আর সেই জন্যইতো আজ জাতীয় শোক দিবস।আমরা ও শোক দিবসের শোক সভায় যাচ্ছি। রিক্সা ততক্ষণে দারুল ফজল মার্কেটের সামনে এসে গেছে। রিক্সা থেকে নাতনী কে নিয়ে নীচে নামতেই উল্টো দিক থেকে একটি মিছিল “জয় বাংলা” স্লোগান দিয়ে শোকসভায় আসলো। মিছিল দেখে শিশু মুক্তাও উচু করে বলে উঠল ‘জয় বাংলা’। 

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাসেল
পরবর্তী নিবন্ধছোট্ট সোনা রাসেল