মওকুফ নয়, দুই পক্ষই চায় শাস্তি প্রত্যাহার

এবার আবেদন ছাত্রলীগের অপর অংশেরও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

নিজেদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বহিষ্কৃত বাকি ৮ শিক্ষার্থীও এবার অধ্যক্ষ বরাবর আবেদন করেছে। গতকাল অধ্যক্ষের কার্যালয়ের ডেসপাচে বাহক মারফত এসব আবেদন জমা দেয় তারা। এই ৮ শিক্ষার্থী চমেক ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মী এবং সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। এই গ্রুপে চমেক ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদকও রয়েছে। এর মাধ্যমে বহিষ্কৃত ৩১ শিক্ষার্থীর সবাই নিজেদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করল। এর আগে গত ২৮ নভেম্বর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করে ২৩ শিক্ষার্থী। তারা চমেক ছাত্রলীগের অপর অংশের নেতা-কর্মী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। বুধবার (গতকাল) বাকি ৮ জনের আবেদনও হাতে পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার।
গত ২৩ নভেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে কলেজের মোট ৩১ জন ছাত্রকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করে চমেক কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসকও রয়েছে। শাস্তির আওতায় আসা ৩১ জনের মধ্যে ২৩ জন নিজেদের পক্ষের বলে দাবি উপমন্ত্রী নওফেল অনুসারীদের। বাকি ৮ জন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
অবশ্য, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করলেও কোন পক্ষই আবেদনে নিজেদের দোষ স্বীকার করেনি বলে জানা গেছে। তাছাড়া শাস্তিও মওকুফ চায়নি। দুই পক্ষই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার চেয়েছে আবেদনে। বহিষ্কারাদেশের পর সংবাদ সম্মেলন করে একাডেমিক কাউন্সিলের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেছিলেন উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আর সংবাদ সম্মেলন না করলেও গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেছিলেন নাছির অনুসারী চমেক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও।
আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কী হতে পারে জানতে চাইলে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার গতকাল আজাদীকে বলেন, তাদের (বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের) আবেদন আমরা পেয়েছি। তবে এখানে আমার একার সিদ্ধান্ত না। বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায়। একই ভাবে তাদের আবেদনের বিষয়েও পরবর্তী একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ ও ৩০ অক্টোবর চমেক হোস্টেল ও ক্যাম্পাসে সংঘটিত ছাত্রলীগের দুগ্রুপের মারামারির ঘটনায় ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সাথে ওই দিন (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় চমেক কর্তৃপক্ষ।
ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। গত ২২ নভেম্বর কমিটি তাদের প্রতিবেদন হস্তান্তর করে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েই পরদিন (২৩ নভেম্বর) একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক আহ্বান করে চমেক কর্তৃপক্ষ। ২২ নভেম্বর হস্তান্তর করা ওই প্রতিবেদনসহ আগের আরো দুটি তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিভিন্ন মেয়াদে ৩১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বহিষ্কৃত এসব শিক্ষার্থী সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মী। একই সাথে ২৭ নভেম্বর থেকে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্তও নেয়া হয় ওই একাডেমিক কাউন্সিলের সভায়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৭ নভেম্বর থেকে চমেকের শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে। ক্যাম্পাস খোলার একদিন আগেই (২৬ নভেম্বর) ছাত্রীদের হোস্টেল খুলে দেয়া হয়েছে। তবে ছাত্র হোস্টেল বন্ধই থাকছে। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সব ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডের সোহেল হত্যার আসামি রামগড় থেকে গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দরপত্র ছিনতাই