মানবিক গুণের চর্চা হোক

জেসমিন আরা জেসী | শুক্রবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

‘সফল’ এবং ‘ভালো’ শব্দ দুটি কি সমার্থক অর্থ বহন করে? সমাজে প্রশংসার দাবীতে কোনটার পাল্লা ভারী? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা ভালো, গুণী ছেলে- মেয়ে বলতে আখ্যায়িত করি তাদেরকেই যারা প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলে এগিয়ে। যারা খুব মেধাস্পন্ন তাদের উদাহরণ টানি নিজ ঘরের ছেলে- মেয়েদের সামনে। মেধাবী হওয়া বা মেধার চর্চা করা অবশ্যই একটা গুণ তবে এটি ভালো গুণগুলোর মধ্যে একটি কিন্তু তা কোনভাবেই একমাত্র মাপকাঠি নয়। বর্তমান যুগে, বিশেষ করে আমাদের সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফলের যে প্রতিযোগিতা চলছে তাতে অন্যান্য সব গুণ বিলীনের পথে। সহনশীলতা, সহিষ্ণুতা, আবেগ-অনুভূতি তথা মানবিকতা উপেক্ষিত এক সমাজ তৈরি হতে চলেছে। অন্য সব গুণ আজ ধুলিতে চাপা পড়ছে। সব শিশুদের আমরা ভালো রেজাল্ট করার পেছনেই কেবল ঠেলে দিচ্ছি। তাকেই ‘ভালো’ বলে স্বীকৃতি দিচ্ছি যার প্রাতিষ্ঠানিক রেজাল্ট এ প্লাস বা তথাকথিত গোল্ডেন এ প্লাস। পরিবারে শিশুরা দিনে দিনে হয়ে উঠছে আত্মকেন্দ্রিক, কিছুটা স্বার্থপরও বটে। তারা কারো সাথে মিশে না, মিশতে চাইও না। কোন আত্মীয় স্বজন বা প্রতিবেশির বাসায় যাওয়াতো দূরে থাক, বাসায় কোন গেস্ট আসলে দরজা বন্ধ করে সৌজন্যতাটুকু প্রকাশও করতে আসে না। কোন নিকট আত্মীয়ের অসুস্থতার খবরেও তাদের অন্তরে টান পড়ে না। সব কিছুতে অনীহা তাদের। সঙ্গী কেবল ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, টিউটর, কোচিং আর গুটি কয়েক বন্ধু- বান্ধব। এই হলো তাদের গণ্ডী। বাসায় পরিবারের সকলে মিলে একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করা, আলাপ করা বা আড্ডা দেওয়া এসবের বাস এখন কল্পনার জগতে। দিনে দিনে আমরা কেবল আবেগশূন্য যন্ত্রমানব তৈরি করে চলেছি। এভাবে চলতে থাকলে দেশের,দশের প্রয়োজনে আমরা কি একজনও দেশপ্রেমিক কিংবা সুনাগরিক পাব? মাঝে মাঝেই ভাবনাতে আসে,পঞ্চাশ বছর আগে এখনকার এমন জেনারেশন থাকলে দেশের স্বাধীনতা কি আসতো? সন্দিহান! তাই মেধাচর্চার পাশাপাশি মানবিকগুলোর চর্চা খুবই জরুরি। সফলতাই যেন একমাত্র মুখ্য বিষয় না হোক, সার্বিক গুণের চর্চিত ক্ষেত্র হয়ে উঠুক আমাদের পরিবার, আমাদের সমাজ। সুশোভিত হোক, সুরভি সমেত বাগান হয়ে উঠুক আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি।
লেখক : কবি-শিক্ষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাম্বিয়ার জাতীয় দিবস
পরবর্তী নিবন্ধবাংলা ভাষার প্রচলন হোক সর্বস্তরে