ভোজ্যতেলের বাজার ফের বাড়ছে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১০ জুলাই, ২০২১ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘ সময় ধরে উঠানামা করছে ভোজ্যতেলের বাজার। গত দুই সপ্তাহ আগে পাইকারি সয়াবিন ও পাম তেলে মণপ্রতি ৩০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত কমলেও গত সপ্তাহের শুরু থেকে আবারও বাড়তে শুরু করেছে দাম। খাতুনগঞ্জের তেল ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দুই সপ্তাহ আগে বুকিং দর কমেছে, তাই দামও কম ছিল। এখন বুকিং রেট আবারও বেড়ে গেছে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজার বাড়ার প্রভাবে পাইকারিতে দাম পড়ছে। তবে ভোক্তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা বাজারের চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়িয়ে থাকেন। দেখা যায়, আমদানি মূল্যের সাথে বিক্রি মূল্যের বিরাট ব্যবধান।
গতকাল খাতুনগঞ্জের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহের শুরুর দিকে আগে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম তেল বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। সপ্তাহ না ঘুরতেই ৩০০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। অন্যদিকে গত সপ্তাহের শুরুতে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৪ হাজার ২০০ টাকায়, সপ্তাহ না ঘুরতে ৩০০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আবার আইনগতভাবেও স্বীকৃত নয়। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ’। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে আগাম লেনদেন হয়। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটিই বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয়, তার বাজার দর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। বলা যায়, ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম আকাশচুম্বি হয়ে ওঠে। এই সুযোগে কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী এবং আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আলমগীর পারভেজ জানান, ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির একমাত্র কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়া। পাম তেল সাধারণত আমদানি হয় ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া থেকে। সয়াবিন আমদানি হয় ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়া থেকে। আমরা জেনেছি, ওইসব দেশে উৎপাদন কম হয়েছে এবং পণ্যের ঘাটতি রয়েছে। এখানে কৃত্রিম সংকট করার সুযোগ নেই। বুকিং কমে গেলে দাম এমনিতেই কমে যাবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজার সব সময়ই ব্যবসায়ীদের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তারা নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটে। তবে ভোগ্যপণ্যের বাজারে যেভাবে তদারকি হওয়া দরকার সেটিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। প্রশাসন মাঝে মাঝে আকস্মিক অভিযানে বের হয়ে কিছু জরিমানা করে তারপর আবার চুপ হয়ে যায়। ফলে বাজার ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা হয়ে গেল বাংলাদেশী!
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় দগ্ধ ৪ জনকে ঢাকায় প্রেরণ