মাঠে-গুদামে এখনো ৭ লাখ টন লবণ, তবুও আমদানির চেষ্টা

দেশিয় লবণ শিল্পকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান প্রান্তিক চাষি ও ব্যবসায়ীরা

চকরিয়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১১ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কক্সবাজারের ছয় এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় বিগত মওসুমে উৎপাদিত লবণ এখনো মাঠের গর্তে এবং বিভিন্ন গুদামে পড়ে রয়েছে। বর্তমানে দেশের শিল্প এবং ভোক্তাখাতে লবণের কোনো ঘাটতিও নেই। দেশের মিল-কারখানায় বর্তমানে যে পরিমাণ লবণ মজুদ রয়েছে তা দিয়ে আরো কয়েকমাস চলবে। তাছাড়া মাত্র একমাস পরেই শুরু হচ্ছে লবণ উৎপাদনের মওসুম। তার পরেও সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে বিদেশ থেকে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট লবণ আমদানির চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ এনেছেন লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ।
তাদের দাবি- লবণ চাষিদের তথা দেশিয় লবণ শিল্পকে একেবারে ধ্বংস করে দিতে ঢাকা কেন্দ্রীক শক্তিশালী সিন্ডিকেটটি নতুন করে অপতৎপরতা শুরু করেছে। সেই সিন্ডিকেটটির কারণে দেশিয় লবণ শিল্প একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। লবণ শিল্পের সাথে জড়িতরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছেন না। এতে বার বার আর্থিকভাবে মার খাচ্ছে দেশের লবণ শিল্প। তাই এই শিল্পকে বাঁচাতে এখনই সরকারের কঠোর পদক্ষেপ আশা করেছেন প্রান্তিক চাষিরা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) কক্সবাজার অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে সাড়ে ৪ লাখ এবং মিল-কারখানায় দেড় লাখ মিলে প্রায় ৬ লাখ মেট্টিক টন লবণ মজুদ আছে। আর পাইপ লাইনে (বিভিন্ন খুচরা মজুদদার) জমা রয়েছে আরো অন্তত এক লক্ষ মেট্টিক টন লবণ। আগামী তিন মাসের চাহিদা অনুযায়ী লবণ দরকার হবে সাড়ে ৫ লাখ মেট্টিক টন লবণ। বিপরীতে মজুদ আছে ৭ লাখ মেট্টিক টন। অতএব দেশে লবণের কোনো ঘাটতি নেই এবং বিদেশ থেকে একমুঠো লবণ আমদানি করারও প্রয়োজন নেই।
অভিযোগ ওঠেছে, ইতোমধ্যে আমদানিকারক পুরনো সিন্ডিকেটটি আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে। সেই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু লবণ মিল মালিক। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ২ লাখ মেট্টিক টন লবণ বিদেশ থেকে আমদানি করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে। সেই প্রস্তাবনা কতটুকু যৌক্তিক তা অনুসন্ধানে মাঠ জরিপ করছে বিসিক। তাদের প্রতিবেদনের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে, এমনটিই আভাস মিলেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাঠপর্যায়ে কেজিতে লবণের দাম পাঁচ টাকা। কিন্তু প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা মূল্যে রয়ে যাচ্ছে বিরাট ফারাক। দালাল-মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেট ভারি হলেও বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক চাষিরা। এই মুহূর্তে সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপই দেশের অতিগুরুত্বপূর্ণ এই শিল্পকে বাঁচাতে পারে বলে প্রান্তিক চাষিরা জানিয়েছেন।
এদিকে দেশে উৎপাদিত লবণ শিল্প ও ভোক্তা খাতের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকার পরও অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কর্তৃক বিদেশ থেকে লবণ আমদানির ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন কক্সবাজার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ।
এই দাবিতে গত শনিবার বিকেলে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেন তারা। সেখানে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম শহিদ উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে উৎপাদিত লবণের বর্তমান মজুদ দিয়ে আগামী ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের মানুষের চাহিদা মিটানো যাবে। চাহিদার বিপরীতে ৭ লক্ষ মেট্টিক টন লবণ মজুদ থাকলেও লবণ মিল মালিক সমিতির নাম দিয়ে একটি অকার্যকর সিন্ডিকেট আবারও সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানির পাঁয়তারা করছে। তাই এই মুহূর্তে দেশীয় লবণশিল্পবিরোধী ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৫৫ হাজার চাষি ছাড়াও লবণের উপর বিভিন্ন ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন আরো ৮০ শতাংশ মানুষ। ফলে দেশিয় লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে গেলে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়বেন, যাদের অন্য কোনো পেশা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, পেকুয়ার উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার সিরাজুল মোস্তফা, লবণচাষি শোয়াইবুল ইসলাম সবুজসহ সংশ্লিষ্টরা বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার ও বাঁশখালীর কিছু অংশ নিয়ে প্রায় ৫৭ হাজার ২৭০ একর জমিতে প্রায় ৫৫ হাজার চাষি লবণ চাষ করছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপরীমনির স্থায়ী জামিন মিলল
পরবর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যায় এক আসামির স্বীকারোক্তি