ব্রিজ আছে সড়ক নেই

ফটিকছড়িতে একটি ব্রিজের অভাবে হাজার মানুষ দুর্ভোগে

মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন, ফটিকছড়ি | শুক্রবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

ব্রিজ থাকলেও নেই সংযোগ সড়ক। সেতুর এক পাশের মাটি ভরাট না থাকায় কোনো কাজেই আসছে না ফটিকছড়ি খালের একটি ব্রিজ। হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের বড়বিল নয়াহাট রাস্তায় ফটিকছড়ি খালের উপর এ ব্রিজের অভাবে ত্রিপুরাসহ তিনচার গ্রামের মানুষ বছরের পর বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফটিকছড়ি খালের হারুয়ালছড়ি ১নং ওয়ার্ডের ওজানপাড়া, ত্রিপুরা পাড়ার অংশে ৩৬ ফুটের ব্রিজটা খালের এক অংশে ২০১৫১৬ অর্থ বছরে নির্মাণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। বিশাল এ খালের উপর ছোট্ট এ ব্রিজটি যেন একপাশেই দাঁড়িয়ে আছে। যার কারণে ব্রিজটি নির্মাণের পর বছর না যেতেই পানির তীব্র স্রোতে ব্রিজের এক পাশ ভেঙে রাস্তা তলিয়ে যায়। এ যেন খালের এক অংশে ব্রিজ বাকিটা ফাঁকা। বর্তমানে ব্রিজের একপাশে কোনো রাস্তা নেই। রাস্তা থেকে ব্রিজের দূরত্ব প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফুট। শুষ্ক মৌসুমে সাধারণ মানুষ ব্রিজের নিচ দিয়ে খালের পানি পার হয়ে পায়ে যাতায়াত করে।

স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে এ খালের পানি বেড়ে যায়। এত বেশি স্রোত থাকে নৌকা দিয়েও পারাপারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ব্রিজটা নির্মাণের পরের বছরই ব্রিজের উভয় পাশে ভেঙে যায়। কয়েকবার মাটি ভরাট করা হলেও পানির তীব্র স্রোতে ছোট্ট এ ব্রিজের রাস্তার এক পাশ ভেঙে গিয়ে আবারো চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। শুষ্ক মৌসুমে খালের পানি কমে গেলে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষায় দুইপাশের মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উজানপাড়া, টিলাপাড়া, ডেবিলিখুল, পিনপিনিয়া ও ২টি চা বাগানের শ্রমিক সহ ৪৫ হাজার মানুষ চলাচল করে এ ব্রিজটি দিয়ে। বর্ষার সময় তাদের সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় শিক্ষার্থীদের স্কুল/কলেজে যাওয়া। কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় না। ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত যাতায়াত বন্ধের কারণে ওই এলাকার মানুষ কাজ করতে পারে না। গ্রামগুলোর মানুষ শ্রমিক হওয়ায় কাজ করতে না পারলে বন্ধ হয়ে যায় তাদের দুইবেলা খাওয়াও। অনেক সময় লবণ দিয়ে ভাত কিংবা চা পাতা খেয়েও তারা দিনাতিপাত করে। বর্তমানে খালের উপর ১০০ ফুট ব্রিজের প্রয়োজন কিন্তু হয়েছে ৩৬ ফুট। পানির স্রোতে এ ব্রিজটি কোনো কাজেই আসছে না। বছরের পর বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে সংযোগ সড়ক বিহীন ব্রিজটি। ভরা বর্ষা মৌসুম নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে এ এলাকার মানুষের।

উপজেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ অফিস সূত্র জানায়, ২০১৫/১৬ অর্থ বছরে বড়বিল নয়াহাট রাস্তায় ফটিকছড়ি খালের উপর (আরসিসি বঙ কালভার্ট) ব্রিজটি প্রায় ২৯লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। তাদের দাবিতখন খাল ছিল ২৮ফুটের এবং নির্মাণ করা হয় ৩৬ফুটের এ ব্রিজটি। পরে বিভিন্ন দুর্যোগে খালটি বড় হয়ে ব্রিজটি একপাশে চলে যায়। ব্রিজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল এফ আর কালেকশন। বর্তমানে এ ব্রিজ মানুষের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু ব্রিজ ব্যবহার করতে পারছে না গ্রামবাসী সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলাকেই দায়ী করছেন তারা। এলাকার মন্দির কমিটির সভাপতি সচিন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, আমাদের এখানে সবাই শ্রমিক। দিনে এনে দিনে খায়। কাজ করতে না পারলে না খেয়ে পড়ে থাকি। অনেক মানুষ খাল পার হতে গিয়ে পানিতেও ভেসে চলে গেছে। অনেক সময় গর্ভবতী মহিলার ব্যথা উঠলে ডাক্তারের কাছে নিতে পারি না। খালের দক্ষিণকূলে অনেক রোগী মারাও গেছে। পোলাপান লেখাপড়া করতে পারে না।

মানিক ত্রিপুরা বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষ থেকে বিগত ২০০ বছরের বেশি এ এলাকার পাহাড়ের ভিতর বসবাস করে আসছি। এ এলাকা অবহেলিত। আমাদের পাশে কেউ নাই। আমাদের নাই রাস্তা, নাই কোনো ব্রিজ। আমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে একটা ব্রিজের অভাবে ডাক্তারের কাছে নিতে পারি না, কাজে যেতে পারি না, ছেলেমেয়েরা স্কুলেও যেতে পারে না।

স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য মো.ইছমাইল বলেন, আমি দুই বারের মেম্বার হয়েও এ খালের ব্রিজটা বড় আকারে না হওয়ায় লজ্জিত। এখানে একটা ১০০ ফুট ব্রিজের প্রয়োজন কিন্তু হয়েছে ৩৬ ফুটের একটি ব্রিজ। এ খালে অতিরিক্ত স্রোত। ব্রিজটা নির্মাণের পর পানির প্রথম ঢলেই ব্রিজের রাস্তার সাইট ভেঙে ব্রিজটা উপরে উঠে গেছে।

হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ব্যক্তিগত অর্থ থেকে সংযোগ সড়কটি পুনরায় নির্মাণ করে দিয়েছিলাম। পাহাড়ি ঢলে পানির স্রোতে তা ভেঙ্গে নিয়ে যায়। দুই বার পুনঃনির্মাণ হয়েছে। বরাদ্দ পেলে স্থায়ীভাবে সংযোগ সড়কটি আবার নির্মাণ করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, ব্রিজের ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলেছি। আশা করি কম সময়ের মধ্যে এর একটি সমাধান করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচাঁদের গাড়ির ধাক্কায় বাইক ছিটকে টমটমের ওপর, ছাত্রলীগ নেতা নিহত
পরবর্তী নিবন্ধমৌসুমের প্রথম বৃষ্টি, কিছুটা স্বস্তি নগরবাসীর