ভিক্টর হুগো (১৮০২–১৮৮৫)। বিখ্যাত কবি, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক। উনিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী রোমান্টিক লেখক ভিক্টর হুগো। ছিলেন একাধারে সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও মানবাধিকারকর্মী। বিশ্ববিখ্যাত ‘লা মিজারেবল’ ও ‘হাঞ্চব্যাক অব নটরডেম’ তারই সৃষ্টি। হুগোর পুরো নাম ভিক্টর মারি হুগো। তিনি ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা। কবিতা, উপন্যাস, নাটক ইত্যাদি সাহিত্যের অনেক দিকেই ছিল তার বিচরণ। এগুলোর পাশাপাশি তিনি ৪ হাজারেরও বেশি চিত্রকর্ম এঁকেছিলেন। জন্মের দুই বছর পর নেপোলিয়ন ফরাসিদের সম্রাট হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। যেহেতু তার বাবা নেপোলিয়নের শাসনকালে একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, তাই পরিবার নিয়ে প্রায়ই তিনি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যেতে পারতেন। হুগো এই ভ্রমণগুলো থেকে অনেক কিছু শিখেছিলেন। এই শেখাগুলো পরবর্তীতে তার সাহিত্যে ফুটে ওঠেছিল। হুগোর সাহিত্য জীবনের সূচনা কবিতা দিয়ে। ‘ওডেস এট পয়েসেস ডাইভারসেস’ নামে তার প্রথম কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয় ১৮২২। এ গ্রন্থের জন্য তিনি রাজা অষ্টাদশ লুইয়ের পক্ষ থেকে পুরস্কারও পান। ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় প্রথম উপন্যাস ‘দ্য হ্যান্ড আইল্যান্ড’। ১৮২৯ থেকে ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যেই তার পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। লা অরিয়েন্টালিস, লা ফিউস ডি অটোমেন, লা চ্যান্টস ডি ক্রেপসিকিউল, লা ভঙ ইন্টিরিয়রস এবং লা রিয়ন্স এট লেস ওম্ব্রেস। এদের মাঝে ‘লা অরিয়েন্টালিস’ ও ‘লা ভক্স ইন্টেরিয়রস’ তৎকালীন ইউরোপের কাব্যজগতে আলোড়ন তোলে। ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘ওড টু ব্যালাডস’ কাব্যগ্রন্থ। ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে রচনা করেন উপন্যাস ‘দি লাস্ট ডে অব এ কন্ডেমড ম্যান’। ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে লেখেন সাড়া জাগানো উপন্যাস ‘হাঞ্চব্যাক অব নটরডেম’। এরপর লেখেন বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম ক্ল্যাসিক উপন্যাস ‘লা মিজারেবল’ (১৮৬২)। অন্যান্য উপন্যাসের মধ্যে আছে ‘টয়লার্স অব দ্য সি’ ও ‘দ্য ম্যান হু লাফস’। এছাড়া রাই ব্লাস, হারমানি, ক্রমওয়েল ও নেপোলিয়ন লা পেতিতসহ আরও কিছু কাব্যগ্রন্থও আছে। সাহিত্য সমালোচনা নিয়ে লিখেছেন ‘ফিলোসফি অব লিটারেচার’। দ্য হাঞ্চব্যাক অব নটরডেম ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হবার পর দ্রুত ইউরোপের প্রভাব বিস্তারকারী অন্যান্য ভাষায় বইটি অনূদিত হয়। সাহিত্যের পাশাপাশি তিনি রাজনীতিতেও জড়িত ছিলেন। ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লা মিজারেবল’ লেখার সময় ফ্রান্সের রাজা তাকে উচ্চকক্ষের সদস্যপদ দেন। আইনসভার সর্বোচ্চ দলের সঙ্গে তাকে সম্পৃক্ত করা হয়। তিনি সেখানে সবার জন্য বিনা খরচে লেখাপড়া, সার্বজনীন ভোটাধিকার এবং মৃত্যুদণ্ডের বিলুপ্তির ব্যাপারে কাজ করেন। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।