মশক নিধন কার্যক্রমে গতি না থাকায় নগরবাসী ক্ষুব্ধ

| শুক্রবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২২ at ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গু রোগী ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরবাসীর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আতংকিত হয়ে উঠছেন অনেকে। নগরবাসীর অনেকেই এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ। তাঁরা অভিযোগ করেছেন সুস্পষ্ট বক্তব্যে। বলছেন, মশার উৎপাত বাড়লেও মশক নিধন কার্যক্রমে সিটি কর্পোরেশনের গতি বাড়ছে না। গত ১২ অক্টোবর দৈনিক আজাদীতে এ নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৪ জন। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ২১২ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছে ১১ জন। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়লেও মশক নিধন কার্যক্রমে গতি না বাড়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ লোকজন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় প্রণীত জাতীয় গাইডলাইন অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হতে ডেঙ্গু রোগীর ঠিকানা সংগ্রহ করে রোগীদের বাড়িতে ও চারপাশের কমপক্ষে ৫০টি বাড়িতে এডিস মশা নিধনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসে অপরাহ্ন হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত এডাল্টিসাইড ও লার্ভা ধ্বংসে সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত লার্ভিসাইড ছিটাতে হবে। পাশাপাশি মশার প্রজননস্থল চিহ্নিত করে ধ্বংসসহ সুনির্দিষ্ট ১০টি বিষয়ে এক বছরের জন্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে চসিককে। অভিযোগ আছে, এ গাইডলাইন পুরোপুরি অনুসরণ করছে না চসিক।
সারা দেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সিটি কর্পোরেশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থার কার্যক্রম পর্যালোচনার জন্য ইতোপূর্বে আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় চট্টগ্রামসহ দেশের সিটি কর্পোরেশনের জন্য করণীয় ঠিক করা হয়। করণীয়গুলোর মধ্যে ছিল- কর্পোরেশনকে মশক নিধনে ব্যবহৃত কার্যকর কীটনাশক এবং যন্ত্রপাতির পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করা। এলাকায় এলাকায় ওষুধ ছিটানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে সেই সভায়। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বর আর এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণে আনার ক্ষেত্রে লোক দেখানো কর্মসূচি কেবল পালন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চসিকের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলছেন, প্রতিদিন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি অব্যাহত আছে বলে তাঁরা দাবি করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বারবার আহ্বান জানিয়ে আসছেন যে, জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করুন। অন্যদিকে সিটি মেয়র ও কর্মকর্তারাও আহ্বান জানান জনগণকে এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলেন, ‘জনগণেরও আগ্রহ আছে, কিন্তু তাদের হাতে কোনোরকম উপায়-উপকরণ না দিয়ে জনসম্পৃক্ততার কথা বলে মাঠ দাপিয়ে জনগণের ঘাড়ে দোষ চাপালে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কোনো উন্নতি হবে না। অধিকাংশ দেশে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব কীটনাশক প্রয়োগ ও জনসম্পৃক্ততার সমন্বয় ঘটিয়ে বিষয়টির সমাধান করার বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সেজন্য তারা বছরব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সম্পৃক্ত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে এবং তাদের হাতে পরিবেশবান্ধব কীটনাশক উঠিয়ে দেয়। কীটতত্ত্ববিদদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বিভিন্নমুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মূল্যায়নের মাধ্যমে মশক নিধন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। সে অনুযায়ী কিছু ফলাফলও তারা পায়। কিন্তু আমাদের না আছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কর্মসূচি, না আছে যুবসমাজের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, আর না আছে বাসাবাড়ির দারোয়ান, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহণ শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক ও কমিউনিটিভিত্তিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ফলে জনগণকে সম্পৃক্তও করা যাচ্ছে না; আর যতটুকু হচ্ছে, তাতে লাভও হচ্ছে না। অন্যদিকে কার্যকর ও যুগোপযোগী কীটনাশকের কথা বিশেষজ্ঞ মহল দ্বারা বারবার উচ্চারিত হলেও তা কেউ আমলেও নিচ্ছে না বা তেমন উদ্যোগী হচ্ছে বলে মনে হয় না।’ তাঁরা বলেন, পরিবেশবান্ধব কীটনাশক সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে প্রচেষ্টা চালানো এবং জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে ব্যবহার্য কীটনাশকের শুল্কহার ৯০ শতাংশ থেকে শূন্যের কোঠায় নামানোর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। এসব কীটনাশক পরিবেশে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে না, ফলে সব মহল নিজ উদ্যোগে এগুলো সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে পারে, সেই সঙ্গে নগরকর্তাদের ওপর চাপও কমে।
প্রতি বছর মশা নির্মূলে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ পায় সিটি করপোরেশন। কিন্তু মশা কমে না, দিন দিন মশার প্রকোপ বাড়ছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সঠিক ব্যবহার হলে তো নগরীতে এভাবে মশা থাকার কথা না। হয়তো সমস্যা আছে কোথাও। সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। এলাকায় এলাকায় ওষুধ ঠিকঠাক মতো ছিটায় কিনা তার মনিটরিং করতে হবে। মশা ঠেকাতেই হবে, নইলে নিস্তার নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে