ভারত ফেরতদের নিয়ে নতুন দুশ্চিন্তা

অর্ধশতাধিকের মধ্যে ৫ জনের করোনা শনাক্ত ।। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯ জন, একজনের মৃত্যু

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৪ মে, ২০২১ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

করোনা সংক্রমণের শঙ্কার মাঝে চট্টগ্রামেও এখন ভারত ফেরতদের নিয়ে দুশ্চিন্তা। বিশেষ করে ভারত ফেরতদের মাঝে করোনায় আক্রান্তদের শরীরে ভাইরাসের ভারতীয় ধরণের (ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট) অস্তিত্ব রয়েছে কী না, তা নিয়েই চিন্তিত স্বাস্থ্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক চট্টগ্রামের বাসিন্দা সমপ্রতি ভারত থেকে ফিরেছেন। যাদের বেশির ভাগই উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারত গিয়েছিলেন। ফেরতদের মাঝে এখন পর্যন্ত ৫ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। অবশ্য, করোনা আক্রান্ত না হলেও আরো চারজন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে ভারত ফেরতদের ৯ জন বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর মধ্যে চমেক হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৭ জন। আর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে একজন এবং সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন রোগী ভর্তি আছেন। রোববার (গতকাল) পর্যন্ত ভারত ফেরত ৪৯ জন হাসপাতালে তালিকাভুক্ত হয়েছেন বলে জানান চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। এদের মাঝে বর্তমানে ৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে, ভারত ফেরত এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে চমেক হাসপাতালে। শনিবার সকালে চন্দন আইচ নামে ওই রোগীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে র‌্যাপিড এন্টিজেন টেস্টে ওই রোগীর শরীরে করোনা সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। ব্রেন টিউমারের চিকিৎসায় চন্দন আইচ ভারত গিয়েছিলেন বলে তার পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, চমেক হাসপাতালে ৪৯ জন তালিকাভুক্ত হলেও ভারত ফেরতের সংখ্যা ৭০ জন বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। যদিও এর মধ্যে ৫/৬ জনের হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
ভারতীয় ধরন নিয়ে দুশ্চিন্তা : ভারত ফেরত ৫ জনের শরীরে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তবে তাদের শরীরে সংক্রমিত ভাইরাসের ধরন নিয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতীয় ধরনের অস্তিত্ব রয়েছে কী না, তা নিশ্চিতে ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা প্রয়োজন। এ উদ্দেশ্যে আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজাদীকে বলেন, নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো রিপোর্ট বা ফলাফল আসেনি। রিপোর্ট পেলে আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবো। ভাইরাসের ভারতীয় ধরন যেহেতু একটু বেশি সংক্রমণশীল সেহেতু এটি নিয়ে একটু চিন্তা তো থাকেই।
প্রসঙ্গত, মানুষের শরীরে শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই নভেল করোনাভাইরাস তার রূপ পরিবর্তন করে চলছে। এর মধ্যে ভারতে এর যে পরিবর্তিত রূপ শনাক্ত হয়েছে, তার আনুষ্ঠানিক নাম বি.১.৬১৭ হলেও এটি ‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট’ নামেই পরিচিতি পেয়েছে। দ্রুত সংক্রমণশীল এই ধরনটিকে বিশ্বজুড়ে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এরই মাঝে বিশ্বের ৫০ দেশে এই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পৌঁছে গেছে। বাংলাদেশেও করোনা আক্রান্তদের মাঝে ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে এই ধরন শনাক্ত হয়নি। তবে ভারত ফেরত ৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হওয়ায় এ নিয়ে শঙ্কামুক্ত হওয়ার সুযোগও থাকছে না। কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকছেই।
চিকিৎসকদের মতে, দেশে আগে থেকেই অবস্থান করা ভ্যারিয়েন্ট (যা একরকম লোকাল ভ্যারিয়েন্ট বলা চলে) তা যদি ব্যাপক হারে ছড়ানোর সুযোগ পেয়ে যায়, তবে ভারতের মতো বা তার চেয়েও বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার ঝুঁকি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে তা পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলবে।
তবে ভাইরাসের কোন ধরনের ভ্যারিয়েন্ট, সেটা নিয়ে চিন্তা করে মানসিক চাপ না নেয়ার পরামর্শ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার। ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার মতে, করোনা ভাইরাসের সব ধরনের ভ্যারিয়েন্টেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা একই রকম। যথাযথভাবে মাস্ক পরিধানের পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চললেই এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলছেন, আমাদের এখানে এটা প্রমাণিত যে, ভ্যারিয়েন্ট যা-ই হোক, ঠেকানোর জন্য উপযুক্ত কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া হলে কিংবা ভাইরাস যদি ব্যাপক হারে বিস্তারের সুযোগ পায়, তবে সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। কিন্তু পর্যটন এলাকা, জনসমাগম, গণপরিবহন ও মার্কেট বন্ধ রাখতে পারলে সংক্রমণ কমে আসে। এটা অনেকটা প্রমাণিত।
ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, আমরা যা দেখেছি, আগের ভ্যারিয়েন্টগুলো কিন্তু আমাদের এখানে আসতে আসতে দুর্বল হয়ে গেছে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রেও সেটা হতে পারে। আবার নাও হতে পারে। তবে ঈদ পরবর্তী সময়ে সংক্রমণ নিয়ে আমরা যে ভয়টা করেছিলাম, সেভাবে ভয়ের মতো পরিস্থিতি কিন্তু হয়নি। এখনও শঙ্কা নেই, তা বলার সময় আসেনি।
তবে যা-ই হোক, এ ভাইরাসের কবল থেকে মুক্ত থাকতে হলে সঠিক নিয়মে মাস্ক পরার পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিধি যথাযথভাবে মেনে চলার আহ্বান জানান সিভিল সার্জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাসপোর্ট থেকে ইসরায়েল প্রসঙ্গ বাদ দেওয়ায় ফখরুলের প্রশ্ন
পরবর্তী নিবন্ধনিম্নচাপ থেকে আজ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে ইয়াস