মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় হট্টগোল

কমিটিকে অবৈধ বললেন মেয়র রেজাউল ।। নাছিরের সাথে বাকবিতণ্ডা ।। স্থগিত করার দাবির মুখেও কাল থেকে ইউনিট সম্মেলন

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় তুমুল হট্টগোল হয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের কমিটিকে ‘অবৈধ’ এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি নিজের টাকায় পার্টি চালান- এমন বক্তব্যের জের ধরে হট্টগোল চরমে ওঠে। বিশেষ করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং খোরশেদ আলম সুজনের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়ান সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। বৈঠকে নগরীর পাঁচটি ওয়ার্ডের আসন্ন ইউনিট সম্মেলন স্থগিত করার দাবি জানানো হয়। গণমানুষকে দলের বাইরে রেখে সম্মেলন করা হলে দল গণবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করেন। অবশ্য সম্মেলন স্থগিত করার দাবি উঠলেও শেষ পর্যন্ত আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে নগরীতে ১২৯টি ইউনিটের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শুরুতে পাঁচটি ওয়ার্ডে ইউনিট সম্মেলন হবে। অপরদিকে নিজেদের পছন্দের লোকদের সুযোগ দিতে বহু কর্মীকে দলে ঠাঁই দেয়া হচ্ছে না। দলীয় সদস্যের আবেদন ফরম নিয়েও নানা ষড়যন্ত্র চলছে। দলীয় সদস্য আবেদন ফরম উন্মুক্ত করে দেয়ারও দাবি জানানো হয়েছে। গতকাল রোববার বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত টানা বৈঠক হয়। তবে সভায় হট্টগোলের বিষয়টি প্রকাশ্যে কেউ স্বীকার করছেন না। গতকাল দারুল ফজল মার্কেট দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।
সভায় উপস্থিত একাধিকজন গতকাল আজাদীকে জানিয়েছেন, নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বক্তব্যে চলমান সদস্য সংগ্রহ অভিযান এবং ইউনিট-ওয়ার্ডে সম্মেলনের উদ্যোগের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে তিনি বলেন, নগরীর এক চতুর্থাংশ ভোটারকে দলীয় সদস্য করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। কিন্তু নগরীতে সদস্য সংগ্রহ নিয়ে তুঘলকি কারবার চলছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন ওয়ার্ডে অনেক পুরনো লোকজনকে বাদ দিয়ে পছন্দের লোকজনকে সদস্য করা হচ্ছে। ওয়ার্ড সভাপতি এবং সম্পাদকদের পছন্দের বাইরের কোনো লোককে আবেদন ফরমও দেয়া হচ্ছে না। কৌশলে তাদের দল থেকে বাইরে রাখা হচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে তারা কাউন্সিলর হতে না পারে। তারা যেন নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট দিতে না পারে। তিনি বলেন, একজন দলীয় কর্মী নেতা না হোক, দলের সদস্য হওয়ার অধিকার তার রয়েছে। দলের সদস্য বাড়ানোর কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তও রয়েছে। অথচ এখানে তা মানা হচ্ছে না। দলীয় সদস্য বাড়ানোর জন্য ওয়ার্ড সভাপতি এবং সম্পাদকদের পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের অফিস থেকেও সদস্য আবেদন ফরম বিতরণের প্রস্তাব করেন তিনি। যাতে যে কোনো মানুষ দলীয় ফরম সংগ্রহ করে সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। পরবর্তীতে যাচাই বাছাই করে তাদের সদস্যপদ দেয়া হবে কিংবা আবেদন বাতিল করা হবে। নগর আওয়ামী লীগের অফিস থেকে ফরম বিতরণের বিষয়টি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে সকলকে জানিয়ে দেয়ারও প্রস্তাব করেন তিনি।
সিটি মেয়র বলেন, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমের তদারকির দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত থাকলেও তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য এমনটি করা হচ্ছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নগর আওয়ামী লীগের বিদ্যমান কমিটিকে অবৈধ আখ্যায়িত করে রেজাউল বলেন, ২০১৩ সালে গঠিত কমিটির মেয়াদ তিন বছর পরেই শেষ হয়েছে। এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি অবৈধ। এই কমিটির ওয়ার্ড, ইউনিট এবং থানায় সম্মেলন করার কোনো এখতিয়ার নেই।
৫টি ওয়ার্ডের আসন্ন সম্মেলন স্থগিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সদস্য এবং কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ অবারিত না করে পছন্দের লোকদের দিয়ে সম্মেলন করানোর উদ্যোগ কোনোদিনই সুফল বয়ে আনবে না।
মেয়র রেজাউলের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দফতর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসেরসহ কয়েকজন নেতা। অপরদিকে বেশ কয়েকজন নেতা সাধারণ সম্পাদকের দীর্ঘ বক্তব্যসহ সার্বিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। এই নিয়ে উভয় পক্ষের মাঝে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। সভাস্থলে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা।
পরবর্তীতে সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সভায় নগরীর পাঁচটি ওয়ার্ডে ইউনিট পর্যায়ে সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো হলো ১৫ নম্বর বাগমানিরাম ওয়ার্ড, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড, ২০ নম্বর দেওয়ান বাজার ওয়ার্ড, ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড ও ২২ নম্বর এনায়েত বাজার ওয়ার্ড। আগামীকাল ১৬ নভেম্বর থেকে সম্মেলন অনুষ্ঠানের কার্যক্রমে প্রথম দিন বাঘমনিরাম ওয়ার্ডের ইউনিট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে নগর আওয়ামী লীগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সম্মেলনের সার্বিক বিষয় তদারকির জন্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেন, অনেক প্রতিকূলতা ও বিপর্যয় পেরিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নিজের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করেছে। আমরা অনেক সংকট মোকাবেলা করে যে অবস্থানে আছি তা যেন আত্মকলহ ও বিবাদে বিলীন না হয়।
তিনি বলেন, কোনো ওয়ার্ডে কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকলে তারা সদস্য পদ পাবে না। এ ধরনের কর্মকাণ্ড যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে স্থানীয় নেতৃত্বকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। নিজের বলয় ভারী করার জন্য অনুপ্রবেশকারীদের দুয়ার যদি কেউ খুলে দেয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, এম জহিরুল আলম দোভাষ, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম ফারুক, অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, হাজী আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, হাজী মো. হোসেন, হাজী জহুর আহমদ, মাহবুবুল হক মিয়া, দিদারুল আলম চৌধুরী, জালাল উদ্দিন ইকবাল, জোবাইরা নার্গিস খান, আবদুল আহাদ, আবু তাহের, শহীদুল আলম, জহরলাল হাজারী, নির্বাহী সদস্য এম এ জাফর, আবুল মনসুর, পেয়ার মোহাম্মদ, কামরুল হাসান ভুলু, গাজী শফিউল আজিম, বখতিয়ার উদ্দিন খান, সৈয়দ আমিনুল হক, জাফর আলম চৌধুরী, মহব্বত আলী খান, আহমদ ইলিয়াছ, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, আবদুল লতিফ টিপু, মো. জাবেদ, রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, হাজী বেলাল আহমেদ ও মোরশেদ আকতার চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাবার গিলাফের প্রধান ক্যালিওগ্রাফার লোহাগাড়ার মুখতার পেলেন বিরল সম্মান
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬