মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুরোদমে চালু করতে চার হাজার কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সদ্য উত্থাপিত বাজেটে দুটি পৃথক প্রকল্পের আওতায় এই টাকা বরাদ্দ করা হয়। বন্দরটি পুরোদমে চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়ে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ–জি) ইনিশিয়েটিভ ঘোষণার প্রেক্ষিতে কঙবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে জাপানী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এখানে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এই বন্দর প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলছে। ইতোমধ্যে মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাঁচামাল খালাসের জন্য যে চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে তার পাশে ১০০ মিটার বাড়তি সম্প্রসারণ করে বাণিজ্যিক বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ কয়লা খালাসের জন্য আড়াইশ’ মিটার প্রস্থ এবং ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ যে চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে তা বর্তমানে ৩৫০ মিটার প্রস্থ এবং ১৪.৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চমৎকার একটি চ্যানেলে পরিণত হয়েছে। ১৬ থেকে ১৭ মিটার ড্রাফটের এই চ্যানেলে অনায়াসে ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে সাড়ে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ চ্যানেলটিতে ভিড়ানো হয়েছে। জাহাজটিতে ৬৫ হাজার ২৫০ টন কয়লা ছিল। এই বন্দরে অনায়াসে এক লাখ টন পণ্য বোঝাই জাহাজ বার্থিং দেয়া সম্ভব হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে। জোয়ার ভাটার বাঁধা না থাকায় এই চ্যানেলটিতে রাতে দিনে চব্বিশ ঘণ্টা যখন তখন জাহাজ ভিড়ানোর সুবিধা থাকায় বাংলাদেশ গভীর সমুদ্র বন্দরের সুফল পাবে।
এখানে বন্দর উন্নয়নের পাশাপাশি মাতারবাড়ি থেকে চট্টগ্রাম–কঙবাজার মহাসড়ক পর্যন্ত চার লেনের রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে বন্দরের সাথে সড়ক যোগাযোগেও প্রত্যাশিত বিপ্লব ঘটে। বন্দরের জেটি নির্মাণ হলেও সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত না হলে পুরো সুফল মিলবে না, আবার সড়ক যোগাযোগ হলেও বন্দর না হলে খুব একটা লাভ হবে না। এক্ষেত্রে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক যোগাযোগের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে অপরদিকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প। মাতারবাড়ি বন্দরের উন্নয়নের জন্য তাই সরকার দুইটি প্রকল্পকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রেখেছে। এরমধ্যে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের (জেটি ও চ্যানেলসহ বন্দর) জন্য ২ হাজার ৬৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের (সড়ক যোগাযোগ) জন্য ১ হাজার ৬৮৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়নে দুইটি প্রকল্পই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকার সমানভাবেই প্রকল্প দুইটির জন্য অর্থ বরাদ্দ রেখেছে। এখন চলতি অর্থবছরে এসব অর্থ ঠিকঠাকভাবে ছাড় করা হলে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চলমান গতি ব্যাহত হবে না। মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন শুধু দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই নয়, দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তারা মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেছেন, মাতারবাড়িতে এক লাখ টন কয়লা নিয়ে অচিরেই জাহাজ ভিড়বে। এখানে ১৪ মিটার ড্রাফটের যে কোনো ল্যান্থের কন্টেনার ভ্যাসেলও নোঙর করবে।
উল্লেখ্য, মাতারবাড়িতে ৩০০ মিটার লম্বা মাল্টিপারপাস জেটি এবং ৪৬০ মিটার লম্বা কন্টেনার জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণ কার্যক্রম ব্যাহত না হওয়ার জন্যই মূলত বড় ধরনের এই বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।