আমনের পর অনাবাদি জমিতে হচ্ছে গম

পরীক্ষামূলক চাষে ভালো ফলন

সাতকানিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

সাতকানিয়ায় নতুন ফসল গম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথম বারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে গম চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। আমন ধান কাটার পর সেচের অভাবে অনাবাদি পড়ে থাকা জমিতে গম চাষ করে ভালো ফলন পাওয়ায় মহাখুশি কৃষকরা। এতে কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন এলাকার কৃষকরা। আমন কাটার পর শুধুমাত্র সেচের অভাবে অনাবাদি থাকা উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিগুলো এখন গম চাষের আওতায় আনা যাবে বলে জানিয়েছেন তারা। শুধু তাই নয়, যেসব জমিতে সরিষা, ফেলন ও মৌসুমী শাক-সবজি চাষ করে সেসব জমিতে গম চাষ করে অধিক লাভের সুযোগ রয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ অঞ্চলে শীতের স্থায়ীত্ব কম হওয়ায় আবহাওয়া কিছুটা অনুপযোগী হলেও এখানকার মাটি গম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করা গমের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, এবারে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া, পুরানগড়, সোনাকানিয়া ও মাদার্শার ২০ জন কৃষককে বারি গম- ৩০ নামের উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় জানান, গত বছর সোনাকানিয়া ইউনিয়নের মির্জাখীলের এক কৃষক কবুতরকে খাওয়ানোর জন্য নিজ উদ্যোগে গম চাষ করেছিলেন। তখন তিনি ভালো ফলন পেয়েছেন। এবারে আমরা কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ২০ জন কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করেছিলাম। পরীক্ষামূলক চাষে কয়েকজন কৃষক বেশ ভালো ফলন পেয়েছেন। ফলে কৃষকরা গম নিয়ে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন। তিনি আরো জানান, যেসব অঞ্চলে শীত তুলনামূলক বেশি এবং শীতের স্থায়ীত্ব বেশি দিন থাকে সেখানে গমের ফলন ভালো হয়। সাতকানিয়া তথা চট্টগ্রামে শীত কিছুটা কম থাকে। ফলে এখানকার আবহাওয়া গম চাষের জন্য অধিক উপযোগী নয়। তবে এখানকার মাটি গম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। গমের জীবনকাল কম হওয়ায় শীতের শুরুতে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
কৃষি কর্মকর্তা জানান, কৃষকদেরকে যে জাতের গম বীজ দেয়া হয়েছে এগুলোর জীবনকাল মাত্র ১০০ থেকে ১০৫ দিন। আমন ধান কাটার পর সেচের অভাবে যেসব জমি অনাবাদি পড়ে থাকে সেসব জমিতে গম চাষ করলে কৃষকরা লাভবান হবেন। এ ছাড়া যে জমিগুলোতে ফেলন, সরিষাসহ নানা রকম শাক সবজি চাষ করে সেগুলোতে গম চাষ করলে অধিক লাভবান হবেন। তবে ২-৩ টা সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি জানান, বীজ রোপণের ১৭-২১ দিনের মধ্যে একটি সেচ ও সার প্রয়োগ করতে হবে। গমের শীষ বের হওয়ার সময় দ্বিতীয় সেচ এবং গমের দানা গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ে (ফুল থেকে ফলে রূপান্তর হওয়ার সময়) তৃতীয় সেচ নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে গমের ভালো ফলন মিলবে।
সাতকানিয়ার জনার কেঁওচিয়া মহুরী পাড়ার কৃষক মনু মিয়া বলেন, কৃষি অফিস থেকে আমাদের ৫ জন কৃষককে বিনামূল্যে কিছু গম বীজ ও সার দিয়েছিল। আমরা দুইজন কৃষক চাষ করেছি। অন্য তিনজন বীজের গমগুলো খেয়ে ফেলেছে। আমরা দুইজন প্রথম বারের মতো চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। আশপাশের জমিতে করা অন্যান্য ফসলের তুলনায় গমে অধিক লাভ হবে। তবে ঠিক সময়ে সেচ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরো জানান, শীতের শুরুতে আবাদ করতে পারলে ফলন আরো ভালো হবে। ধানের চেয়ে তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যে ফলন আসে। আমাদের এলাকায় অনেক জমি সেচের অভাবে অনাবাদি পড়ে থাকে এবং সামান্য কিছু শাক-সবজি আবাদ করা হয়। এ সব জমিতে পরিকল্পিতভাবে গম চাষ করলে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন। আমি আগামীতে আরো অধিক জমিতে গমের চাষ করবো। এলাকার আরো কিছু কৃষককে গম চাষের ব্যাপারে বলেছি, তারাও আগ্রহ দেখিয়েছেন।
একই এলাকার কৃষক হাছান আলী জানান, আমি প্রণোদনার গম পেয়ে অল্প জমিতে চাষ করেছি। ফলন খুব ভালো হয়েছে। প্রথমবার হিসেবে কখন সেচ দিতে হবে আর কখন সার প্রয়োগ করতে হবে তা ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারিনি। এ ছাড়া ফলন হবে কিনা সেই চিন্তা থেকে ঠিকভাবে পরিচর্যাও করিনি। তবুও ভালো ফলন হয়েছে। আমি আগামীতে আরো অধিক জমিতে গম চাষের চিন্তা করছি। আমন ধান কাটার পর জমি যখন খালি পড়ে থাকে তখন গম চাষ করলে কম সময়ে, কম খরচে ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভ হবে। আমার খেত দেখে এলাকার আরো কয়েকজন কৃষক আগামীতে গম চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন।
আহমদ নবী, আবুল কালাম ও মনির আহমদসহ কয়েকজন কৃষক জানান, আমাদের এলাকায় আবাদকৃত গমের ফলন দেখে মনে হচ্ছে তুলনামূলক উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিগুলোতে গমের আবাদ করা যাবে। আগামীতে আমরাও গম চাষের চিন্তা করছি। তবে সেচের জন্য এলাকায় কয়েটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলে সুবিধা হবে। অনেক জমি চাষের আওতায় আসবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে মিষ্টি আলুর ভালো ফলন
পরবর্তী নিবন্ধহাসপাতালে নারীর ঝুলন্ত লাশ