মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

টুম্পা ভট্টাচার্য | শনিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২১ at ৮:৫১ পূর্বাহ্ণ

বেঁচে থাকতে আত্মনির্ভরশীল হতে একটা কাজ করতে কেউ যদি আপ্রাণ চেষ্টা করে একটা সুযোগ বা সাপোর্ট চায় তবে আপনারা সত্যিই ক’জন মানুষ স্বার্থহীন, বিনিময় কিংবা সুযোগ না খুঁজে শুধু মনুষ্যত্ববোধে সাপোর্ট করতে এগিয়ে আসবেন? ক’জন পারবেন নিঃস্বার্থভাবে কারোর উপকারে আসতে? লোক দেখানো ভালো মানুষ অনেক আছে কিন্তু পরিস্থিতিতে তাদের আসল রূপ দেখা যায়।এদেশেই শুধু মানুষকে মরে তাকে বুঝিয়ে দিতে হয় বাস্তবতা কি? কিন্তু কেন? আজকাল যেকোনো কাজ পেতে ক্ষমতা অর্থ কিংবা উচ্চ পর্যায়ের লিংক না থাকলে তাকে কোথাও কোনো সুযোগ দেয়া হয় না। আর যদি মেয়ে হয় তাহলে তো কোনো কথায় নেই!
সত্যি যদি আমরা বেঁচে থাকতে মানুষের পাশে মানুষ হয়ে পাশে থাকি তাহলে কাউকে মরে বুঝানোর দরকার হয় না। কিন্তু আমরা কারোর সংগ্রামে তাকে সাপোর্ট না করে বরং তার জীবন বৃত্তান্ত আর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কৌতূহলী হই আর তাকে নিরুৎসাহিত করি। না হয় তার থেকে সুযোগ খুঁজি! আর এসব কুৎসিত বাস্তবতা ফেইস করে মেয়েরা ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকে। আমাদের সমাজে একটা বদ্ধমূল ধারণা হলো মেয়েদের দায়িত্ব নেয়ার মতো বাবা ভাই কিংবা হাসবেন্ড থাকলে তাকে ঘরে বসে তাদের উপর খেতে হবে। কিন্তু কেন? তার যদি হাত পা বুদ্ধি বিবেচনা থাকে তাহলে তাকে প্রতিবন্ধীর মতো কেন থাকতে হবে? তার সদিচ্ছায় কেন কেউ পাশে থাকবে না? আমাদের সমাজের চোখ খোলাতে কতোজনকে মরে দেখিয়ে দিতে হবে? যে মেয়ের বাবা নেই, যার স্বামী ছেড়ে চলে গেছে কিংবা মারা গেছে অথবা ভাই নেই তাদের সংসার চালানোর সংগ্রামটা আমাদের চোখে পড়ে। দুঃখ বোধও করি। কিন্তু এমনও অনেক সংসার আছে যার সব থেকেও নিজ সম্মানের কথা ভেবে মানসিক অনেক নির্যাতন মেনে নিয়ে যাচ্ছে। বাবা মা পরিবারের কথা ভেবে, অনেক শিক্ষিত মেয়েরা বর্তমানে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করে যাচ্ছে! হ্যাঁ এটা অহরহ ঘটছে। না হয় একটা ডাক্তার মেয়েকে মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করতে হতো না। কিছু মাস আগেও এক শিক্ষিত মেয়ে একই কারণে মরলো। এ রকম অনেক উদাহরণ আছে। তবুও আমরা আমাদের মানসিকতা বদলায় না। মেয়েদের দুর্বল ভাবা হয় ঘরে বাইরে সব দিকে। তাই তাদের যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দেয়ার থেকেও তাকে কোনঠাসা করা হয় বিভিন্ন অযুহাতে।
অন্যদিকে পরিবার সবসময় মেয়েদের মেনে নেয়ার বোঝা চাপিয়ে দেয় বলে মেয়েরা পরিবারের সম্মান রক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করে। কিন্তু দিন শেষে সেই মেয়েকেই সবদিকে কথা শুনতে হয়। মা বাবারা মেয়েদেরকে সার্টিফিকেটের ওজনে ভারি করে কিন্তু নিজ যোগ্যতা আর মনোবলে ভারী করে না বলে আজকে বেশিরভাগ মেয়েরা ডিপ্রেশন কিংবা মানসিক অবসাদে ভুগছে। এই কারণে অনেকের জীবন আলো নিভে যায় একটু একটু করে।
তাই দয়া করে মা বাবারা মেয়েদেরকে উচ্চ পর্যায়ের স্বামীর স্বপ্ন না দেখিয়ে নিজ যোগ্যতায় উচ্চ ক্যারিয়ার গড়তে সাপোর্ট দিন স্বপ্ন দেখান। একটা ছেলেকে যে মনমানসিকতা নিয়ে মানুষ করেন ঠিক সেভাবে একটা মেয়েকেও মানুষ করেন। আর ভুলেও অর্থ সম্পদের লোভ দেখাবেন না কিংবা সন্তানকে অর্থ সম্পদের বাহাদুরি শেখাবেন না। তাতে আপনার সন্তান অমানুষ হওয়ার সুযোগ পাবে বেশি। তার সম্পদ তাকে তৈরি করতে উৎসাহ দিন এতে করে সে বুঝবে ইনকাম করা কিছু অর্জন করা কতো কষ্টের। যার মূল্য সে নিজেই বুঝবে। আর সমাজবাসী বন্ধুরা কাউকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে না দিয়ে বরং তাকে সাপোর্ট করুন। বাঁচার জন্য জায়গা দিন যাতে আমরা একটা সুন্দর দিন সামনে পায়। না হয় করোনা নয় তার থেকে বড় গজব এসে সব শেষ করে দিতে সময় বেশি লাগবে না। হাজার জনের দরকার নেই একজনও যদি এই কথাগুলো মর্ম বুঝতে পারে, একজনও যদি মানুষের পাশে দাঁড়াতে উৎসাহিত হয় তবেই এই লেখার সার্থকতা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটিকটক অসুস্থতায় মানসিক পরিবর্তন
পরবর্তী নিবন্ধপদ পদবী প্রতিষ্ঠানের সমূহ ক্ষতি