ভূমিদস্যুদের প্রতিহত করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের

এক-দেড় মাসের মধ্যেই মাস্টার প্ল্যান : জেলা প্রশাসক

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৩১ জুলাই, ২০২২ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

জঙ্গল সলিমপুরে ভূমিদস্যুদের সৃষ্ট সবধরনের প্রতিবন্ধকতা প্রতিহত করতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। গতকাল শনিবার দুপুরে সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে জঙ্গল সলিমপুর নিয়ে মহাপরিকল্পনা ও সেখানে বসবাসরত ভূমিদস্যুদের হাত থেকে সরকারি জায়গা দখলমুক্ত করার বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন।
সভায় বলা হয়, নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ জঙ্গল সলিমপুরকে কেন্দ্র করে একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে বনভূমি ধ্বংসের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে সরকারি খাস জমি দখল করে অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে আসছে। যেখানে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে প্রতিনিয়ত পাহাড়ধসের আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করে আসছে হাজারো পরিবার। এছাড়াও জঙ্গল সলিমপুর এখন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। সন্ত্রাসীরা অভিনব কায়দায় বনভূমি ধ্বংস ও খাস জমি বিক্রয় করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সভায় জঙ্গল সলিমপুর মহাপরিকল্পনায় প্রস্তাবিত বিভিন্ন প্রকল্প সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা হয়। প্রকল্পসমূহের মধ্যে রয়েছে স্পোর্টস ভিলেজ, হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, সাফারি পার্ক, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কাস্টমস ডাম্পিং হাউজ, সবুজ শিল্প এলাকা, চট্টগ্রাম সেনানিবাস ও বিএমএ এবং আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। এসব স্থাপনা বিষয়ে সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়। গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

সভায় বলা হয়, জঙ্গল সলিমপুরে ১৩টি সমবায় সমিতি বা সমাজ রয়েছে। এসব সমিতি পাহাড় কেটে প্লটিং করে গড়ে তুলেছে অবৈধ হাউজিং। সমিতিগুলো হল- আলী নগর ভূমিহীন সমবায় সমিতি, ছিন্নমূল বহুমুখী সমবায় সমিতি, একতা ভূমিহীন সমবায় সমিতি, নুর নবী শাহ হাউজিং সমবায় সমিতি, জঙ্গল সলিমপুর জনকল্যাণ কর্মজীবী সমবায় সমিতি, গোলপাহাড় ভূমিহীন সমবায় সমিতি, আল মদিনা সমবায় সমিতি, মায়ের আঁচল সমবায় সমিতি, ভিত্তিহীন সমবায় সমিতি, চট্টগ্রাম মহানগর ছিন্নমূল সংগ্রামী বস্তিবাসী সমন্বয় পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা হাউজিং সমবায় সমিতি, নবী নগর বহুমুখী সমবায় সমিতি এবং আলী নগর বহুমুখী সমবায় সমিতি। এসব সমাজের হর্তাকর্তারা আন-রেজিস্টার্ড ৩০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে সেখানে খাস জমির দখল বিক্রি করেন।
সভায় বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক, সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন, সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলম, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক, ডিআইজি (প্রিজন্স) এ কে এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান, জেলার এসপি এস এম রাশিদুল হক, র‌্যাব-৭ এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ইউসুফসহ সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে সভা শেষে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গল সলিমপুরে যেন নতুন করে পাহাড় কাটা ও অবৈধ ভূমি দখল না হয় সে বিষয়ে সভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও জঙ্গল সলিমপুরে সরকারের গৃহীত মহাপরিকল্পনার বিষয়ে আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এসময় জেলা প্রশাসক পাহাড়ের পরিবেশ ও প্রতিবেশ অক্ষুণ্ন রেখে চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি সুন্দর মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সভায় জঙ্গল সলিমপুর কেন্দ্রিক অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে জঙ্গল সলিমপুরে র‌্যাবের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন। তিন হাজার একরের মধ্যে কেবল এক হাজার একর জায়গায় বিভিন্ন প্রকল্প স্থাপন করা যাবে বলে জানিয়েছেন স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহযোগী স্থপতি মনজুর কাদের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির হারিকেন মিছিল দেখে মনে হয় তাদের নির্বাচনী প্রতীক বদলে গেল কি না : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা