মা কে যেভাবে দেখেছি

মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরী (বাবু) | শনিবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

মাকে গিয়ে লিখতে গেলে আমার লিখনি কখনও শেষ হবে না। মায়ের কথা মনে পড়লেই অনেক স্মৃতি ভেসে উঠে। মা ছিলেন সাদা মনের মহীয়সী নারী। চুপচাপ স্বভাবের। মা দুঃসময়ে আমাদেরকে স্ব-যত্নে মায়ার বাঁধনে আগলে রেখেছিলেন। এত কষ্টের মাঝেও মা আমাদেরকে কষ্টের কথা বুঝতে দিতেন না। কষ্টগুলো মনের ভিতর চেপে রাখতেন। আমার মা ২০০৮ সালের ১৫ অক্টোবর বুধবার না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। আজ বাস্তব জীবনে এসে মায়ের স্মৃতি বড়ই নাড়া দেয়। মা ছিলেন আমাদের জন্য সারা জীবনের বট বৃক্ষের ছায়া। শত ব্যস্ততার মাঝেও ঘরে ঢুকলেই মাকে দেখলে মনটা ভালো হয়ে যেত। মা নেই যেন পুরো পৃথিবীটাই মরুভূমি। ঈদের সময় এখন আর মায়ের জন্য শাড়ী কিনতে হয় না। ঈদের নামাজ পড়ে ঘরে এসে মায়ের পদধুলি নিতে পারি না। এখন আর মায়ের কণ্ঠ শুনতে পাইনা। মনে পড়ে অফিস থেকে ফিরতে দেরী হলে মা বলতেন বাবা দেখ তুই আসবি বলে আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকি। এত দেরী হল কেন বাবা? বড় বড় চোখে মলিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ক্লান্ত সুরে বলা মায়ের এসব কথা প্রতিটি মুহূর্তে মনে পড়ে। কবি হাওয়ার্ড জনসনের ভাষায় ‘যে গৃহে মা নেই, সে গৃহের কোন আকর্ষণ নেই’। পৃথিবীর অন্য মায়ের মত আমার মাও অনন্য। আমাদের যে কোনো সাফল্যে মার আনন্দের সীমা থাকত না। আমার আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন পুরনের কথা শুনলে মা অনেক খুশী হতো। যখনিই মার কথা মনে পড়ে, মনে যখন খুব কষ্ট আসে, ছুটে যাই মায়ের কবরে। মার কবরের সাথে আমার সুখ দুঃখের ভাবনাগুলো শেয়ার করি। মা তোমার থেকে দূরত্বটা যতই বেড়েছে, ততো ভাল করে এই ব্যস্ত দুনিয়াটাকে চিনতে শিখেছি, ততো ভাল করে বুঝে গেছি মা তোমার গুরুত্বটা। অনেক ভালোবাসি তোমাকে মা। পৃথিবীর সব মা শান্তিতে থাকুন। বর্তমান সমাজে দেখা যায় আমরা অনেক তীর্থ স্থানে গিয়ে প্রচুর টাকা পয়সা খরচ করি পূণ্য লাভের আশায়। অথচ বৃদ্ধ মাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য পয়সার অভাব বোধ করি। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে মাকে বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধা আশ্রমে গিয়ে রেখে আসতে একটুও শঙ্কা বোধ করিনা। তাই বলি মা ছোট্ট একটি শব্দ, কিন্তু তার বিশালতা অসীম। সৃষ্টির সেই শুরু লগ্ন থেকে মধুর এই শব্দটি শুধু মমতার নয় ক্ষমতারও যেন সর্বোচ্চ আধার। তিনিই আমাদের গর্ভধারিনী মা। লেখক : আইনজীবী

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিনোদন ও শিশুতোষ পাতা একসাথে কেন?
পরবর্তী নিবন্ধইতিহাস কথা বলে