মাইক্রোবাসে যাত্রীবেশে ডাকাত ওরা

প্রবাসী খুনের ঘটনা তদন্তে ধরা ৬ জন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

একটি মাইক্রোবাসে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকে তারা। গাড়িটিতে আগে থেকে যাত্রী বেশে ওঁৎপেতে থাকে ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর যাত্রীরা উঠলেই কিছুদূর গিয়ে টাকা-মালামালসহ সবকিছু কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে নির্জন স্থানে গিয়ে নামিয়ে দেওয়া ভুক্তভোগী যাত্রীকে। এই ভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে বেড়ায় চক্রটি।
একটি হত্যা মামলার তদন্তের সূত্র ধরে চট্টগ্রাম নগরীর অলঙ্কার মোড় এলাকা থেকে বুধবার (১২ জানুয়ারি) গভীর রাতে গ্রেপ্তার করা হয় ওই ডাকাত দলের ছয় সদস্যকে। ওইদিনও তারা এক যাত্রীকে মাইক্রোবাসে তুলে তার পাসপোর্ট, ভিসা ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। নগর গোয়েন্দা শাখা, আকবর শাহ ও পাহাড়তলী থানা পুলিশ যৌথভাবে এ অভিযান চালায়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো মো. শাহ আলম আকন (৩২), আবুল কালাম (৪৭), মো. জাকির হোসেন সাঈদ (৩৬), মো. আল আমিন (২৯), মিজানুর রহমান (৫৩) ও নাহিদুল ইসলাম ওরফে হারুন (৩১)। তারা সবাই আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। এসময় তাদের কাছ থেকে হাতুড়ি, স্ক্রু ড্রাইভার, প্লায়ার্স, ২টি টিপ ছুরি, ১টি গামছা, ১০ টি মোবাইল সেট, ১ টি পাসপোর্ট এবং ভিসার কপি উদ্ধার ও ১টি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মো. আবুল কালামের বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালী ও খুলনার খালিশপুর থানায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে স্বর্ণের দোকান লুট, হালিশহরের ব্যাংক ডাকাতিসহ একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে। এছাড়াও বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় একাধিক দস্যুতা ও ডাকাতি মামলা রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) শামসুল আলম বলেন, গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে চারজন প্রবাসী হোসেন মাস্টার হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এছাড়া ছয়জনের বিরুদ্ধে নগরীর পাহাড়তলী থানায় নতুন করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের সংশ্লিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত কমিশনার শামসুল আলম বলেন, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর বিমানের টিকিট কিনতে নগরীর আগ্রাবাদে গিয়েছিলেন জোরারগঞ্জের দুবাই প্রবাসী হোসেন মাস্টার। কাজ শেষে তিনি অলঙ্কার মোড়ে অপেক্ষা করছিলেন গাড়ির জন্য। সেই সময় একটি মাইক্রোবাস ১০০ টাকা ভাড়ায় তাকে তার গন্তব্যস্থল জোরারগঞ্জে নামিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ভেতরে আরও যাত্রী দেখে তিনিও উঠে পড়েন সরল বিশ্বাসে। কিছু পথ যাওয়ার পর মাইক্রোবাসে যাত্রী বেশে থাকা ৪ ডাকাত হাতুড়ি ও স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে গুরুতর আঘাত করে তার কাছ থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা, ২টি স্বর্ণের আংটি, ১টি মোবাইল ফোন ও তার পাসপোর্ট ছিনিয়ে নেয়। পরে তাকে চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে এলোমেলো ঘুরিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানার উত্তর বেতিয়ারা এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। ভুক্তভোগী হোসেন মাস্টারকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। পর দিন (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় চমেকে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত হোসেন মাস্টারের ছেলে মঞ্জুর হোসেন বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় ডাকাতি ও হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে তদন্তে নামে সিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। নজরদারি বাড়ানো হয় নগরীর অলঙ্কার, একে খান ও সিটি গেট মোড় এলাকায়। একপর্যায়ে গত বুধবার অভিযুক্তরা আরেক যাত্রীকে গাড়িতে তুলে ছিনতাইকালে হাতেনাতে উক্ত ঘটনায় জড়িত চার জনসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শাহ আলম, আবুল কালাম, জাকির হোসেন ও আল আমিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রবাসী হোসেন মাস্টারের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইনজীবী সমিতির নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না সমমনা
পরবর্তী নিবন্ধযাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির আত্মসমর্পণ