মানকুমারী বসু: কবি ও সমাজ সংস্কারক

| রবিবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:০৪ পূর্বাহ্ণ

কবি মানকুমারী বসু। বাংলাদেশে সর্বজনবিদিত অন্যতম কবি ও সমাজ সংস্কারক। আজ তার ৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকী।
১৮৬৩ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোহর জেলার কেশবপুর থানার সাগরদাঁড়িতে তার জন্ম। পিতা আনন্দমোহন দত্ত ও মাতা শান্তমণি। আনন্দমোহন দত্ত ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্তের পিতৃব্য রাধামোহন দত্তের পুত্র। ১৮৭৩ সালে দশ বছর বয়সে তৎকালীন সরকারের নামজাদা ডেপুটি ম্যাজিসেট্রট রাসবিহারী বসুর পুত্র মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র বিধুশঙ্কর বসুর সাথে মানবকুমারীর বিবাহ হয়। কিন্তু ১৮৮২ সালে বিবাহের মাত্র নয় বছর পরে একমাত্র কন্যা সন্তান (প্রিয়বালা) নিয়ে মানকুমারী বিধবা হন। স্বামীর মৃত্যুবেদনায় ব্যথিত মানকুমারী স্বামীর বিয়োগব্যথা ভুলে থাকার জন্য এবং স্বামীকে স্মরণযোগ্য করে রাখার জন্য সাহিত্য সাধনায় মনোনিবেশ করেন। তার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘প্রিয়প্রসঙ্গ’ ১৮৮৪ সালে প্রকাশিত হয়। অন্তঃপুর শিক্ষার জন্য শিক্ষয়িত্রী, পল্লীগ্রামে স্ত্রীচিকিৎসক ও ধাত্রীর আবশ্যকতা বিষয়ে এবং সমাজের দুর্নীতি ও কুসংস্কার নিবারণের জন্য কলম ধরেন মানবকুমারী। এসব বিষয়ে যে সমস্ত প্রবন্ধ রচনা করেন কয়েকটি পাঠক সমাজে বিশেষ আদৃত ও পুরস্কৃতও হয়। তিনি ‘বামাবোধিনী’ র লেখিকা শ্রেণীভুক্ত ছিলেন। কবিতা ছাড়াও গল্প প্রবন্ধ রচনাতেও তিনি সিদ্ধ হস্ত ছিলেন। তার সাহিত্য প্রতিভার জন্য আমৃত্যু ভারত সরকারের বৃত্তি লাভ করেন। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ দুর্লভ সম্মানে ভূষিত হন। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হলো, ‘প্রিয় প্রসঙ্গ’ (১৮৮৪), ‘বিভূতি’ (১৯২৪), ‘শুভ সাধনা’(১৯২৪), ‘কাব্যকুসুমাঞ্জলি’(১৯৮৩), ‘কনকাঞ্জলি’, ‘পুরাতন ছবি’(১৯৩৬), ‘বাঙালি রমণীদের গৃহকর্ম’(১৮৯০), ‘বিবাহিতা স্ত্রীলোকের কর্তব্য’(১৮৯০), ‘বীরকুমারবধ কাব্য’(১৯০৪), ‘বনবাসিনী’ (১৮৮৮) ও ‘সোনার শাঁখা’(১৯২৬)। মানকুমারী বসু ‘রাজলক্ষ্মী’, ‘অদৃষ্টচক্র’, এবং ‘শোভা’ গল্পের জন্য হেমেন্দ্রমোহন বসু প্রবর্তিত ‘কুন্তলীন পুরস্কার’ লাভ করেন । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ১৯৩৯ সালে ‘ভুবনমোহনী সুবর্ণপদক’ এবং ১৯৪১ সালে ‘জগত্তারিণী সুবর্ণপদক’ দানে সম্মানিত করে। মানকুমারী বসু ১৯৩৭ সালে চন্দননগরে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের ‘কাব্যসাহিত্য’ শাখার সভাপতিত্ব করেন। ১৯৪৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর খুলনায় তিনি তাঁর মেয়ের বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধহুটহাট পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা মোটেই কাম্য নয়