মীরসরাইয়ে মিষ্টি আলুর ভালো ফলন

দামে খুশি কৃষক

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই উপজেলায় এবার মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরাও। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি এ আলু যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বিশেষ করে এই অঞ্চলের বড় হাট বড়দারোগারহাট ও মিঠাছরা বাজারে রেকর্ড পরিমাণ মিষ্টি আলু বিক্রি হয়েছে বলে স্বয়ং কৃষকরাই জানান। এবার মীরসরাই উপজেলায় মিষ্টি আলু চাষ হয়েছে প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে। আরো ৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে গোল আলু। স্থানীয় জাতের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের মিষ্টি আলুর চাষ করেছেন চাষিরা। তবে স্থানীয় জাতের আলুর ফলনই বেশি হয়েছে বলে জানান তারা।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যধাব, বিভিন্ন এলাকায় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয় মিষ্টি আলুর চারা বপন। ফাল্গুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে মিষ্টি আলু মাটির নিচে পরিপক্ক হয়। আর চৈত্র ও বৈশাখ মাস আলু তোলায় ব্যস্ত থাকে চাষিরা ও পরিবারের লোকজন। এবার চৈত্রের এই সময়ে অনেক আলু চাষিই এখন ব্যস্ত তাদের আলু তুলে হাটে নিতে। আগাম বৃষ্টি নেই, তাই আলু ক্ষেতের কোনো প্রকার ক্ষতিও হয়নি এবার। একসময় মিষ্টি আলুর রাজ্য হিসেবে পরিচিত ছিল কুমিল্লার বুড়িচং। এছাড়া চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এলাকা এগিয়ে ছিল আলু চাষে। এখন মীরসরাই এলাকা জুড়ে বাড়ছে আলু চাষ। সম্প্রতি খৈয়াছরা মাঠেও দেখা গেছে ক্ষেতজুড়ে চলছে মিষ্টি আলু তোলার উৎসব। রোদের তেজ উপেক্ষা করে পুরুষেরা কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে আলগা করছেন। কোথাও কোথাও মহিলারা ও আলু কুড়িয়ে এক জায়গায় স্তুপ করে রাখছেন। মিষ্টি আলু নিতে আসা ব্যাপারিরা ক্ষেতে বসেই আলু মেপে বস্তায় ভরে রাস্তার পাশে নিয়ে রাখছেন। কোনো কোনো কৃষক ভাল দাম পেতে নিয়ে যাচ্ছে বড়দারোগারহাট, বড়তাকিয়া কিংবা মিঠাছরা হাটে।
পশ্চিম খৈয়াছরা গ্রামের কৃষক আমিন রসুল জানান, ১০ গন্ডা জমিতে লাল আলু রোপণ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। বিক্রি করবেন প্রায় ৫০ হাজার টাকার আলু। নিজেদের পরিশ্রমের টাকা ছাড়াও কিছু লাভ থাকবে বলে আশা করছেন।
এদিকে বাজারে গোল আলুর দাম ২০ টাকা। কিন্তু মিষ্টি আলুর দাম ৪০ টাকা। সেই তুলনায় গোল আলু থেকে মিষ্টি আলুর দামও ভাল পাচ্ছেন কৃষকরা। একই গ্রামের কৃষক হোসেন মিয়া বলেন, এসব জমিতে বাদাম ও মিষ্টি লাউ করতাম। এতে লাভ হাতো না। পরে এ বছর আমারা মিষ্টি আলু চাষ করে লাভবান হয়েছি। আগে যেখানে বাদাম ও মিষ্টি লাউ করে লোকসান হতো, সেখানে এবার লাভের মুখ দেখে আমারা খুশি। আলু বিক্রি করতে আমাদের কোনো কষ্ট করতে হয় না। বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে জমি থেকে আলু কিনে নিচ্ছে, এতে আমাদের আরো সুবিধাই হচ্ছে।
মীরসরাই উপজেরা কৃষি সুপারভাইজার নুরুল আলম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মিষ্টি আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে দাম ভালো থাকায় কৃষকরা খুশি। ফলন ও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় আগামীতে আরো অনেক কৃষক এগিয়ে আসবে বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, হলুদ আর কমলা শাঁসযুক্ত এই মিষ্টি আলু পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রনে ভরপুর। সঙ্গে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের দাবি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরাও নিশ্চিন্তে খেতে পারেন এই আলু। এই আলুতে চোখ ভালো রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে, চামড়া ভালো থাকে, ত্বকের বয়স কমায়, ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে টমটম উল্টে স্কুলছাত্রের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধআমনের পর অনাবাদি জমিতে হচ্ছে গম