ভেজাল খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি

| শুক্রবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২২ at ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ

 

খাদ্যপণ্যে ভেজাল মেশানোটা রীতিমতো অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। সমপ্রতি এর ব্যাপ্তি যে হারে বাড়ছে তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। দেশি ও আন্তর্জাতিক সব গবেষণায় দেশে খাবারের বিষক্রিয়ার বিষয়টি বারবার উঠে আসছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেলরেস্টুরেন্ট বা নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্যও এখন ভেজালমুক্ত নয়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, নোংরা পরিবেশ আর নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্যের লেভেল লাগিয়ে ভেজাল পণ্য বাজারজাত করা হচ্ছে। বাজার, দোকান, সুপারশপ কোথাও ভেজালমুক্ত খাদ্যপণ্য মিলছে না। মাছেও ফরমালিন, দুধেও ভেজাল। অসময়ে পাকানো এবং দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন ফলমূলেও দেওয়া হচ্ছে কার্বাইডসহ মাত্রাতিরিক্ত নানা বিষাক্ত কেমিক্যাল। ভেজালের বেপরোয়া দাপটের মধ্যে আসল পণ্য খুঁজে পাওয়াই কষ্টকর। এমন জটিল ও সূক্ষ্ম প্রক্রিয়ায় খাদ্যে ভেজাল দেওয়া হয়, যা সাধারণ ক্রেতা বা খুচরা ব্যবসায়ীদের পক্ষে অনুমান বা শনাক্ত করাও খুব কঠিন। খাদ্যে ভেজাল, খাদ্যে বিষক্রিয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। গবেষণা থেকে শুরু করে ভেজালবিরোধী অভিযানে এসব প্রমাণ মিলছে।

বলা জরুরি যে, খাদ্যে ভেজাল বাংলাদেশের এক জাতীয় অভিশাপের নাম। জনস্বাস্থ্যের জন্য এটা বড় ধরনের হুমকিস্বরূপ। শুধু মানবখাদ্যেই যে ভেজাল দেওয়া হয়, তা নয়, ইদানীং পশুখাদ্যেও ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে বলে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তাই এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। এই বিষয়টি নিয়ে এখন আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাদ্যে ভেজালের কারণে বর্তমানে মানবদেহে ক্যান্সারের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, যা আগে দেখা যেতো না। গবেষণায় দেখা গেছে এসব ক্যান্সারের মূল কারণ খাদ্যে ভেজাল মেশানো, প্রিজারভেটিভ ও বিভিন্ন ধরনের রঙের ব্যবহার। একাধিক গবেষণায় খাবারে ভেজালের বিষয়টি উঠে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দূষিত খাবারের কারণে সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৬০ কোটি মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মৃত্যু হচ্ছে ৪ লাখ ২০ হাজার জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছেভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলে প্রতিবছর দূষিত খাবার খেয়ে প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ মারা যায়। আর অসুস্থ হয় ১৫ কোটি মানুষ। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রতি ১০ শিশুর তিনজনই ডায়রিয়ায় ভোগে। রোগটি এ অঞ্চলের শিশুমৃত্যুর জন্য দায়ী সবচেয়ে ভয়াবহ রোগগুলোর একটি। ক্ষতিকর ব্যাকটিরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী, বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান ইত্যাদির মাধ্যমে খাবার দূষিত হয়। সেই অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়ার মতো প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হয়। আর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হিসেবে ক্যান্সার, কিডনি ও যকৃৎ বিকল হয়। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর বিভিন্ন অসুখ হয়। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়ে বলা হয়েছে, অবিলম্বে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

সাংবাদিক আফতাব চৌধুরী এ বিষয়ে লিখেছেন, নিয়মিত বিশুদ্ধ খাবার গ্রহণ এবং অখাদ্যকুখাদ্য বর্জনই আমাদের সুস্থ জীবন যাপনের একমাত্র উপায়। আমরা সবাই বাঁচতে ভালোবাসি। তাই বেঁচে থাকার জন্যই এত ঝুক্কিঝামেলা। মানুষ খাওয়ার জন্য বাঁচে না, বাঁচার জন্য খায়। তা না হলে ডাক্তাররা রোগীদের যখন কিছু কিছু খাদ্যবস্তু সাময়িক খেতে বারণ করেন তখন রোগী ডাক্তারদের উপদেশ লঙ্ঘন করতেন। তাই স্বাস্থ্যের বিধিসম্মত সতর্কীকরণ, পুষ্টিকর খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করে জীবনটাকে সুস্থ, রোগমুক্ত করে রাখতে কে না চায়। কিন্তু আজকাল আমরা যে সমস্ত খাবার খাচ্ছি তার অধিকাংশই ভেজাল। জীবনবিনাশী খাবার খাইয়ে আমাদের মা শিশু আমাদের ভষ্যিৎকে শেষ করে দেয়া হচ্ছে। ফলত সংকটে পড়ছে আমাদের জাতি। বিষয়টি নিয়ে ভাবা একান্ত জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভেজাল খাদ্য আমাদের স্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকির দিকে নিচ্ছে তো নিচ্ছে, আয়ুও কমাচ্ছে। আগেরকার দিনে এসব ভেজালের ছড়াছড়ি এত বেশি ছিল না তাই মানুষ ১০০ বছর বা ততোধিক সময় জীবিত থাকতেন। আর খাদ্য যদি মরণের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তাকে দুর্ভাগ্য বলা ছাড়া গত্যন্তর নেই। মনে রাখতে হবে, খাবারে যারা ভেজাল দেয়, বিষ দেয় তারা গণশত্রু। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে