ভাইরাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ জরুরি

| বুধবার , ৭ জুলাই, ২০২১ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। বাড়তে থাকে সংক্রমণ। মে মাসে ৪৫ শতাংশ ও জুন মাসে ৭৮ শতাংশ নমুনায় মিলেছে এই ভ্যারিয়েন্ট। বাংলাদেশে বর্তমান কোভিড-১৯ সংক্রমণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সুস্পষ্ট প্রাধান্য দেখছে আইইডিসিআর। গত রোববার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এ তথ্য জানায়। দেশে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিকোয়েন্স করা সব নমুনায় আলফা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। মার্চ মাসের সিকোয়েন্স করা নমুনার ৮২ শতাংশে বিটা ভ্যারিয়েন্ট ও ১৭ শতাংশ নমুনায় আলফা ভ্যারিয়েন্ট মেলে। এপ্রিল মাসেও কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের মধ্যে বিটা ভ্যারিয়েন্টের প্রাধান্য ছিল।
গত ৪ জুলাই দৈনিক আজাদীতে ‘বেসরকারি হাসপাতালে হিমশিম’ এবং ‘চট্টগ্রামে ৬০ হাজার ছাড়াল সংক্রমণ’ শীর্ষক দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘করোনা মহামারী কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। চট্টগ্রামেও একই অবস্থা। ঢাকার পরে অন্য জেলার তুলনায় এখানে আক্রান্ত ও মৃত্যু বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম জেলায় ১ হাজার ৮৯ টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে নতুন ৩৬৯ জনের শরীরে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। সংক্রমণ হার ৩৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ২২৩ ও উপজেলার ১৪৬ জন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নতুন ৩৬৯ জনসহ চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬০ হাজার ৩৬৮ জন। এর মধ্যে নগরীর বাসিন্দা রয়েছে ৪৬ হাজার ৯৬৭ জন ও উপজেলার ১৩ হাজার ৪০১ জন।’ অন্য সংবাদে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে আগে মহানগর এলাকায় সংক্রমণ বেশি দেখা গেলেও এখন গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। পাল্লা দিয়ে রোগীর চাপও বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। বিশেষ করে গত বেশ কিছু দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর মাঝে মহানগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। এতে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা সংখ্যা বাড়াতে হয়েছে হাসপাতালগুলোকে। তবে শয্যা বাড়িয়েও রোগী সামালে হিমশিম অবস্থায় বেসরকারি এসব হাসপাতাল। নগরীর বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।’
আমরা প্রত্যক্ষ করছি, দেশে করোনা প্রতিরোধে সরকারিভাবে নানান প্রশংসনীয় উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। দেশের জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাত নতুন একটি মহামারি এবং রোগ প্রতিরোধে নিয়ে কাজ করছে যা সরকার গুরুত্ব সহকারে সহায়তা করছে। করোনা মোকাবিলায় দেশব্যাপী হাজার হাজার চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, কয়েক লাখ স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যারা চিকিৎসকদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। তৈরি করা হয়েছে করোনা জাতীয় কর্মকৌশল, জাতীয় চিকিৎসা প্রদানের নীতিমালা এবং করোনা সতর্কতায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণা।সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্থাপন করা হচ্ছে করোনা ইউনিট। এতো কিছুর পরও আমাদের করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে আরো সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের অবস্থা থেকে আমাদের দ্রুত শিক্ষা নিতে হবে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের যোগান দিতে হবে। হাসপাতালে করোনার বেড বাড়াতে হবে, আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটর ইত্যাদির সংখ্যা বাড়াতে হবে। করোনা প্রতিরোধে তথ্য প্রদান একটি বড় অন্তরায়। এখনও আমরা কোন হাসপাতালে কতগুলো আইসিইউ বেড আছে, কতগুলো ফাঁকা আছে তার কোনও ডাটাবেজ তৈরি করতে পারিনি। যদিও আজাদী নিজস্ব উদ্যোগে চট্টগ্রামে এ তথ্য সরবরাহ করছে প্রতিদিন। এ তথ্য পাওয়া না গেলে করোনা চিকিৎসায় রোগীদের ভোগান্তি বাড়বে। রোগীরা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে আইসিইউ বেডের জন্য ছুটবেন। ডিজিটাল ডাটাবেজের মাধ্যমে এগুলো সমাধান করার উদ্যোগ নিতে হবে। রোগী ব্যবস্থাপনায় আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রন্টলাইনারদের সব সময় প্রস্তুত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় জনবল ও চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে। কোভিড-১৯ চিকিৎসার সাথে যারা কাজ করছেন তাদের উৎসাহিত করতে হবে। টেলিমেডিসিন সেবাকে হাসপাতাল সেবার সাথে সংযুক্ত করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে ধরনের ভ্যারিয়েন্টই হোক না কেন, তা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণই একমাত্র উপায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে