মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ ধরে রাখতে হবে

| শনিবার , ১৩ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৫৪ পূর্বাহ্ণ

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে একটা সুসংবাদ আমরা গণমাধ্যমের কল্যাণে পেয়েছি। জানা গেছে, প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর সরকারি ব্যবস্থাপনায় আবারও মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু করেছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি প্রথম দফায় ৫৩ জন কর্মী গেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল নামক রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার জিমাত জায়া এসডিএন কোম্পানিতে কাজে গেলেন এই কর্মীরা। ওই কোম্পানিতে নিয়োগ পাওয়া ১১০ জনের মধ্যে প্রথম দফায় ৫৩ জনের মালয়েশিয়ায় রওনা হওয়ার কথা জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটে তাদের মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা এর আগেই জানিয়েছিলেন বিএমইটির মহাপরিচালক শহীদুল আলম।
মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ২০১৬ সালে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়। পাঁচ বছর মেয়াদী এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয় ১০টি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে। কিন্তু অভিযোগ ওঠে প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে এজেন্সিগুলোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট’ করে দুই বছরে শ্রমিকদের ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে। এরপর ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে বাংলাদেশি কর্মীদের আর ভিসা দেয়নি মালয়েশিয়া। তবে আগে যারা ভিসা পেয়েছিলেন, তারা পরেও মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ পান। সরকারের তরফে নানা দেন-দরবার আর করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শ্রমিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেয় মালয়েশিয়া। এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গত জুনের শুরুতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান ঢাকা সফরের সময় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছিলেন, জুনের মধ্যেই কর্মী যাবে মালয়েশিয়ায়। কিন্তু তার কথা শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয়নি।
মালয়েশিয়ায় মোট কত কর্মী যেতে পারে- এ প্রশ্নের উত্তরে ওই সময় ইমরান আহমদ বলেছিলেন, সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী পাঁচ বছরে ৫ লাখ কর্মী নেওয়ার কথা। এর মধ্যে এ বছরই ২ লাখ নেওয়ার কথা। সে সময় তিনি মন্তব্য করেন, “আমাদের তো মনে হচ্ছে, এই বছরের মধ্যেই পাঁচ লাখ যাবে।”
অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা উপভোগ করছে, কেননা বর্তমানে দেশে কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। মালয়েশিয়াসহ আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জনশক্তি দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছে। দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে কর্মক্ষম তরুণের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা উপভোগ করছে। তাই মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি জনশক্তি রপ্তানির আশা প্রকাশ করেন তাঁরা। বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সুদীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, সংসদীয় গণতন্ত্রের চর্চা, বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম, বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারসহ নানা বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা আশাবাদী।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, ‘কয়েক বছর আগেও অবৈধপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে নৌকাডুবিতে বহু মানুষের প্রাণ গেছে। তখন মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের কারাগারেও স্থান হয় বহুজনের। অনেকে গহিন জঙ্গলে আফিম চাষের জন্য ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি হয়ে যায়। অনেককে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও ঘটে সে সময়। আবার ঝুঁকিপূর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ায় যেতে পারলেও অনেককে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অবৈধ অভিবাসী হিসেবে অনেককে পালিয়ে বেড়াতে হয়। ধরা পড়ার পর ঠাঁই হয় কারাগারে। কাটাতে হয় মানবেতর জীবন।’ এ অবস্থা উত্তরণে সরকারের পদক্ষেপগুলো প্রশংসার দাবিদার। বাংলাদেশ থেকে এখন যেভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী রপ্তানি হচ্ছে, তার নাম জিটুজি প্লাস পদ্ধতি, যা অত্যন্ত নিরাপদ বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন। বলা হচ্ছে, এখানে প্রতারণার কোনো সুযোগ নেই। এই পদ্ধতিকে আরো শক্তিশালী করতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে তার রপ্তানি বাড়াতে হবে। যত বেশি দক্ষতা আসবে আমাদের জনশক্তিতে, তত বেশি সুযোগ ঘটবে বাইরে পাঠাতে। তাতে প্রবাসী আয় বাড়বে এবং দেশের কোষাগার সমৃদ্ধ হবে। সরকারি পর্যায়ে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে