মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মাদক ব্যবসা!

নিয়ম মানছে না অনেক প্রতিষ্ঠান আগ্রাবাদে একটি সিলগালা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৮ নভেম্বর, ২০২০ at ৯:৪০ পূর্বাহ্ণ

মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নামে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে সাইনবোর্ড সর্বস্ব অনুমোদনহীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মাদকাসক্তদের সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার নজির কম; বরং এসব কথিত নিরাময় কেন্দ্র মাদক কেনাবেচা ও সেবনের নিরাপদ ঘাঁটি বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট লোকজনকে ম্যানেজ করে চলছে এগুলোর কার্যক্রম। সেবা দেয়া তো দূরের কথা, রোগী আটকে টাকা আদায় ও নির্যাতনের অভিযোগ আছে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। তবে আশার কথা হলো- দেরিতে হলেও এসব অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। গতকাল অনুমোদনহীন এমন একটি মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র সিলগালা করে দিয়েছে অধিদপ্তর। তবে অভিযানের সময় প্রতিষ্ঠানটির মালিক কৌশলে পালিয়ে যান।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে মাদকাসক্তি পরামর্শ-নিরাময়-পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা বা সুষ্ঠু পরিচালনার লক্ষ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। নিরাময় কেন্দ্রগুলো পরিচালনার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নেওয়ার কথা। কিন্তু তা অনেকেই করছেন না। মানছেন না বিধিমালাও। বিধিমালার ৪ (খ) ধারায় বলা হয়েছে, নিরাময় কেন্দ্র সুরক্ষিত পাকা বাড়িসহ আবাসিক এলাকায় হতে হবে এবং এতে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের সুবিধাসহ নিরিবিলি সুন্দর পরিবেশ থাকতে হবে। (খ) ধারায় ৫ম পৃষ্ঠার ১ম কলাম
বলা হয়েছে, ওই সব কেন্দ্রে একজন রোগীর জন্য গড়ে কমপক্ষে ৮০ বর্গফুট জায়গা থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষিত ব্যবস্থা থাকতে হবে। তা ছাড়া বহুতল ভবনের তৃতীয় তলা বা তার চেয়ে ওপরের তলা হলে ওঠানামার জন্য লিফটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। (গ) ধারায় বলা আছে, প্রতি ১০ জনের বিছানার জন্য পৃথক একটি টয়লেট, পানীয় জলের ব্যবস্থাসহ কমপক্ষে একজন মনোরোগ চিকিৎসক (খণ্ডকালীন বা সার্বক্ষণিক), একজন চিকিৎসক, দুজন প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নার্স বা বয়, একজন সুইপার বা আয়া এবং জীবন রক্ষাকারী উপকরণ ও অত্যাবশ্যক ওষুধপত্র থাকতে হবে। এছাড়া প্রতি রোগীর জন্য একটি করে খাটসহ খাটের পাশে লকার বা টেবিল থাকতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু কেউ এসব আইন মানছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে গতকাল ১৭ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকার ২৯ নম্বর সড়কে ‘মন’ নামে একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে সেটি সিলগালা করে দিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (চট্টগ্রাম-মেট্রো) মো. রাশেদুজ্জামান জানান, মাদক নিরাময় কেন্দ্রটির স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো লাইসেন্স নেই। শুধুমাত্র সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে তারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছিল। সেখানে কোনো ডাক্তার নেই। মালিক মো. ইমরান অভিযানের খবর পেয়ে আগেই পালিয়ে যান। তিনি আরো বলেন, অভিযানের সময় আমরা সেখানে ১২ জন রোগী পেয়েছি। এদের মধ্যে মাদকাসক্ত নন এমন আছেন অন্তঃত তিনজন! ৬০ বছরেরও বেশি বয়সী শাহ আলম নামে একজনকে পেয়েছি। ভাইদের সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে সেখানে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। একজন কিশোরকে পেয়েছি, সে সিগারেটও খায় না। এলাকায় চুরি-চামারি করে, বাবা তাকে নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করে দিয়েছে। এভাবে তো একটা মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র চলতে পারে না। আমরা ১২ জনকে উদ্ধার করে তিনজনকে তাদের পরিবারের জিম্মায় দিয়েছি। বাকি ৯ জনকে নগরীর নাসিরাবাদে সরকারি বিভাগীয় মাদকসাক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। আজ ১৮ নভেম্বর বুধবারও অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাকিবকে হত্যার হুমকিদাতা গ্র্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬