নগর আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশকে (সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী) বাদ দিয়ে আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে এর প্রতিবাদে গতকাল এই অংশের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে এমইএস স্কুল মাঠে সকাল ১১টায় সম্মেলন চলার সময় অপর অংশের নেতাকর্মীরা জেলা পরিষদ চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য, মহানগর আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক জহরলাল হাজারীর সভাপতিত্বে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মহনগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় আন্দরকিল্লা নজির আহমদ চৌধুরী সড়কে মুসলিম এডুকেশন সোসাইটি (এমইএস) উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হয়। একই সময়ে স্কুলও চালু ছিল। বেলা ১১টা ১৫ মিনিটের স্কুল প্রাঙ্গণে সম্মেলন স্থলে আসেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। এর কিছুক্ষণ পর বেলা সাড়ে ১১টায় সম্মেলন স্থলে আসেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। যখন জাতীয় পতাকা–দলীয় পতাকা তুলে এবং বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয় তখন স্কুলের তৃতীয় তলায় বেশ কিছু শিক্ষার্থী রুম থেকে বের হয়ে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখছিলেন। বেলা পৌনে ২টার দিকে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হলে মধ্যাহ্ন বিরতির পর বিকেলে আবার সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। তাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
স্কুল চলার সময়ে স্কুলের পাঠদানের ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্কুল মাঠে সম্মেলন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক জহরলাল হাজারী বলেন, স্কুল চলাকলীন মাঠে আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজন করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। উনারা সরকারকে বির্তকিত করছেন। দলের আমরা বড় একটি অংশকে বাদ দিয়ে সম্মেলন করা হয়েছে। এভাবে দলকে বিভাজন করা হচ্ছে। সামনে নির্বাচন। বিএনপি–জামাত জ্বালাও পোড়াও শুরু করেছে। এই মুহূর্তে সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে দলকে বিভক্ত করছে।
গত ১৮ তারিখ বাগমনিরাম ওয়ার্ডেও সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে সম্মেলন করা হয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, কোনো ধরনের প্রস্তুতি সভা আহ্বান না করে একজন নেতা তার বাসভবনের সামনে এমইএস স্কুল মাঠে, স্কুল চলাকালীন সম্মেলন করার উদ্যোগ নেন। স্কুল চলাকালীন মাঠে সম্মেলন অনুষ্ঠান না করার জন্য বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও একজন নেতা সম্মেলনকে নিজ বাসভবনের সামনে করতে বদ্ধপরিকর থাকেন। স্কুলের পাঠ কার্যক্রমকে ব্যাহত করা সরকারের শিক্ষা কার্যক্রমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর সমান। এর প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তারা বলেন, কোনো বিবেকবান নাগরিক স্কুল চলাকালীন স্কুলের পাঠদানের ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে পারে না। তারা বলেন, সম্মেলনে এই আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কমিটির সদস্য ও কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, কোতোয়ালী থানার সাংগঠনিক সমন্বয়ক ও সিডিএ চেয়ারম্যান নগর আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষকে আমন্ত্রণ পর্যন্ত জানানো হয় নি। এমনকি মহানগর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ সিনিয়র নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
একতরফাভাবে পকেট কমিটি করার ও নিজ বাসভবনের সামনে শক্তি প্রদর্শন করার এই সাজানো সম্মেলন বাতিল করে পুনরায় কাউন্সিল আহবানের দাবি জানান বক্তারা। সম্মেলনে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাক্ষাতের সময় দেওয়া নির্দেশনাকেও উপেক্ষা করা হয়েছে। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, মহিউদ্দিন শাহ্, তারেক হায়দার বাবু, আনোয়ার ইসলাম শাহ্, লিটন দাশ, শওকত আজীম খান, আমিনুল ইসলাম আজাদ, আলী রেজা, মিনহাজ উদ্দিন অভি, সরফরাজ চৌধুরী হিরু, মো. আলমগীর, রফিক উদ্দিন শাহ্ প্রমুখ।