মহামারীর রেশ ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায়

| রবিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

কোভিড মহামারী পরবর্তী সময়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ৭৫ শতাংশের বেশি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, যে সমস্যা থেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন তাদের অনেকে। এমন দাবি করল আঁচল ফাউন্ডেশন। এক সমীক্ষা চালিয়ে এমন ফল পাওয়া গেছে বলে সংগঠনটি জানিয়েছে। দেশের বিভিন্ন পাবলিক, বেসরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় লেখাপড়া করা ১ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থীর উপর সমীক্ষা চালিয়ে তারা দেখতে পেয়েছে, ৩৪ দশমিক ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা সংক্রান্ত সমস্যা থেকে বাঁচতে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করছিলেন। খবর বিডিনিউজের। বাংলাদেশে ২০২০ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া কোভিড মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেশনজট ও পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে হতাশাকে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন এ সংশ্লিষ্ট গবেষকরা। এছাড়া, প্রাতিষ্ঠানিক চাপেও পড়াশোনায় অনীহা তৈরি, অভিভাবকদের চাপ, কোভিডে মনস্তাত্বিক পরিবর্তনকে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
শনিবার ‘করোনা পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর একাডেমিক চাপের প্রভাব এবং তাদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শিরোনামে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই সমীক্ষার প্রতিবেদন তুলে ধরে আঁচল। সম্মেলনে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষক ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক আব্দুল ওহাব। জরিপে ৩৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার মোট ১ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
বেড়েছে ভয় ও আশঙ্কা
জরিপে মানসিক সুস্থতা বিষয়কবেশ কয়েকটি নিয়ামক নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাওয়া হলে উত্তরে আসে উদ্বেগজনক কিছু তথ্য। মোট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৭.৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন কোভিড মহামিারী পরবর্তী সময়ে তাদের নিজস্ব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত ভয় ও উদ্বেগে তারা জর্জরিত। পাশাপাশি দৈনন্দিন আচার-আচরণ ও ব্যবহারে পরিবর্তনও এসেছে শিক্ষার্থীদের জীবনে। যেমন, মন খারাপ হওয়া, হঠাৎ ক্লান্তিসহ নানা বিষয় তাদের শিক্ষাজীবনে প্রভাব ফেলেছে বলে জানায় ৮০.৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী।
ডিজিটাল আসক্তিতে মানসিক সমস্যা
দৈনন্দিন জীবন-যাপনের অংশ হয়ে যাওয়া ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর মধ্যে মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপের উপরে অতিরিক্ত আসক্তি ও নির্ভরতা শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছেন ৭০.৭৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। আবার মানসিকসমস্যা জনিত কারণে নিত্যদিনের ঘুমের অভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। যেমন অতিরিক্ত ঘুম অথবা নিদ্রাহীনতায় ৭১.৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী ভুগছেন। যা লেখাপড়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
অভিভাবকদের অযাচিত চাপ
অভিভাবকদের অতিরিক্ত স্বপ্ন বা প্রত্যাশার চাপে ৫৫.৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী হাঁসফাস করছে জানা আঁচল। অনেক শিক্ষার্থীই মনে করছেন পরিবার থেকে তৈরি হওয়া ‘অযাচিত’ চাপে তারা পিষ্ঠ।
ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তা
৭৬.৬ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন চাকরির ক্ষেত্রে ভবিষ্যত ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তা এবং অনিশ্চয়তার কারণে মানসিক চাপে আছেন। এর মধ্যে ৭২২ জন মেয়ে ও ৫৩৫ জন ছেলে রয়েছে। এতে দেখা যায় যে, তুলনামূলকভাবে মেয়েরা ক্যারিয়ার নিয়ে বেশি চিন্তিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩০ ঘণ্টা পর অপহৃত কিশোরকে ছেড়ে দিল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় বালু উত্তোলন নিয়ে দুই পক্ষের উত্তেজনা