শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৬নং চকবাজার ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে উপ-নির্বাচন। ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৩২ হাজার ৪১ জন। ৬ হাজার ৯৩২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। শতকরা হারে যা ২১ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ইভিএমের মাধ্যমে ১৫ কেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। নির্বাচনে মোট ২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য নিরাপত্তা ছিল জোরদার। প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। মাঠে ছিলেন ৫জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছিল কড়া নজরদারি। কেন্দ্রের ভেতরে ভোটার শূণ্য ফাঁকা অবস্থা থাকলেও কেন্দ্রের বাইরে ছিল প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের জটলা। দুপুরের দিকে গুল-এজার বেগম সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী আব্দুর রউফের কয়েকজন সমর্থক ভোটারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে গেলে পুলিশ আবদুল মোমিন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে।
এই ব্যাপারে চকবাজার থানার ওসি মো. ফেরদৌস জাহান আজাদীকে জানান, অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে আমরা সর্বক্ষণ সচেষ্ট ছিলাম।
একজনকে আমরা আটক করেছি। যাচাই-বাছাই করছি। সর্বাত্মক একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুল আলম আজাদীকে জানান, চকবাজার ওয়ার্ডের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রার্থীদের কোনো ধরণের অভিযোগ আসেনি।
সরেজমিন চিত্র : সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রায় ভোট কেন্দ্রে দেখা গেছে, ভোটারের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। বেশিরভাগ ভোট কেন্দ্রে ভোটারের চেয়ে প্রার্থীদের এজেন্ট বেশি দেখা গেছে। প্রিসাইডিং অফিসারদের তথ্য অনুযায়ী, ২১ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে ১৫ থেকে ১৮ জন প্রার্থীর এজেন্ট ছিল। এছাড়া দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রে গড়ে ৫ থেকে ৮ শতাংশ ভোট ‘কাস্ট’ হয়েছে বলে প্রিসাইডিং অফিসারের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
ভোটগ্রহণ চলাকালে বিভিন্ন কেন্দ্রে দেখা হয় একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে। এসময় কেউ কোনো অভিযোগ করেন নি। ভোটারদের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ পাওয়া
যায়নি। সবাই বলেছেন, শান্তিপূর্ণভঅবে ভোটগ্রহণ চলছে। তবে ভোটার কম আসা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন প্রার্থীরা।
সকাল সাড়ে ১১ টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম দেখা গেছে। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার এ এইচ এম রেজাউল করিম আজাদীকে বলেন, সকাল থেকে ভোটার কম এসেছে। ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি একটু বাড়ে। এরপর আবারো কমে যায়। তিনি জানান, কেন্দ্রটির মোট ভোটার এক হাজার ৮৮৮। ১১ টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ১৫৩। স্কুলটিতে আরেকটি ভোটকেন্দ্র (৩২৯) আছে। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আল মমিুন বলেন, চারটি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। মোট ভোটার এক হাজার ৩২৮জন। ১১ টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ৮০টি। ২১জন প্রার্থীর মধ্যে ১৭ জনের এজেন্ট আছে।
দুপুর সোয়া ১২ টায় কাতালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে দেখা গেছে, কেন্দ্রের আশেপাশে লোকজনের ভিড়। তবে ভেতরে ভোটার চোখেই পড়েনি। এসময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামকে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে আসতে দেখা গেছে।
প্রিসাইডিং অফিসার মুনতাসীর মোর্শেদ আজাদীকে বলেন, এখানে সব মহিলা ভোটার। দুই হাজার ৮৬৬ ভোটের মধ্যে ২৮১টা কাস্ট হয়েছে। তিনি ১৫ জন প্রার্থীর এজেন্ট আছে বলে জানান।
চটগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, সেখানেও দুইটি ভোটকেন্দ্র। দুটিতেই হাতেগোনা কয়েকজন ভোটার দেখা গেছে। প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করে ৫-৬ জন ভোটার আসতে দেখা গেছে। একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার কামাল হোসেন আজাদীকে বলেন, মোট ভোটার দুই হাজার ২০৭। ১২ টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ২০০। সকাল থেকে কোনা ঝামেলা হয়নি। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ চলছে। অপর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সুকান্ত বড়ুয়া বলেন, মোট ভোটার দুই হাজার ১৭৯। কাস্ট হয়েছে ৩৩৭। প্রত্যেক প্রার্থীর এজেন্ট রয়েছে।
এদিকে বেলা পৌনে ১২টায় কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজের ৩৩০ নম্বর কেন্দ্রে গিয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি আজাদীকে জানান, তার কেন্দ্রে ১৩২২ ভোটের মধ্যে সাড়ে ৩শ’ ভোট কাস্ট হয়েছে। মোট ২১ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৪ জন প্রার্থী এজেন্ট দিয়েছেন বলে তিনি জানান। একই কলেজের ৩৩১ নম্বর ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা অর্পণ কুমার চৌধুরী জানান, তার কেন্দ্রে ১৫০১ ভোটারের মধ্যে বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৭৮ ভোট কাস্ট হয়েছে।
এদিকে কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজের ৩৩৩ নম্বর কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সজীব মহাজন আজাদীকে জানান, তার কেন্দ্রে মোট ৩ হাজার ১৩১ ভোটারের মধ্যে বেলা সোয়া ১২ টা পর্যন্ত ৩৮০ ভোট কাস্ট হয়েছে। কাপাসগোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. ইফতেখারুল ইসলাম আজাদীকে জানান, তার মহিলা ভোট কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৭৫জন। সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ৩৩৪ ভোট। এই কেন্দ্রে ২১ প্রার্থীর মধ্যে ১৬ জন প্রার্থী ভোট দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে বেলা দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে ভোটার শূন্য একই চিত্র।
বসার জায়গা পাননি প্রিসাইডিং অফিসার : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তন। এ মিলনায়তনের বারান্দায় পাশাপাশি দুটি ভোট কেন্দ্র। যা একটি রশি টেনে দিয়ে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। সকাল সোয়া ১১ টায় কেন্দ্র দুটির প্রিসাইডিং অফিসারের কক্ষ খুঁঁজতেই এক আনসার সদস্য বললেন, তাদের বসার জন্য আলাদা কোনো কক্ষ নাই। পরে ওই আনসার সদস্য দেখিয়ে দেন মিলনায়তনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা প্রিসাইডিং অফিসারদের।
একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার দিবাইস চাকমা বলেন, আমাদের নিজ দায়িত্বে বসার জায়গা করে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু জায়গা ছোট হওয়ায় পোলিং এজেন্টদের বসতেও সমস্যা হচ্ছে। সেখানে নিজে বসার ব্যবস্থা করলে বাকিরা মনে কষ্ট পাবেন। ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকে কোনো সমস্যা হয়নি। কেন্দ্রের মোট ভোটার এক হাজার ৮৩৯ জন। ১১টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ২০০ টি। কেন্দ্রটির অপর প্রিসাইডিং অফিসার শওকাত আলী বলেন, মোট ভোটার এক হাজার ৮৯৭ জন। ১১টা পর্যন্ত কাস্ট হয়েছে ২০১ টি। তিনিও কোনো সমস্যা হয়নি বলে জানান।
এর আগে ১১ টার দিকে একই মিলনায়তনের কেন্দ্র দুটিতে হৈ চৈ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, বসার জায়গা না থাকায় একজনের বেশি পোলিং এজেন্ট থাকা যাবে না বলে কয়েকজনকে বের করে দেন সেখানে কতর্ব্যরত পুলিশ সদস্যরা। এসময় ভোটার লিস্ট সহ আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র নিয়ে নেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয় পোলিং এজেন্টদের মধ্যে। অবশ্য পরে কাগজপত্র ফিরিয়ে দেয়া হয়। বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন দুই প্রিসাইডিং অফিসার দিবাইস চাকমা ও শওকাত আলী।
প্রায় ১৫ মিনিট ওই কেন্দ্রে অবস্থান করে দেখা গেছে, জায়গা সংকুচিত হওয়ায় কে ভোটার এবং কে পোলিং এজেন্ট আলাদা করা যাচ্ছিল না। এসময় কেন্দ্রে আসা প্রার্থী মো. সেলিম রহমান (ঠেলাগাড়ি) আজাদীকে বলেন, মাছ বাজারের মতো অবস্থা হয়ে গেছে। এমনিতে করোনাকাল। এসময় এমন গেদারিং ঠিক হচ্ছে না। কোনো অভিযোগ আছে কী না জানতে চাইলে বলেন, কোথাও তেমন সমস্যা হচ্ছে না। তবে ভোটার কম আসছে কেন বুঝতে পারছি না।