মশা নিধন : কাজ দিয়ে জানান দিতে হবে পরিকল্পনার অগ্রগতি

| রবিবার , ২ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

‘মশক নিধনে গতি বাড়ানোর উদ্যোগ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গত ৩০ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে, মশক নিধন কার্যক্রমে গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতি ওয়ার্ডকে চারটি ব্লকে ভাগ করা হচ্ছে। এরপর প্রতি ব্লকের জন্য একজন করে স্প্রে ম্যান নির্দিষ্ট করা হবে, যারা সারা বছর নির্ধারিত ব্লকে কীটনাশক ছিটাবে। এর বাইরে বিশেষ ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ এর আওতায়ও একাধিক স্প্রে ম্যান প্রতিটি ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটাবেন। সামগ্রিক কর্মকাণ্ড তত্ত্বাবধানে গঠন করা হবে মনিটরিং সেল। বিষয়টি সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, মশক নিধন কার্যক্রমকে জোরালো করতে ১১৯টি স্প্রে মেশিন সংগ্রহ করা হয়েছে। কেনা হয়েছে কালো তেলসহ চার ধরনের ওষুধ। গত কয়েকদিন ধরে এসব ওষুধ ব্যবহারও শুরু হয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে একটি কীটনাশক পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে (রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট) পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এর রিপোর্ট পাওয়ার কথা। ইতিবাচক ফলাফল মিললে কীটনাশকটি আরো ব্যাপক পরিমাণে ক্রয় করা হবে।
এ বিষয়ে মেয়র বলেন, মশার উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে রক্ষার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। স্প্রে মেশিন সংগ্রহ করেছি। সেনাবাহিনী যে ওষুধ ব্যবহার করে সেটা সংগ্রহ করে ছিটানো শুরু করেছি। এর কার্যকারিতাও পাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মশক নিধনে আলাদা ফোর্স করা হবে। এদের আলাদা পোশাক হবে। যাদের নিয়োজিত করা হবে তাদের অবহেলা ও অনিয়ম গ্রাহ্য হবে না। দায়িত্ব পালনে কেউ ব্যর্থ হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সামগ্রিক বিষয়গুলো তদারকির জন্য মনিটরিং সেল করব। ইতোমধ্যে অফিসারদের দায়িত্বও দিয়েছি। মশার ওষুধের পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে জোর দিচ্ছি। খাল-নালা থেকে মাটি উত্তোলন করছি। কারণ খাল-নালা পরিষ্কার না থাকলে সেখানে মশার লার্ভা জন্মায়। আবার বর্ষায় জলাবদ্ধতা হয়।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, মশা একটা ছোট পতঙ্গ, এর দমনপদ্ধতি হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত। এ সমস্যা পৃথিবীর অনেক দেশে আছে। কোনো দেশে এই সমস্যা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি প্রকট। সে জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মশা দমনের নানা বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি উদ্ভাবিত হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তিসমৃদ্ধ নতুন নতুন ফাঁদ আবিষ্কার করা হচ্ছে। আমাদেরও উন্নত প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে। প্রচলিত দমন পদ্ধতির আধুনিকায়ন করতে হবে। সফলভাবে মশা ও মশাবাহিত রোগ দমন করতে ইনটিগ্রেটেড মসকিটো ম্যানেজমেন্ট (আইএমএম) ব্যবস্থায় একটি পৃথক মশা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এর মূল কাজ হবে: ১. মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নিয়মিতভাবে চালানো, ২. সফল নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা করা এবং ৩. জনসচেতনতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া। এই তিন ধরনের কাজের জন্য মশা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পৃথক শাখা থাকবে। প্রতিটি শাখা এক বা দুজন বিজ্ঞানীর তত্ত্বাবধানে ও কয়েকজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর (টেকনিশিয়ান) দ্বারা পরিচালিত হবে। মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের প্রযুক্তি-ব্যবহারকারীদের অবশ্যই মশার জীবতত্ত্ব সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকতে হবে। তাঁরা নিয়মিত মশানাশক ওষুধ (অ্যাডাল্টিসাইড ও লার্ভি সাইড) ছিটাবেন। কোন কোন স্থানে কী মাত্রায় মশানাশক ওষুধ ছিটানো হচ্ছে, সে বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত সংরক্ষণ করবেন। তাঁদের থারমাল ফগার, ইউএলভি স্প্রেয়ার ইত্যাদি নতুন নতুন যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার রপ্ত করতে হবে। তাঁদের এডিস মশাসহ (ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগবাহী) অন্যান্য মশা শনাক্ত করার দক্ষতা থাকতে হবে। তাঁদের টার্গেট ও নন-টার্গেট প্রজাতির পতঙ্গ চিনতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পাশাপাশি মশা নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করতে হবে। গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সারা বছর নিয়মিতভাবে চালাতে হবে। কোনো মৌসুমেই অবহেলা করা চলবে না।
এদিকে, নগরীতে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ভবন মালিক সমিতিকে সম্পৃক্ত করতে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ওয়ার্ড কাউন্সিলররা ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টভিত্তিক ভবনের মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলবেন। সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আছেন, তাদের অনুরোধ করতে হবে যেন তাদের আঙিনা, বাসা-বাড়ির বিভিন্ন জায়গা পরিচ্ছন্ন রাখেন। কারণ আমরা দেখেছি বাসাবাড়ির পরিত্যক্ত এলাকায় বিভিন্ন সামগ্রী, চাকা, প্লাস্টিকের বোতল-পাত্রে পানি জমে থাকার কারণে মশার বংশবিস্তার হচ্ছে।
দুটি ভবনের মাঝখানে অনেক জায়গায় পানি জমে থাকতে দেখা যায়। এসব জায়গা পরিষ্কার করতে হবে। সেগুলোয় লার্ভিসাইডিং করতে হবে, কীটনাশক ছিটিয়ে দিতে হবে। কারণ এসব জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে দুই-তিনদিনের মধ্যেই এডিস মশার বিস্তৃতি ঘটে, প্রজনন ঘটে। ছাদের কার্নিশে ও ছাদের অনেক জায়গায় পানি জমে থাকে, সেগুলোও দেখতে হবে।
মশক নিধনে গতি বাড়ানোর যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, তার বাস্তবায়ন দরকার। মশা নিধনে সিটি করপোরেশনকে সফল হতে হবে। শুধু আওয়াজ তুললে হবে না, কাজ দিয়ে জানান দিতে হবে পরিকল্পনার অগ্রগতি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে