মার্কেটে শীতের পোশাক আসছেন ক্রেতারাও

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৯ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

প্রকৃতিতে এখন কার্তিক মাস। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল। সেই হিসেবে শীত ঋতুর বাকি আছে আরো এক মাসের বেশি। তবে বর্তমানে ভোরের দিকের হিমেল হাওয়া শীত ঋতুর উপস্থিতিই যেন জানান দিচ্ছে। বিশেষ করে শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলেই এই অনূভুতিটা বেশি। তাই ভোর রাতের দিকে গ্রামের কথা বাদ দিলে এমনকি শহরাঞ্চলেও কম্বলের মানুষের সাথে সখ্যতা যেন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এছাড়া শীতের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বর্তমানে মার্কেটগুলোতেও শীতবস্ত্র বিক্রি শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন অভিজাত মার্কেটের শো-রুম থেকে ফুটপাত পর্যন্ত সবখানেই এখন শীতবস্ত্রের দেখা মিলছে। ব্যবসায়ীরাও ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সেরে ফেলেছেন। বেচাবিক্রি এখন কিছুটা কম হলেও শীত বাড়ার সাথে সাথে বিক্রিও বাড়বে এমন আশা ব্যবসায়ীদের। গত বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে আশানুরূপ বেচাবিক্রি হয়নি বলছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল নগরীর নিউমার্কেট বিপণী বিতান, টেরিবাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, তামাকুমন্ডি লেইন ও রিয়াজুদ্দিন বাজারের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দোকান ও শো-রুমের কর্মচারীরা শীতের কাপড় থরেথরে সাজাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এছাড়া ক্রেতারাও এসে পছন্দের পণ্যটি দরদাম করছেন। পছন্দ হলেই কিনে নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়াতে দেখা যায় তাদের।
বিক্রেতা এম এম ইলিয়াছ উদ্দিন বলেন, শীত এখনো সেভাবে শুরু হয়নি। তাই খুচরা বিক্রির চেয়ে পাইকারী বিক্রি বেশি এখন। বিভিন্ন উপজেলা থেকে দোকানিরা এসে শীতের কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। রিয়াজুদ্দিন বাজারে আসা ক্রেতা নুসরাত নেওয়াজ মাহিন বলেন, শীতের সুয়েটার কিনতে এসেছি। শীত যদিও এখনো শুরু হয়নি। তবে মার্কেটগুলোতে প্রথমদিকে ভালো ভালো কিছু কালেকশন থাকে, তাই মূলত আসা।
জহুর হকার্স মার্কেটে কম্বল কিনতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী ইমাম উদ্দিন। তিনি বলেন, জহুর মার্কেটে কম দামে ভালো মানের কম্বল পাওয়া যায়। তবে বিক্রেতা দাম একটু বেশি হাঁকছেন।
ব্যবসায়ীদের জানান, মার্কেটে চীনা তৈরি ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায়। এছাড়া চামড়ার তৈরি জ্যাকেট ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে চীনা কম্বল আকার ভেদে এক হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশীয় শাল ও চাদর বিক্রি করছেন ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। বিদেশি ভালো মানের শাল চাদরের দাম পড়ছে ৫০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে। ভালো মানের সুয়েটার বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায় এবং উলের তৈরি সোয়েটার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ১ হাজার টাকায়।
মার্কেটে শীতের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে জহুর হকার্স মাকেট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ফজলুল আমিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা শীতের দারুণ সব কাপড় সংগ্রহ করেছেন। সামনে আরো ভালো ভালো কালেকশন আসবে। অনেক ব্যবসায়ী দেশের বাইরেরও বেশ কিছু শীতবস্ত্রও নিয়ে এসেছেন। ফলে মার্কেটে ক্রেতারা দেখে শুনে পছন্দের কাপড় কিনতে পারবেন। জহুর হকার্স মার্কেট এখন কেবল মধ্যবিত্তদের মার্কেট নয়। অনেক উচ্চবিত্ত লোক এখন জহুর হকার্স মার্কেট থেকে কেনাকাটা করছেন। এছাড়া শীত কেন্দ্র করে মার্কেটের আশপাশে বিশেষ করে ফুটপাতগুলোতেও শীতবস্ত্রের পসরা সাজিয়েছেন হকাররা। গত বছর করোনার কারণে ব্যবসায়ীরা শীতের বাজার হারিয়েছে। তবে এবার যেহেতু করোনার সংক্রমণ কমে গেছে, তাই আমাদের আশা ব্যবসায়ীরা এ বছর ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারবে।
রিয়াজুদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মাহাবুবুল আলম বলেন, রিয়াজুদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরের মতো এ বছরও প্রচুর শীতের কাপড় সংগ্রহ করেছেন। তবে এখনো শীতের বেচাবিক্রি ওইভাবে শুরু হয়নি। এই মাসের শেষ দিকে হয়তো শীত পড়া শুরু হবে, তখন জমজমাট বিক্রি শুরু হবে বলে আশা করি।
তামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ কবির দুলাল বলেন, এ বছর ব্যবসায়ীরা অনেক আশা নিয়ে শীতের কাপড় আমদানি করেছেন। আমাদের মার্কেটে পাইকারী ও খুচরা দুইভাবে বিক্রি হয়। বর্তমানে পাইকারী বিক্রির চাপ বেশি। খুচরাতেও বিক্রি হচ্ছে। পুরোদমে বিক্রি শুরু হতে আরো দুই তিন সপ্তাহ লাগতে পারে।
নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ সাগীর বলেন, প্রতি বছরই আমাদের প্রস্তুতি থাকে। তবে শীতের কাপড়ের ব্যবসা মৌসুমী। তাই এখানে ঝুঁকিও বেশি। গত বছর তো করোনার কারণে ব্যবসা হয়নি। এ বছর করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ নাকাল হয়ে পড়েছে। তাই ক্রেতা সমাগম কেমন হবে সেটি নিয়ে সংশয়ে আছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালী ও আনেয়ারায় পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধকথা বল, কথা বলি