ভোগ্যপণ্যের বাজারে নজরদারি জোরদার করতে হবে

| শুক্রবার , ২৪ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

মাহে নমজান শুরু হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ে মহা উদ্বেগে দিন অতিবাহিত করছেন নাগরিকরা। তবে একটা আনন্দের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে গতকাল। ‘তেল, চিনি ছাড়া নিম্নমুখী সব ভোগ্যপণ্যের দাম’ শীর্ষক সংবাদে জানা যায়, ‘ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে রমজান উপলক্ষে পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

 

 

বাজারে সরবরাহ বাড়ার জেরে একমাত্র ভোজ্যতেল ও চিনি ছাড়া বাকিসব পণ্যের দাম নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটের জেরে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে সবাই এমন আশঙ্কা করছিল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমানে প্রায় সব পণ্যের দাম কমছে। অস্ট্রেলিয়ান ছোলা আমদানি করে

ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণছেন। গত বুধবার খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৮০ টাকা কেজি, ভারতীয় ছোলা ৮১৮২ টাকা, মসুর ডাল ৮৯ টাকা, খেসারি ডাল ৭২ টাকা, মটর ডাল ৫৯ টাকা, সাদা মটর ৫৬ টাকা,

মুগ ডাল ৮১ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি মণ (৩৭.৩২ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৫০ টাকায়। অন্যদিকে পাম তেল প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬৪০ টাকা, ভালো মানের ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, রসুন ১১৫ টাকা এবং চীনা আদা কেজিপ্রতি ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে চিনি ১১২ টাকা ও লাল সেমাই বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭৭ টাকায়।’

ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করার সংবাদটি খুবই আনন্দের। বর্তমানে যে হারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ডিম, মুরগি, সবজি, মাছসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তবে ব্যবসায়ী শিল্পপতিরা বলেন, ‘পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে।’ তাঁরা জানান, বিশ্ব বাজারে

ভোজ্যতেলসহ আরো কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে। তবে এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারছেন না তাঁরা। বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে দাম কেমন হবে তা নির্ভর করছে চাহিদা ও সরবরাহের উপরে। চাহিদার তুলনায় পণ্য কম হলে দাম বাড়তি হবে।

আজাদীর সংবাদে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইনের বক্তব্যও প্রকাশিত হয়েছে। এতে তিনি বলেন, আমাদের দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। সরকারের কোনো সংস্থা অভিযান চালাতে গেলেও তাদের

বাধার মুখে পড়তে হয়। কোনো পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ১ ডলার বাড়লেও সাথে সাথে তারা দাম বাড়িয়ে দেন। অথচ যেসব পণ্যের দাম তারা বাড়িয়ে দেন সেগুলো কিন্তু আগে আমদানি করা। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের বুকিং রেট কমে গেলে তখন কিন্তু তারা পাইকারি বাজারে দাম কমিয়ে দেয় না।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর বক্তব্যটা গুরুত্ববহ। ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোপুরি ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে বলে তাদের কাছে জিম্মি ভোক্তারা। তাদের কারণেই বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল নয়। এ ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। সরবরাহের চিত্র থেকে

আশা করা যায়, পাইকারি ব্যবসায়ীরা ন্যায্য দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রি করবেন। আর খুচরা বিক্রেতারা অযাচিতভাবে রমজান মাসে পণ্যের দাম বাড়াবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের কথা ভেবে এখনই সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়িয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে হবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে প্রতিটি পাইকারি ও খুচরা দোকানের সামনে ঝুলিয়ে দিয়ে দায় সারলেই হবে না। বাজারে নজরদারি জোরদার করতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা এই সময়টায় যেন মজুদদারি করতে না পারে সেটাও সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত করতে হবে। তাই রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য

সহনীয় ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টদের শক্ত ভূমিকা প্রয়োজন। কোন প্রতিষ্ঠান কোন পণ্য কী পরিমাণে আমদানি করেছে, কোথায় মজুদ করে রেখেছে এবং সেগুলো বাজারে ঠিকমতো ছাড়ছে কি না, এসব বিষয় কঠোরভাবে নজরদারি করা দরকার। বাজারে কড়া নজরদারি করা হলে ব্যবসায়ীরা অতটা বেপরোয়া হতে সাহস পাবেন না। সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলেই আমরা বিশ্বাস করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে