মহেশখালের স্লুইচ গেট চালু হচ্ছে চলতি মাসে

আগামী বর্ষায় মিলবে সুফল জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে হালিশহর আগ্রাবাদের মানুষ

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ২ এপ্রিল, ২০২৩ at ৪:৩৭ পূর্বাহ্ণ

শুধু বৃষ্টি নয়, জোয়ারের পানিতেও তলিয়ে যায় নগরের হালিশহর ও আগ্রাবাদের সন্নিহিত নিচু এলাকা। এতে ওইসব এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ হয় অসহনীয়। এ সমস্যা গত কয়েক যুগ ধরে চলে আসছে। তবে এবার সেই দুর্ভোগ লাঘব হতে যাচ্ছে। কারণ ওই দুই এলাকার পানি নিষ্কাশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহেশখালের মুখে ১৩৫ কোটি টাকায় নির্মিত টাইডাল রেগুলেটর (স্লুইচ গেট) পাম্পসহ চালু হবে চলতি মাসে। এরপর জোয়ার ও বৃষ্টির পানির জন্য সৃষ্ট জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে স্থানীয়রা। জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতায় স্লুইচ গেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ড থেকে আমদানি করা রেগুলেটরের ১২টি ভেন্ট বা গেট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ইংল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে তিনটি পাম্প। দুয়েকদিনের মধ্যে পাম্পগুলো স্থাপন কাজ শুরু হবে। প্রতিটি পাম্প স্থাপনে সময় লাগবে এক সপ্তাহ। অর্থাৎ আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে পাম্পগুলো বসানো হয়ে যাবে।

জানা গেছে, প্রতিটি পাম্প দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে পাঁচ হাজার ৫০০ লিটার পানি সেচ করা যাবে। একসঙ্গে তিনটি পাম্প দিয়ে প্রতিটি সেকেন্ডে সাড়ে ১৬ হাজার মিটার পানি সেচ করা যাবে। প্রতিটি পাম্পের পানি যাওয়ার পাইপের আয়তন ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি। এদিকে নৌযান চলাচলের জন্য ভেন্টের সাথে ৬ মিটার প্রশস্ত একটি নেভিগেশন গেটও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এ প্রকল্পে। অবকাঠামোগত কাজ শেষ হলেও নেভিগেশন গেট এখনো বসানো হয়নি। নেভিগেশন গেটগুলো বসাতে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী। তিনি বলেন, নেভিগেশন গেট না বসলেও রেগুলেটরের সুফল পাওয়া যাবে।

জানা গেছে, টাইডাল রেগুলেটরের স্থাপিত ১২টি ভেন্ট বা গেট হচ্ছে এফআরপি (ফাইবার রিইনফোর্ডেড প্লাস্টিক) ধরনের। এগুলো মরিচারোধক। অতীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক স্থাপিত স্লুইচ গেইটে ব্যবহার করত এমএস শিট। যেগুলোতে মরিচা বা জং ধরে। এফআরপি গেইটগুলো আগামী ১০০ বছরেও কিছু হবে না বলে জানান লে. কর্নেল শাহ আলী।

গতকাল দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভেন্ট গেটগুলো চালু করা হয়েছে। নেভিগেশন গেইটের জায়গায় বালির বস্তা দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এছাড়া রেগুলেটর নির্মাণকালে খালের পানি চলাচলের জন্য পাশে যে ডাইভার্সন খাল করা হয় তা ভরাট করা হচ্ছে। এছাড়া সাড়ে ১২ হাজার কেবি একটি জেনারেটর বসানো হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহেশখালের যে অংশে টাইডাল রেগুলেটর স্থাপনা করা হয়েছে সেখানে খালের প্রস্থ ৫০ দশমিক ০২৫ মিটার। স্থাপিত ভেন্ট বা গেইটের প্রতিটি এক দশমিক পাঁচ মিটার করে প্রশস্ত। দৈর্ঘ্য এক দশমিক আট মিটার। নেভিগেশন গেইটের প্রস্থ ৬ মিটার।

জানা গেছে, রেগুলেটরের গেইটগুলো আধুনিক এবং অটোমেটিক সিস্টেমে পরিচালিত হবে। অর্থাৎ পানি নিচে নেমে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গেইট খুলে যাবে। জোয়ারের পানির চাপ বেশি হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবার তা বন্ধ হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও জেনারেটর দিয়ে পাম্পগুলো চলবে। জেনারেটরও স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হবে। এছাড়া অ্যাপসের মাধ্যমেও যে কোনো জায়গা থেকে পাম্পগুলো চালানো যাবে। এছাড়া খালে পলি জমে ভরাট এড়াতে রেগুলেটরের মুখে আড়াই হাজার বর্গমিটারের একটি বেসিন (সিল্ট ট্রাপ) বসানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনটি ডাস্ট র‌্যাক দিয়ে ভাসমান ময়লা তোলা হবে।

জানা গেছে, রেগুলেটরের ভেন্টগুলো যেখানে স্থাপন করা হয়েছে সেখানে টেকনিক্যাল কারণে খালের গভীরতা কমেছে মাইনাস ২ দশমিক ৭৫ মিটার। তবে এতে পানি প্রবাহে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন লে. কর্নেল শাহ আলী। তিনি বলেন, মাইনাস ২ দশমিক ৭৫ মিটার থেকে শূন্য পর্যন্ত খালে সবসময় পানি থাকবে। হঠৎ পানি বের করতে চাইলে নেভিগেশন গেইট দিয়ে করা যাবে।

উল্লেখ্য, মেগা প্রকল্পের আওতায় আওতাভুক্ত খাল ৩৬টি হলেও পাম্পসহ রেগুলেটর স্থাপন করার কথা পাঁচটি খালে। খালগুলো হচ্ছে মহেশখাল, টেকপাড়া পাড়া খাল, কলাবাগিচা খাল, ফিরিঙ্গিবাজার খাল ও মরিয়ম বিবি খাল। এর মধ্যে টেকপাড়া পাড়া খাল, কলাবাগিচা খাল, ফিরিঙ্গিবাজার খাল ও মরিয়ম বিবি খালে গেইট বসানোর কাজ শেষ হয়েছে এবং সেগুলো চালু করা হয়েছে। তবে ওইসব খালের প্রতিটি রেগুলেটরের সঙ্গে দুটি করে চারটি পাম্প বসানোর কাজ বাকি রয়েছে। এ চার খালে প্রতিটি রেগুলেটর নির্মাণে ১০ কোটি টাকা করে ৪০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

সুফল মিলবে যেভাবে : মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ শাহ আলী আজাদীকে বলেন, রেগুলেটরের গেইট বন্ধ রেখে জোয়ারের পানি শহরে প্রবেশ আটকানো হবে। আবার পাম্প দিয়ে সেচ করা হবে বৃষ্টির পানি। এতে জোয়ার ও বৃষ্টির পানি থেকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী রক্ষা পাবে।

তিনি বলেন, আগ্রাবাদ, হালিশহর, মা ও শিশু হাসপাতালসহ আশেপাশে যেখানে জোয়ারের পানি ঢোকে তা বন্ধ হবে। বৃষ্টির পানি বেড়ে গেলে পাম্প দিয়ে নিষ্কাশন করা যাবে। আগামী বর্ষায় এসব সুফল মিলবে। এরপরও পানি বেশি হয়ে গেলে পানি নিষ্কাশনের জন্য নেভিগেশন লকও খুলে দেয়া হবে।

আজববাহার খাল, নসির খাল, মহেশখালী খাল এবং রামপুরা খালের সঙ্গে সংযোগ আছে মহেশখালের। ফলে ওই খালের পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনও মহেশখালের রেগুলেটরের সুফল পাবে। এমনটাই জানিয়েছেন লে. কর্নেল শাহ আলী।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) গৃহীত ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্পটি ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। একই বছরের ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅপরাধ ও অপপ্রচারের সাথে সাংবাদিকতাকে মেলাবেন না : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা