মাদরাসায় হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পড়ানোর উদ্যোগ

আজাদী অনলাইন | বুধবার , ৩ মার্চ, ২০২১ at ৭:৩৯ অপরাহ্ণ

ভারতের নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির আওতায় দেশটির শতাধিক মাদরাসায় গীতা, বেদ বা রামায়ণের মতো হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংস্থা জানিয়েছে, ‘প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান ও পরম্পরা’ নামে নতুন একটি বিষয় চালু করে তৃতীয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রদের এগুলো পড়ানো হবে।

তবে দেশের শিক্ষাবিদরা অনেকেই এই পদক্ষেপে চিন্তিত, এমন কী মাদরাসার শিক্ষকরাও এর আসল উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য যুক্তি দিচ্ছে, দেশের এই প্রাচীন ঐতিহ্যকে মাদরাসাগুলোতেও ছড়িয়ে দেওয়াতে কোনও ভুল নেই – বরং এতে সব ভারতীয়ই লাভবান হবেন।

ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বশাসিত সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ওপেন স্কুলিং বা এনআইওএস, তারাই দেশের নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাস্তবায়ন করছে।

এনআইওএস সম্প্রতি ‘ভারতীয় জ্ঞান পরম্পরা’ নামে ১৫টি কোর্স বা শিক্ষাক্রম তৈরি করেছে – যার আওতায় বেদ, ইয়োগা, রামায়ণ, ভাগবত গীতা, সংস্কৃত ভাষা, পাণিণির গাণিতিক সূত্র ইত্যাদি নানা বিষয় রয়েছে।

সেই স্টাডি মেটেরিয়াল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে গিয়ে দেশের শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল বলেন, আমাদের বেদ-পুরাণ-উপনিষদ যে সংস্কৃতির শিক্ষা আমাদের দিয়েছে, তা অমূল্য। এই সুফলকে আমরা মাদরাসাগুলোতে, এমন কী দেশের বাইরেও ভারতীয়দের কাছে ছড়িয়ে দিতে চাই। ফলে এনআইওএসের এই পদক্ষেপকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। খবর বিবিসি বাংলার।

কিন্তু এই পদক্ষেপ মাদ্রাসাগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়ে শিক্ষাবিদরা অনেকেই রীতিমতো সন্দিহান।

দিল্লিতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক অমরিন্দর আনসারি যেমন বলছিলেন, প্রথমত মাদ্রাসাগুলো কিন্তু সংগঠিত শিক্ষা খাতের ভেতরে পড়ে না। সেখানে একটা বহুত্ববাদী সংস্কৃতির দেশে এরকম কিছু চালু করতে গেলে সেটা কিন্তু জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হিসেবেই দেখা হবে। মাদ্রাসাগুলোর স্বশাসনেরই বা কী হবে?

হ্যাঁ, বেদ-গীতা-রামায়ণের বদলে যদি ‘ভারতীয় ধর্ম’ বলে একটা বিষয় চালু করা হত, যেখানে দেশের সব ধর্মের শিক্ষাই থাকবে, সেটা হয়তো মেনে নেওয়া যায়। মাথায় রাখতে হবে, ধর্ম আর ধর্মগ্রন্থ কিন্তু দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়”, বলছিলেন ড: আনসারি।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বভারতীয় নেতা সুরেন্দ্র জৈন আবার সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তি দিচ্ছেন, গীতা-রামায়ণ-বেদকে আসলে শুধু হিন্দু ধর্মগ্রন্থ হিসেবে দেখাটাই ভুল।

ড: জৈন বিবিসিকে বলছিলেন, এগুলোকে শুধু হিন্দুদের বলে চিহ্নিত করাটা দুর্ভাগ্যজনক – কারণ এই গ্রন্থগুলো বিশ্বজনীন মানবতার কথা বলে। আমরা মনে করি, এই গ্রন্থগুলো যে মূল্যবোধের শিক্ষা দেয় তা পড়ানোটা ভারতে বসবাসকারী প্রত্যেকের জন্য বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারাবন্দী নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে নগর ছাত্রদলের বিক্ষোভ
পরবর্তী নিবন্ধবেতন বাড়ানোর বিষয়ে গালি দেয়ায় সাতকানিয়ার আবদুল হক মিঞাকে হত্যা