টিকায় কোভিড প্রতিরোধী সক্ষমতা কয়েক বছর স্থায়ী হতে পারে

নতুন দুই গবেষণার তথ্য

| শুক্রবার , ২৮ মে, ২০২১ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার পর অন্তত এক বছর দেহে এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা বজায় থাকে, সম্ভবত তা আমৃত্যুও হতে পারে, নতুন দুটি গবেষণার ফলাফল এমন তথ্যই জানাচ্ছে। দুটি গবেষণাতেই দেখা গেছে, কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠার পরে এক ডোজ টিকা নিয়েছেন এমন বেশিরভাগ মানুষেরই বুস্টার ডোজ নেওয়ার দরকার হবে না। টিকাগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হননি তাদের ক্ষেত্রে হয়তো দ্বিতীয় ডোজ নিতে হতে পারে। গবেষণার ফল থেকে এটাও দেখা গেছে যে, একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী আবারও সংক্রমিত হতে পারেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরেও যাদের দেহে প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। খবর বিডিনিউজের।
উভয় গবেষণা প্রতিবেদনেই ওইসব মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়েছে যারা এক বছর আগে করোনাভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন। এই ভাইরাসকে চিনে নেওয়া কোষগুলো অস্থিমজ্জায় থাকে এবং যখন দরকার তখন অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করতে পারে- গত সোমবার বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ন্যাচার এ প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য মিলেছে।
অন্য গবেষণাটিতে দেখা গেছে, দেহে প্রাথমিক সংক্রমণের পর ‘মেমোরি বি’ নামের কোষগুলো করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অন্তত ১২ মাস পর্যন্ত পরিপক্ক ও শক্তিশালী হতে থাকে। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভ্যানিয়ার ইমিউনোলজিস্ট স্কট হেনসলে বলেন, সার্স-কোভ-২ এর সংক্রমণে অথবা টিকা নেওয়ার কারণে এর বিরুদ্ধে দেহে যে প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে ওঠে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়- সামপ্রতিক গবেষণাগুলোর এমন ফলাফলের সঙ্গে এই গবেষণাগুলোর ফলাফলও সঙ্গতিপূর্ণ। এই দুটি গবেষণাই সম্ভবত করানাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে ওঠা নিয়ে যে ভীতি তা দূর করতে সহায়ক হবে। একটি আশঙ্কা রয়েছে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মানবদেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা সাময়িক হতে পারে, যেমনটি হয়ে থাকে সাধারণ সর্দি-জ্বরের ভাইরাসের ক্ষেত্রে। তবে ওইসব ভাইরাস কয়েক বছরের ব্যবধানে উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়মিত বদলাতে থাকে, জানান হেনসলে। তিনি বলেন, আমরা বারবার সাধারণ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হই কারণ প্রতিরোধ সক্ষমতা নয় বরং আমাদের জীবনকালজুড়ে এসব ভাইরাস বিবর্তিত হতে থাকে।
মানবদেহে কোষের স্মৃতির পরিপক্কতার ওপর পরিচালিত গবেষণা দলের প্রধান রকফেলার ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের ইমিউনোলজিস্ট মাইকেল নুজেনসাইগ জানান, সার্স-কোভ-২ এর সংক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় দেহে যে ‘মেমরি বি’ কোষ সৃষ্টি হয় এবং টিকার মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয় সেগুলো এমনকি ওই ভাইরাসের অন্যান্য ধরনের বিরুদ্ধেও সক্রিয় থাকে এবং দেহে বুস্টার ডোজের চাহিদাও থাকে না। তিনি বলেন, যেসব মানুষ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন অথবা এর টিকা গ্রহণ করেছেন, তাদের প্রতিক্রিয়া খুবই ভালো, খুবই চমৎকার অ্যান্টিবডি সেট দেহে গড়ে উঠেছে, কারণ তাদের অ্যান্টিবডিরও বিবর্তন হচ্ছে। আমি আশা করছি যে এগুলো দীর্ঘ সময় থাকবে।
বিশেষজ্ঞরা সবাই একমত যে, যারা কখনোই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হননি তারা কোভিড আক্রান্তদের মতো প্রতিরোধ সক্ষমতা অর্জন করতে পারবেন না। কারণ, একটি জীবন্ত ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা আর একটি একক ভাইরাল প্রোটিনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার অভিজ্ঞতা এক না। এবং যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডির পরিপক্কতা অর্জনে ছয় থেকে ১২ মাস সময় লাগবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাত্র সাড়ে ছয় হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ
পরবর্তী নিবন্ধমানব পাচারের অভিযোগ সীতাকুণ্ডে দুই ভাই আটক