ভোরের খেজুর রস

আর নেই সেই ঐতিহ্য

বোয়ালখালী প্রতিনিধি | রবিবার , ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

বোয়ালখালীর খেজুর রসের স্বাদ ও ঐতিহ্য সেই আদিকাল থেকেই। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে খেজুর রসের সেই স্বাদ, ম-ম গন্ধ ও ঐতিহ্য এখন আর নেই বললেই চলে। ঐতিহ্য হারিয়ে এটি ধীরে ধীরে বোয়ালখালীবাসীর কাছ থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মাথায় এটি এ অঞ্চলের মানুষের কাছে রূপকথার গল্প হিসেবে পরিণত হবে।
দেশের অন্যান্য স্থানের মতো একসময় বোয়ালখালী উপজেলার আনাচে-কানাচে, পথঘাট, মাঠ প্রান্তর সর্বত্রই সারি সারি খেজুরগাছ চোখে পড়ত। একেবারেই অযত্ন ও অবহেলায় জন্মাতো এসব গাছ। শীত এলেই এসব খেজুরগাছকে ঘিরে শুরু হত নানা আয়োজন। চারদিকে শুরু হত উৎসবের আমেজ। একেবারে শীতের শুরুতেই শত শত গাছি পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে তাদের দা তৈরি, দড়ি ও মাটির কলস কেনাসহ গাছ পরিষ্কারের ধুম পড়ে যেত। নজর কেড়ে নিতো গাছিদের কেনা দড়ি কোমরে পেঁচিয়ে ধারালো দা ও মাটির কলস হাতে খেজুরগাছ কাটার উদ্দেশ্যে পথ প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো ও কাক ডাকা ভোরে ঠিল্লা (কলস) ভর্তি কাঁচা রস কাঁদে নিয়ে বাড়ি বাড়ি দৌঁড়ানোর দৃশ্য। এছাড়া বাড়ির বৌ-ঝিদের রস জ্বাল দেয়া, পরে এসব রস দিয়ে মুখরোচক নানা স্বাদের পিঠা পুলি, সিন্নি, পায়েস তৈরির দৃশ্যও ছিলো যেন চোখের আরাম। কিন্তু এক কালের গ্রাম বাংলার মন ভুলানো এসব দৃশ্য এখন বোয়ালখালী উপজেলায় আর খুব একটা দেখা যায় না। এ বিষয়ে কথা হয় পূর্ব গোমদন্ডী গ্রামের মো. হোসেনের সাথে। তিনি বলেন, এ দুর্দিনে দুটি খেজুরগাছ কোনোমতে আগলে রেখেছি। কিন্তু গাছির অভাবে এ গাছ থেকে রস খেতে পারি না। রসের জন্য অপেক্ষায় থাকা শাকপুরা এলাকার আব্দুল খালেক বলেন, নাতি-নাতনিরা বেড়াতে আসবে জেনে রসের খোঁজে বের হয়েছিলাম। কিন্তু গাছি রস দিতে পারবে না বলায় বেকায়দায় পড়ে গেলাম।
পোপাদিয়ার গাছি শুক্কুর বলেন, আগের মতো খেজুরগাছ না থাকায় এখন রসের সেই রমরমা অবস্থা আর নেই। ফলে শীতকাল এলে নিজের বাড়ির ২/৩টি খেজুরগাছ শখের বসে কাটি। তার থেকে সামান্য যা পাই তা দিয়ে নিজেদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়ে উঠে না, অন্যদের দিবো কীভাবে। কথা হয় মৌসুমী খামার নামে এক বাগানে দায়িত্বরত মইন নামে এক কর্মচারীর সাথে। তিনি বলেন, সমস্থ প্রক্রিয়াটি একটু ব্যয়বহুল হলেও আমরা রসের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের বাগানে প্রায় দেড়শ খেজুরগাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছ হতে দিনে ৩-৪ লিটার রস পেয়ে থাকি। প্রতি লিটার রস আমরা ৮০ টাকায় বিক্রি করি। বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকলেও পরিমাণ মতো সরবরাহ দিতে পারি না। কারণ উৎপাদন খরচের দিক থেকে আমাদের পোষায় না।স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খেজুরগাছ আবাদি জমির কোনো ক্ষতি করে না। সড়কপথ, পতিত জমি, ক্ষেতের আইল, পুকুর পাড়, বাড়ির আঙ্গিনায় খেজুরগাছ লাগানো যায়। আবাদ বাড়াতে পারলেই খেজুর রসের ম-ম ঘ্রাণে আবারও মুখরিত হবে গ্রামীণ জনপথ। এতে একদিকে যেমন আর্থিক লাভবান হবে অনেকেই তেমনি রক্ষা পাবে বাঙালির ঐতিহ্যে খেজুর রসের যশ ও খ্যাতি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলায়ন এম আর সিদ্দিকী শুধু ব্যক্তিই নন, একটি প্রতিষ্ঠান
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস পালিত