মহামারীতে এখন আছি বড় জেলখানায় : প্রধানমন্ত্রী

সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল এখন এটা নেই

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ১৯ জুলাই, ২০২১ at ৭:০৬ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সরাসরি কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারার আক্ষেপ ঝরেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠে। গত বছর দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে গণভবন থেকেই ভার্চ্যুয়ালি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ
নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল রোববার সকালেও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহের ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর এবং ‘এপিএ ও শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান, ২০২১’-এ অংশ নেন তিনি। অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত থাকতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে আমি কিন্তু বলতে গেলে এক রকম বন্দি জীবনেই… তার আগে ছিলাম ছোট জেলখানায়। এখন আছি বড় জেলখানায়। কারণ এই গণভবন থেকে আর বের হতে পারি নাই। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হয়ে ১১ মাস বিশেষ কারাগারে কাটানোর দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, হ্যাঁ… একটু বড় জেলখানা, এটা হলো কথা। একটু লিবার্টি আছে, দোতলা থেকে নিচে নামতে পারি, মাঠে হাঁটতে পারি, এই পর্যন্তই। কিন্তু আগে ছিলাম একটা ঘরের মধ্যে বন্দি। ওখান থেকে আর নড়ার উপায় ছিল না। কলাপসিবল গেট দিয়ে বন্ধ করা ছিল। এখন অবশ্য ইলেকট্রনিক দরজা আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সামনে থাকতে পারলাম না এটাই একটা খুব দুঃখ। আজকে কর্মসম্পাদন চুক্তি হলো, আমি নিজ হাতে দিতে পারলাম না বা থাকতে পারলাম না, সেই দুঃখটা আমার রয়ে গেল। পুরস্কারগুলো নিজের হাতে দিতে পারলে আমি আরও খুশি হতাম। এই করোনা মহামারীর কারণে সেটা সম্ভব হলো না।
করোনাভাইরাস মহামারী পুরো বিশ্বকে সংকটের মুখে ফেলেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তির এই যুগে কোথায় কি ঘটছে এটা খুব দ্রুত জানা যাচ্ছে। ফলে এই মহামারীটা সর্বত্র যেমন ছড়িয়ে যাচ্ছে তার সংবাদগুলোও আমরা পাচ্ছি। এই অবস্থায় আমাদেরকে কীভাবে চলতে হবে আমরা সেই কর্মপন্থা সুনির্দিষ্ট করেছি। করোনাভাইরাস মহামারী সব থেকে বেশি আঘাত হেনেছে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে। আর আমাদের দুঃখটা হলো বাংলাদেশকে আমরা যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম সেখানে একটা বিরাট ধাক্কা লেগেছে।
দেশের কোনো মানুষ যেন করোনার টিকা নেওয়া থেকে বাদ না থাকে সরকার সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করে দিয়েছি, ভ্যাকসিন আসছে এবং দেশের প্রত্যেকটা মানে, যাদের এই ভ্যাকসিনটা গ্রহণ করার, তাদের সকলেই যেন এটা নিতে পারেন, তার জন্য যত দরকার আমরা তা ক্রয় করব এবং আমরা সেই ভ্যাকসিনটা দেব। কোনো মানুষ যেন ভ্যাকসিন থেকে বাদ না থাকে, সেভাবেই কিন্তু আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আমরা চাচ্ছি যে আমাদের দেশের মানুষ যেন কোনো রকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও আহ্বান জানান তিনি। আমি জানি আমাদের মানুষগুলো একটু, সব গ্রামে ছুটতে পছন্দ করে, মাস্ক পরতে চায় না। কিন্তু যারা যেখানে দায়িত্বরত আছেন, আপনারা একটু চেষ্টা করবেন মানুষকে বোঝাতে এবং তারা যেন এই মাস্কটা পরে আর যেন সাবধানে থাকে।
সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল-এখন এটা নেই : সরকারি কর্মকর্তাদের ভেতরে আগের মতো ‘সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল’ এটা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমি যে জিনিসটা এখন লক্ষ্য করি, প্রত্যেকটা সরকারি অফিসারদের ভেতরে আগে যেমন সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল-এখন সেটা নেই। আজ প্রত্যেকে কিন্তু নিজে নিজের কাজটাকে নিজের বলে গ্রহণ করছে, আপনার দায়িত্বটা আপনি নিজে গ্রহণ করছেন এবং বাস্তবায়নের জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে এ পর্যন্ত আমি যেটা লক্ষ্য করেছি সব ক্ষেত্রে আমাদের যারা প্রশাসনে আছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে আছেন অথবা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে আছেন সবার ভেতরে কিন্তু এই পরিবর্তনটা এসেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা