মীরসরাইয়ে ফসলি জমি ও বেড়িবাঁধে মাটি কাটার হিড়িক

গভীর রাতে শুরু, ভোরে শেষ

মীরসরাই প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৩১ মার্চ, ২০২২ at ১০:২৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে রাতের আঁধারে ফসলি জমি ও বেড়িবাঁধের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। বিভিন্ন ইটভাটা ও জায়গা ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এ মাটি। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কতিপয় দুর্বৃত্ত এ মাটি নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্নস্থানে।
সরেজমিনে গত সোমবার উপজেলার জোরারগঞ্জ থানাধীন ১নং করেরহাট ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডস্থ ঘোড়ামারা এলাকায় সড়কের পার্শ্ববর্তী এবং টিলার নীচের সমতল পতিত প্রায় ১ একর জমির মাটি কাটতে দেখা যায়। ঘটনাস্থলে মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত এস্কেভেটরটিও পাওয়া যায়। দেখা যায় জমির উত্তর ও পূর্ব প্রান্ত থেকে মাটি কাটা শুরু করা হয়েছে। রাত যখন গভীর হয় তখন মাটি কাটা শুরু হয় এবং ভোর বেলায় শেষ হয়। এর ফলে জমির পার্শ্ববর্তী সড়ক ও বাড়িগুলো বৃষ্টির পানিতে ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় রবিউল হকের বাড়ি প্রকাশ বাঙালি বাড়ির কয়েকজনের মালিকানাধীন ওই পতিত জমি। তারা পূর্ব পুরুষদের থেকে প্রাপ্ত এই জমি ভোগ দখল করে আসছেন। এক দশক আগেও এই জমিতে মৌসুমি বিভিন্ন ফসল আবাদ করা হতো। গত কয়েক বছর যাবত বর্ষা মৌসুমে সেখানে পানি জমে থাকায় তাতে আর ফসল করা সম্ভব হয় না।
সম্প্রতি গত কয়েকদিন যাবত ওই জমির মাটি রাতের আঁধারে এস্কেভেটর দিয়ে কেটে বিভিন্ন ইট ভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় আলী হোসেনের ছেলে শাহাদাতের নেতৃত্বে মাটি কাটা হচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান। তবে শাহাদাত মাটি কাটার সাথে জড়িত নন বলে দাবি করে বলেন, কে বা কারা মাটি কাটছে আমি তাও জানি না।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, মাটি কাটার বিষয়ে আমার অবস্থান জিরো ট্রলারেন্স। যে বা যারা মাটি কাটুক তাদেরকে আইনের আওতায় আসতে হবে। মাটি কাটার বিষয়ে আমাদের এমপি মহোদয়েরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে।
এ দিকে গত শুক্রবার রাতে উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট
এলাকায় ক্লোজার ড্যামর স্লোপ থেকে ঘর নির্মাণের জন্য রাতের আঁধারে এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ফেলা হয়। এ সময় সড়কের পাশে থাকা কয়েকটি পিলারও ভেঙে ফেলা হয়েছে। পরে খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে আনছার সদস্যদের পাঠানো হলে তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা করা হয় বলে অভিযোগ করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ প্রকৌশলী। এ ঘটনায় পানি উন্নন বোর্ডের পক্ষ থেকে ২৭ মার্চ স্থানীয় জোরারগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (১৬৬) করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নুরুন নবী জানান, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রথমে আনছার ও পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরে রবিবার মাটি কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেনী সোনাগাজী শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মানিক মিয়া বাদী হয়ে ওচমানপুর ও ইছাখালী ইউনিয়নের পাতাকোট, ভূঁইয়া গ্রাম ও বাঁশখালী গ্রামের মো. ফরহাদ, মো. রিয়াদ, মোবারক হোসেন পারভেজ ও মো. সাইফুল ইসলামসহ অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জোরারগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (১৬৬) দায়ের করেন।
এ বিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নুর হোসেন মামুন বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং উপজেলা প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো।
এ বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, মাটি কাটার বিষয়ে আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি কোথাও এ ধরণের ঘটনা ঘটলে খবর পাওয়া মাত্র আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বামী কারাগারে তিন অবুঝ শিশু রেখে স্ত্রী উধাও
পরবর্তী নিবন্ধগোলাগুলির পর উখিয়ায় ৬ কোটি টাকার ইয়াবা জব্দ