মাত্র সাড়ে ছয় হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ

পূরণ হয়নি প্রত্যাশা।। লবণাক্ততাই কাল হলো

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৮ মে, ২০২১ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে প্রত্যাশিত ডিম ছাড়েনি মা মাছ। দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর গতরাতে ডিম ছাড়লেও তা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। ডিম সংগ্রহকারী এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার মানুষের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ভরা জোয়ারের লবণাক্ততাই হালদার জন্য কাল হয়েছে বলে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের।
এবার হালদা নদী থেকে সর্বসাকুল্যে সাড়ে ছয় হাজার কেজির মতো ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে চূড়ান্ত হিসেবের জন্য আগামী রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মন্ত্রণালয়ের গঠিত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি আগামী রোববার হালদা থেকে এবার সংগৃহীত ডিমের ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হালদা নদীতে এবার মাছ ডিম ছাড়ার ব্যাপারে বড় বেশি আশাবাদী ছিল প্রশাসন। হালদা দূষণ রোধে নেয়া নানা পদক্ষেপের ফলে এবার গতবছরের চেয়ে বেশি ডিম ছাড়বে বলে আশা করা হয়েছিল। গতবছর রেকর্ড পরিমাণ ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। কিন্তু এবার মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ডিম সংগ্রহকারীদের সব আশা ধুলিসাৎ করে দিয়েছে। ইয়াসের জোয়ারের পানি হালদা প্লাবিত করায় নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ বহুগুণ বেড়ে যায়। হালদা নদীতে বুধবার পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেখানে সহনীয় লবণাক্ততার পরিমাণ ১ পিপিটি। তবে সেখানে দেখা গেছে ৩৬.৯ পিপিটি। সহনীয় মাত্রার চেয়ে ৩৬ গুণ বেশি লবণাক্ততা ডিম ছাড়ার জন্য যথেষ্ট প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে। এতে মঙ্গলবার রাত এবং বুধবার সকালে দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়া হলেও মা মাছ ডিম ছাড়ার পরিবেশ পায়নি। পরে বুধবার রাত দুইটা নাগাদ মা মাছ ডিম ছেড়ে দেয়। হালদা পাড়ে অপেক্ষমাণ কয়েক হাজার ডিম সংগ্রহকারী রাতেই ডিম সংগ্রহ করলেও শেষ পর্যন্ত কারোই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ধারণার চেয়ে বহু কম ডিম সংগৃহীত হয়েছে। শুধুমাত্র লবণাক্ততার কারণেই মাছ ডিম ছাড়েনি উল্লেখ করে সূত্র বলছে, হালদায় লবণাক্ততা যে পর্যায়ে গিয়েছিল তাতে ডিম ছাড়ার কোনো পরিবেশই মা মাছ পায়নি। তবুও বাধ্য যে পরিমাণ ডিম ছেড়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো জানায়, এবার হালদার মা মাছ সংকটে ছিল। উজানে বাঁধ এবং বৃষ্টি না হওয়ায় জো চলে গেলেও ডিম ছাড়তে পারেনি। একেবারে শেষ সময়ে এসে ডিম ছাড়লেও তা নিতান্তই কম। তবে আরো কিছু ডিম ছাড়তে বলে আশাবাদী হালদা পাড়ের লোকজন।
গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবার হালদা নদীতে ৬৫০০ কেজি ডিম সংগৃহীত হয়েছে। অথচ এবার ৩০ হাজার কেজিরও বেশি ডিম সংগৃহীত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল। গতবছর ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম পাওয়া গিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো জানিয়েছে, এক কেজি ডিমে আড়াই লাখের মতো রেনু পাওয়া যায়। আগামী রোববারের মধ্যে গতকাল সংগৃহীত ডিমের রেণু ফোটানো সম্পন্ন হবে। হালদা নদীর এবারকার ডিমের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের গঠিত একটি কমিটি ওইদিন বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিতে মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও হালদা গবেষক অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলী এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষেণা ইনস্টিটিউটের একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গতবছর হালদা থেকে ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। যা ছিল ২০০৬ সালের পর সর্বোচ্চ। ২০০৬ সালে হালদা থেকে ডিম পাওয়া গিয়েছিল ৩২ হাজার ৭২৪ কেজি। ২০১৯ সালে ৭ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে এক হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে মাছ পুরোমাত্রায় ডিম ছাড়েনি। মাত্র ৭৩৫ কেজি নমুনা ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৩ সালে ৬২৪ কেজি এবং ২০১২ সালে এক হাজার ৬০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল।
হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল ১৬৮০ কেজি ডিম পাওয়া যায় হালদায়। তার আগের বছর ২ মে নমুনা ডিম মেলে ৭৩৫ কেজি। ওই বছর তিনবার নমুনা ডিম দিলেও আর ডিম ছাড়েনি মা মাছ। গতকাল দিনভর অপেক্ষমাণ ডিম সংগ্রহকারীদের মাঝে তীব্র হতাশা পরিলক্ষিত হয়েছে। গতকাল প্রায় ৩৫০টি নৌকা নিয়ে দেড় হাজারেরও বেশি ডিম সংগ্রহকারী নির্ঘুম রাত কাটিয়ে ডিম সংগ্রহ করেছেন। তাদের অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করলেও আজ ঝড়বৃষ্টি হলে মাছ দ্বিতীয় দফায় ডিম ছাড়তে পারে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচীন থেকে কেনা হবে দেড় কোটি ডোজ টিকা
পরবর্তী নিবন্ধটিকায় কোভিড প্রতিরোধী সক্ষমতা কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে