মনগড়া রিপোর্ট এবং গণহারে বাদ দেওয়ার অভিযোগ

বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটারের ডাক্তারী পরীক্ষা

ক্রীড়া প্রতিবেদক | রবিবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬, এবং অনূর্ধ্ব-১৮ বয়সের ক্রিকেটার বাছাই চলছে চট্টগ্রামে। বিসিবি আয়োজিত এই তিন বিভাগের টুর্নামেন্টে অংশ নিতে বাছাই করা হচ্ছে ক্রিকেটার। যেখান থেকে গঠন করা হবে জেলা দল। দেশের বিভিন্ন জেলার মত চট্টগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে এই দল গঠনের প্রক্রিয়া। সিজেকেএস ক্রিকেট কমিটি বিসিবি নিয়োজিত কোচদের সহযোগিতায় এই বাছাই কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। যেখানে বাচ্চাদের বয়স প্রমানের সব সনদ উপস্থাপন করতে হয়। যার মধ্যে রয়েছে জন্ম সনদ, বাবা, মার ভোটার আইডি, বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রবেশ পত্র, টিকা সনদ সহ নানা কাগজপত্র। যাতে বাছাই কার্যক্রম সঠিক হয়। যাতে বয়স প্রমানে কোন ধরনের ত্রুটি না হয়। কিংবা বয়সের কারনে কোন ক্রিকেটারকে বাদ পড়তে না হয়। এরপর বিসিবি প্রেরিত ডাক্তাররা চুড়ান্ত পরীক্ষা করে দল গঠনের জন্য ক্রিকেটার নির্ধারন করে দেন।
গতকাল থেকে শুরু হয়েছে চট্টগ্রামে এইসব ক্ষুদে ক্রিকেটারদের ডাক্তারী পরীক্ষা। আর সেখানেই উঠেছে অভিযোগের পাহাড়। কারন বিসিবি থেকে যে দুজন ডাক্তার পাঠানো হয়েছে ক্রিকেটারদের বয়স পরীক্ষা করানোর জন্য তারা নাকি রিপোর্ট দিচ্ছেন মনগড়া আর গণহারে বাদ দিচ্ছে ক্রিকেটারদের। এ নিয়ে গতকাল ক্রিকেটার বাছাই কার্যক্রমে চরম অসন্তোস দেখা দেয়। প্রকৃত পক্ষে বিসিবি থেকে যে দুজনকে পাঠানো হয়েছে তারা ডাক্তার নয়। একজন হচ্ছেন বিসিবির গেম ডেভেলপম্যান্টের কর্মকর্তা এবং অন্যজন একজন ফিজিও। কাজেই তাদের বয়স পরীক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াটাই স্বাভাবিক। সিজেকেএস কর্মকর্তারা বলছেন এরফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দলগুলো। গতকাল ইউসা মোঃ রাজিব নামের একজন ক্ষুদে ক্রিকেটার এসেছিলেন ডাক্তারী পরীক্ষা দিতে। তার জন্মের ডেলিভারী সনদ, টিকা সনদ, সরকারী জন্ম নিবন্ধন সনদ সব তথ্য প্রমান পরখ করে দেখা গেছে তার বয়স সাড়ে ১২ বছর। কিন্তু বিসিবির দুই ডাক্তার তার বয়স দেখিয়েছে ১৪ বছরের বেশি। এরকম অনেকেই বাদ পড়ছেন ভুল রিপোর্টের কারনে। অভিযোগ উঠেছে ডাক্তাররা কোন ধরনের কাগজ পত্র না দেখে কেবল দাঁত দেখে একটি আন্দাজে বয়স নির্ধারন করে দিচ্ছে। যারা বাদ পড়ছেন তাদের বলা হচ্ছে বোন টেস্ট করে বয়স প্রমাণের জন্য। সেটাও আবার ঢাকায় গিয়ে করাতে হবে। যে সব ক্রিকেটার বয়স নির্ধারণের পরীক্ষা দিতে আসছে তাদের অনেকেরই পক্ষে ঢাকায় গিয়ে এতটাকা খরচ করে বোন টেস্ট করা সম্ভব নয়। অভিযোগ রয়েছে সেখানেও আবার বিসিবি থেকে আসা ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য রয়েছে। আবার সেই বোন টেস্টেও দেখা দেয় বিপত্তি। সিজেকেএস কর্মকর্তারা বলছেন ইতোপূর্বে যেসব ক্রিকেটার বোন টেস্ট করে এসেছেন তাদের বয়স সঠিকই প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় অন্য জায়গায়। বোন টেস্টের রিপোর্ট আসতে আসতে জেলা দল প্রায় চুড়ান্ত হয়ে যায়্‌। কিন্তু যারা বোন টেস্ট করে বয়স প্রমাণ করে আসে তাদের দলে নিতে গেলে দলের কম্বিনেশন ভাঙতে হয়। তখন কাকে রেখে কাকে বাদ দেবেন সে সমস্যাটা অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়। যার ফলটা শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ে মাঠের খেলায়। তখন আবার জেলার বদনাম হয়। ডাক্তারদের এমন অনভিজ্ঞতার কারণে যেমন বাদ পড়ছে ক্রিকেটাররা তেমনি ভুগতে হচ্ছে দল গুলোকে। আবার যেসব ক্রিকেটার গত বছর খেলেছে অনূর্ধ্ব-১৪ বছর বয়সের ক্রিকেটে স্বাভাবিক ভাবে এ বছর তার বয়স হওয়ার কথা অনূর্ধ্ব-১৫। যেহেতু বিসিবির অনূর্ধ্ব-১৫ বয়সের কোন ইভেন্ট নেই তাই সে কেরবে অনূর্ধ্ব-১৬ বিভাগে। কিন্তু তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগে। সেখানে গিয়ে তার পক্ষে খেলা সম্ভব নয়। অথচ তেমনটিই হচ্ছে বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে। ফলে ক্ষুদে ক্রিকেটারদের এই বাছাই কার্যক্রমে পরিবর্তন আনার দাবিটা জোরালো হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে যে হযবরল অবস্থা চলছে তার প্রভাব পড়ছে দেশের ক্রিকেটার তৈরির পাইপলাইন খ্যাত এই বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে। কে জানে কবে এই ব্যবস্থার সুরাহা হবে। নাকি আদৌ হবেনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে নুতন ২ জনের করোনা শনাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধসিজেকেএস স্কুল হ্যান্ডবল টুর্নামেন্টে এন্ট্রি আহবান