ব্যয় সংকোচন নীতি ও সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ

| রবিবার , ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:২২ পূর্বাহ্ণ

অর্থনীতির চাকা চাঙ্গা করতে ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনে আরও কঠোর হয়েছে সরকার। অর্থনীতিকে চাপমুক্ত করতেই এই ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বিশ্ব মন্দা ও ডলারের ঊর্ধ্বমুখী মূল্যের ঢেউয়ের প্রভাব মোকাবিলায় বাজেটে থোক বরাদ্দসহ ৯ খাতের ব্যয়ের ক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছে অর্থ বিভাগ। বরাদ্দের বেশি বা বিধিনিষেধ এড়িয়ে ব্যয় বন্ধ করতে এসব খাতে মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। কঠোর নজরদারির আওতায় আনা খাতগুলো হচ্ছে-বৈদেশিক ঋণ ও ঋণের সুদ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাঁদা পরিশোধ খাত। এছাড়া বাজেটে থোক বরাদ্দ, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা, পিআরএল ও শ্রান্তি বিনোদনসংক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর পেছনে ব্যয়। পাশাপাশি সরকারের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও টেলিফোন খাতের বিল পরিশোধ, ভূমি উন্নয়ন কর, জ্বালানি খাতে ব্যয় খাতও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এছাড়া, আগামী জুন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যয়ের পরিকল্পনা চাওয়া হয়েছে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার কাছে। পুরো প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বিভাগ ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে। এর আগে কৃচ্ছ্রসাধন কর্মসূচির আওতায় বিদেশ ভ্রমণসহ ছয়টি খাতের ব্যয় স্থগিত এবং পাঁচ খাতের ব্যয় হ্রাস করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে বড় অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় হবে।

সরকারি এই সিদ্ধান্তের ফলে দ্রব্যমূল্য কমবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, খাদ্যপণ্যের দাম কমলে দারিদ্র্য হ্রাস পাবে। আমদানি ব্যয় কমানো গেলে বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ। অর্থাৎ ডলার সংকট দূর হবে। শুধু তাই নয় গুরুত্বপূর্ণ খাতে বেশি বরাদ্দ ও ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হবে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ স্থগিত থাকলে অপচয় রোধ করে বিদেশি ঋণের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এ কারণে সরকারের এই ব্যয় সংকোচন নীতির প্রতি সমর্থন দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। ব্যয় সংকোচন নীতি ও সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরাও মনে করছেন।

স্বীকার না করে উপায় নেই যে, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও বেশ চাপের মধ্যে পড়েছে। একদিকে ডলারের দাম বৃদ্ধি অন্যদিকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়া এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অর্থপাচার। ইউরোপ ও আমেরিকার মতো দেশগুলোতে মন্দা শুরু হওয়ায় চাপের মুখে পড়েছে রপ্তানি আয়ও। এ অবস্থায় সরকারি ব্যয় কমানোর পথে হাঁটছে সরকার। অর্থাৎ ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ব্যয় কমাতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এবার পরিচালন বাজেট বরাদ্দ কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই ধারবাহিকতায় পরিচালন বাজেট বরাদ্দ থেকে ভূমি অধিগ্রহণ, ভবন ও স্থাপনার নতুন ক্রয়াদেশ এবং যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা পুরোপুরি স্থগিত থাকবে। সমপ্রতি এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করেছে অর্থ বিভাগ।

প্রকাশিত তথ্যে আরো জানা যায়, ব্যয়ে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে চলতি বাজেট থেকে কমপক্ষে ২০ হাজার ৯৩ কোটি টাকা ব্যয় কমানোর চিন্তা রয়েছে অর্থ বিভাগের। এ ব্যয় হ্রাসের পর সংশোধিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি থেকে কমে ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭১ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। আরো জানা যায়, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও টেলিফোন খাতের ব্যয়ের ওপর নজর রাখছে অর্থ বিভাগ। এসব খাতে কত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং বিপরীতে কত টাকা ব্যয় হয়, এর বিস্তারিত প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। একইভাবে ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ বরাদ্দকৃত অথের্র মধ্যে অর্থব্যয়ের হিসাব দিতে বলা হয়েছে।

সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতিতে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরাও। তাঁরা বলেন, এর ফলে অর্থের অপচয় কমবে। অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরে আসবে। সরকারি নির্দেশনা মেনে দেশের বেসরকারি খাতও বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে আসছে। তাঁরা জানান, সরকারি এই উদ্যোগ ভালো এবং এটি ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখতে হবে।

নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে বেশকিছু খাতে আরও ব্যয় সংকোচন হবে, যা এই মুহূর্তে খুব জরুরি। সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমদানিসহ অন্যান্য ব্যয় কমাবে এবং অর্থনীতির ওপর চাপ অনেকাংশে দূর হবে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই ব্যয় সংকোচন বা কৃচ্ছ্রতা সাধনে সর্বোচ্চ জোর দেওয়া হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে