ভাড়া নেই ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ

আমদানিরপ্তানি বাণিজ্য কমে যাওয়ায় পরিবহন সেক্টরে শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে। আয়রোজগার কমে বেহাল দশা দেখা দিয়েছে বিশাল এই সেক্টরে। প্রতিদিন ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে যেখানে অন্তত ২৫ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং প্রাইমমুভার চলাচল করতো তা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন কমে যাওয়ায় অলস পড়ে থাকার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম ভাড়ায় পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ভাড়া কমে যাওয়ায় পুরো সেক্টরটিতে অনেকটা স্থবিরতা নেমে এসেছে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে পণ্য পরিবহনের প্রায় পুরোটাই পরিচালিত হয় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানিকৃত লাখ লাখ টন পণ্য দেশের নানা স্থানে নিয়ে যাওয়া এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লাখ লাখ টন পণ্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন আইসিডি এবং বন্দরের অভ্যন্তরে আনার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় অসংখ্য ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং প্রাইমমুভার। চট্টগ্রাম বন্দরকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার পরিবহন কেনার পেছনে বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে শত শত কোটি টাকা। শুধু চট্টগ্রামেরই নয়, সারাদেশের বহু ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম বন্দরসহ আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে পণ্য পরিবহন খাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য আনা নেয়াসহ দেশে পণ্য পরিবহনে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর দিয়ে দৈনিক অন্তত ২৫ হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং প্রাইমমুভার চলাচল করে।

বিআরটিএর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার দেয়া তথ্যমতে, ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৬এর আগস্ট পর্যন্ত সংস্থাটির চট্টগ্রাম কার্যালয়ে নিবন্ধিত ট্রাকের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৬৩০টি। ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত নিবন্ধিত কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ১৯৫টি। বর্তমানে ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যান মিলে চট্টগ্রামে এই সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। সারাদেশে ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যান মিলে পাঁচ লাখেরও বেশি গাড়ি রয়েছে। যার অধিকাংশই বন্দরের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল বলেও সূত্র জানিয়েছে। কিন্তু দেশের আমদানিরপ্তানি বাণিজ্যে ধস নামার পর থেকে পরিবহন সেক্টরে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজারের মতো ট্রাককাভার্ড ভ্যান পণ্য নিয়ে চলাচল করতো। বর্তমানে এই সংখ্যা ৭ হাজারের নিচে নেমে এসেছে। বন্দরের পণ্য পরিবহন গড়ে অন্তত ২৫ শতাংশ কমে গেছে বলেও জানান পরিবহন ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, সেক্টরটিতে বেহাল দশা বিরাজ করছে। প্রয়োজনীয় পণ্য না থাকায় ভাড়ার পরিমাণ একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর এই ভাড়া দিয়ে টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠেছে। একাধিক পরিবহন ব্যবসায়ী বলেছেন, আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে একটি ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যান ঢাকা যেতে ২৫ হাজার টাকার কাছাকাছি মাশুল আদায় করতো। বর্তমানে যা ১৬ হাজার টাকায় নেমেছে। অপরদিকে বন্দর থেকে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, মাঝিরঘাট কিংবা সিটি গেট এলাকার লোকাল ভাড়া ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো। বর্তমানে তা আড়াই হাজার টাকা থেকে ২৬শ টাকায় নেমে এসেছে।

চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সবুর বলেছেন, পরিবহন সেক্টরে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। ভাড়া নেই। শত শত ট্রাক কাভার্ড ভ্যান অলস বসে আছে। যেগুলো পণ্য নিয়ে ঢাকা বা দূরে যাচ্ছে সেগুলোও খুবই কম ভাড়ায় চলাচল করছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর যে পরিমাণ ভাড়া নেয়া হচ্ছে তাতে খরচ তোলাও অনেক সময় কঠিন হয়ে উঠছে। আগে চট্টগ্রাম থেকে পণ্য নিয়ে ঢাকায় গেলে ফিরতি পথে চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য পণ্য পাওয়া যেতো। এখন ডাউন ট্রিপ পাওয়া যায় না

বললেই চলে। এই অবস্থা ঠিক কতদিন চলবে তা অনিশ্চিত বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, পরিস্থিতি খুবই খারাপ। পণ্য পরিবহন সেক্টরে বিরাজিত বেহাল দশা পুরো খাতটিকে অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। এতে বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগকৃত কোটি কোটি টাকা খেলাপী হওয়ারও আশংকা দেখা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম প্রাইমমুভার ট্রেইলর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে দেড় হাজারের মতো প্রাইমমুভার চলাচল করে। আগে প্রতিদিন বন্দর থেকে গড়ে ৫শ’র মতো প্রাইমমুভার বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করতো। কিন্তু বর্তমানে তা দেড় দুইশ’তে নেমে এসেছে। ভাড়াই পাওয়া যাচ্ছে না। অলস বসে আছে বহু প্রাইমমুভার। জ্বালানি খরচ এবং ব্রিজের মাশুল বাড়ার পরও ভাড়া না বাড়ায় যেগুলো চলে সেগুলোর অবস্থাও শোচনীয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধথার্টি ফার্স্ট নাইট ঘিরে সিএমপির নির্দেশনা
পরবর্তী নিবন্ধচীন-রাশিয়া সম্পর্ক ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ : পুতিন